সেইদিন আমাদের ক্যাম্পাসের পক্ষ থেকে ফেয়ারওয়েল উপলক্ষ্যে একটি প্রতিষ্ঠিত ব্যান্ড আসছিল । মোটামুটি সবাই এক্সসাইটেড । তবে আমি নষ্টালজিক । কারণটা সেই ব্যান্ডের গান বা তাদের সাথে কাটানো পুরানো সময়গুলোর জন্য নয় বরং অন্য এক দল ব্যান্ড ম্যামবার কর্তৃক একটি মেয়েকে হ্যারেস সংক্রান্ত পুরানো একটা ঘটনাকে স্মরণ করে ।
.
আমি একসময় ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের সাথে ভালোই জড়িত ছিলাম । সেই সময়গুলোতে বাংলাদেশের মোটামুটি সব প্রতিষ্ঠিত ব্যান্ডগুলোকে খুব কাছ থেকে দেখা হয়েছে । তাদের গাঁজার ধোঁয়া খুব কাছ থেকে শোঁকাও হয়েছে । এই রকমেরই এক প্রতিষ্ঠিত ব্যান্ডের "সার্বিক সাহায্যর্থে" তাদের রুমের দায়িত্বে ছিলাম ।
.
হঠাৎই ব্যান্ড ম্যামবারদের রুমে এক মেয়ের আগমন । চোখ ধাঁধানো সুন্দর মুখশ্রী অধিকারিনী । কোন এক ব্যান্ড ম্যামবারের রেফারেন্সে ভলেন্টিয়ারদের টপকে সে ঢুকতে পেরেছে । গানের প্রথমার্থ তখন সবে শেষ হয়েছে । ব্যান্ড ম্যামবারগুলো টলমল পায়ে রুমে ঢুকলো । এরপর যা করলো তা শালীন ভাষায় বলা বা লিখা সম্ভবপর না । তাদের হাতগুলো একসাথে মেয়েটার শরীর জুড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিল । মেয়েটা নিজেকে বাঁচাতে হাঁটু মুড়ে মাটিতে বসে পড়লো । ভেজানো দরজার বাহিরে দাড়িয়ে পুরো দৃশ্যটি অবলোকন করে কিছুক্ষণের জন্য সম্পূর্ণ অবশ হয়ে গেলো ! আমি কি এই অমানুষদের ফ্যান ছিলাম !
.
আমি ব্যাপারটা আমার হেডকে জানাতে সে এক বিরক্তির হাসি হাসলো । আর যা সে জানালো তাও রীতিমত শকিং
.
মেয়েটা স্থানীয় এক প্রাইভেট ইউনির্ভাসিটির ছাত্রী । আর মেয়েটা পার্টটাইম প্রস্টিটিউড । যাকে ব্যান্ড ম্যামবাররা বড় অংকের টাকার বিনিময়ে এক রাতের জন্য ঠিক করেছে ।
.
কাহিনী তখনো বাকি । কনসার্টের দ্বিতীয়ার্থ শুরু হলে বিস্মিত আমি আবার রুমটিতে গেলাম । উঁকি দিয়ে দেখি মেয়েটা কাঁদছে । আমাকে দেখে চোখ লুকিয়ে ওয়াসরুম কোথায় জানতে চাইলো । বললাম । ওয়াসরুমের ঢুকার পাক্কা ১টা ঘন্টা পর সে বেরুলো । চেহারায় সেই আগের রূপ ও কনফিডেন্স ফিরে এসেছে । এসেই সিগারেট ধরাবার জন্য লাইটারের জন্য ডাকাডাকি শুরু করলো ।
.
এক প্রস্টিটিউড হতে এই রকম পরস্পর বিরোধী রুপ আশা করিনি । কনসার্ট হেডকে বিষয়টি আবার বললাম । উনি সহজ একটা সমাধান দিলেন । মেয়েটি পেশায় "প্রস্টিটিউড" হলেও জাতে "মেয়ে" তো তাই সবার সামনে এইভাবে অপদস্থ হওয়াটা সহ্য করতে পারিনি ।
.
চট্টগ্রাম ষ্টেডিয়াম জিমেশিয়ামে "চলো বাংলাদেশ" এর ব্যানারে কানসার্টটি অবশেষে শেষ হয়েছে । ভক্তরা কান ফাটিয়ে তাদের নাম ধরে ডাক দিচ্ছে । ভিতরে ঢুকবার জন্য ডাইহার্ট ফ্যানরা পারছেন না ভলেন্টিয়ারদের মানব দেয়াল টপকে সেই ব্যান্ড ম্যামবারদের পায়ে ধুলি নিয়ে আসতে । তারপরও কেউ কেউ বিভিন্ন জনের রেফারেন্সে ভেতরে ঢুকে পড়েছে । সেলফিতে সেলফিতে রুম সয়লাব । প্রিয় দেবতাদের ছবিগুলো হয়তো আজই তাদের প্রোফাইল পিকের শোভা বর্ধন করবে । অ্যাসক্লেপিয়স রুপী এই সংগীত দেবতাদের বাহ্যিক রুপ দেখে সবই পাগল অথচ ভেতরটা যে কতটা কালো , কতটা অন্ধকার , কতটা বিভৎস কেউ জানে না । অথচ এরাই নৈতিকতার গান গায় ! ভালোবাসার গান গায় !
.
.
রাত অনেক হয়েছে । মেয়েটাকে ব্যান্ড ম্যামবারদের জন্য নির্ধারিত গাড়িতে আগেই তুলে দেওয়া হয়েছে । এখন খালি তার অপেক্ষার পালা । মেয়েটা গোল গলা একটা টি শার্ট পরে আছে । বুকে সবুজ কালিতে আঁকা ব্যান্ডটির নাম । আমার প্রিয় ব্যান্ড ......
.
ছিল ...
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মে, ২০১৫ রাত ৮:৩০