somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

DEXTER - সেলুলয়েড দুনিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় সিরিয়াল কিলার

২৩ শে জুন, ২০১৮ রাত ৮:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ভূমিকা - বহুদিন আগে এক কিশোর খুন করার পর পুলিশকে স্বীকারক্তি দেয় -'আমি ডেক্সটারকে নিজের মধ্যে অনুভব করি' । এখানে ডেক্সটার টিভি সিরিজের সিরিয়াল কিলার ডেক্সটার মরগানের কথা বলা হচ্ছে । এটা এমন এক টিভি সিরিজ যা দুর্বল মনের কোন মানুষের জন্য নয় । এমনকি টিভি সিরিজটি টিভিতে প্রচারিত না করার জন্য আন্দোলন পর্যন্ত হয়েছিল । তবে কোন কিছুই এই টিভি সিরিজটিকে দমিয়ে রাখতে পারিনি । যার মুল কারণ সিরিয়াল কিলারের প্রতি সকলের ভীতি থাকলেও তাদের জীবন, কর্মকাণ্ড ও মনস্তত্ত্ব নিয়ে মানুষের আগ্রহ অসীম । ফলে যেখানে বাস্তব জগতে জ্যাক দ্যা রিপারের মত সিরিয়াল কিলারদের প্রতি মানুসের এত আগ্রহ সেখানে ডেক্সটারের মত সেললুয়েড জগতের সিরিয়াল কিলারদের প্রতি আগ্রহ থাকাটা বলাই বাহুল্য । ফলে এই টিভি সিরিজটি সাফল্যের সাথে ৮টা সিজন শেষ করেছে ।
.



ডিক্সটার টিভি সিরিজ পরিচিতি - আমেরিকান স্যাটেলাইট নেটওয়ার্ক ‘শো-টাইম’ মাধ্যমে ‘ডেক্সটার’ টিভি সিরিজটির পথ চলা । আমেরিকান বিখ্যাত ক্রাইম নভেলিস্ট জেফ লিন্ডসের ২০০৪ সালে প্রকাশিত ‘ডার্কলি ড্রিমিং ডেক্সটার’ উপন্যাস অবলম্বনে পরিমার্জিত রূপে সিরিজটির প্রথম সিজনটি প্রচারিত হয় । পরবর্তী সাতটা সিজন ডেক্সটার চরিত্রের পূর্ণতা মাত্র । যা চিত্রনাট্যকার আমেরিকান টিভি রাইটার জেমস ম্যানোস জুনিয়রের অসাধারণ প্রতিভার ফসল । ডেক্সটার একটা ক্রাইম থ্রিলার জনরার টিভি সিরিজ । ডেক্সটার মায়ামী পুলিশ বাহিনীতে কর্মরত একজন ফরেনসিক ও ব্লাড স্প্যাটার । এই সমাজে যারা ক্রিমিনাল হওয়া সত্ত্বেও আইনের হাত থেকে বেচে যায় বা আইনের আওতায় আসে না সেসব ক্রিমিনালদের নিখূঁত প্ল্যানিং-এর সাথে মেরে, শৈল্পিকতার (!) সাথে কেটে টুকরো টুকরো করে দরিয়াতে বিসর্জনের এক অতি সাধারণ কাহিনী । তবে অসাধারণ রিয়েলিস্টিক প্লটের কারণে অতি সাধারণ হয়ে অসাধারণে পরিণত হওয়া টিভি সিরিজ এটি । প্রতিটা পর্ব ছোট ছোট প্লট ধরে এগিয়ে এক বড় প্লটে পরিণত হওয়ার কাহিনী । নিখূঁত বিশ্লেষণ , ছোট থেকে ছোট বিষয়ে বিস্তারিত আলোকপাতের মাধ্যমে ডেক্সটার চরিত্রের প্রতি সহানুভূতি ও তার কাজে দর্শকদের সমর্থন নিয়ে আনার এক অসাধারণ কাজ জেমস ম্যানোস জুনিয়র সাফল্যের সাথে করেছেন । সর্বপরি অতি সুদর্শন পুরুষ মাইকেল সি হল -এর অসাধারণ অভিনয় সিরিজটির প্রতি মনযোগ ধরে রাখার জন্য যথেষ্ট ।
.



অরিজিন অফ ডেক্সটার - মায়ামী শহরটি আমেরিকার জাদুর শহর । সকল ধর্ম, বর্ণ ও জাতির লোকের বসবাসের জায়গা হওয়ায় এখানকার ক্রাইম রেট অন্যান্য শহর থেকে অনেক বেশি । মাত্র ২০ ভাগ ক্রাইমের কোন কূল কিনারা পাওয়া যায় । বাকিগুলো হারিয়ে চোখের আড়ালে ফাইল বন্দি হয়ে পড়ে থাকে । মাদক ব্যবসা, চুরি, জালিয়াতি, খুন, ধর্ষণ ইত্যাদি অপরাধ এখানে খুব স্বাভাবিক।
.
এমন শহরই ডেক্সটারের মত বহু সিরিয়াল কিলারদের বসবাসের জন্য আদর্শ স্থান । ডেক্সটার মায়ামী মেট্রো পুলিশ ডিপার্টমেন্টের একজন ফরেনসিক ও ব্লাড স্প্যাটার । ব্লাড স্প্যাটারের কাজ হচ্ছে ক্রাইম সিনের রক্তপাতের প্যার্টান এনালাইসিস করে কিভাবে ঘটনা ঘটেছে , সে মূহূর্তে খুনির মানসিক অবস্থা কেমন ছিল ইত্যাদি বের করে তদন্ত কাজে সাহায্য করা । যা তাকে কর্মক্ষেত্রে জনপ্রিয় করে তুললেও সে বেশ চুপচাপ ও আত্মকেন্দ্রিক । তার আপন বলতে ছিল শুধু ডেব্রা মরগান নামের একটি বোন। সেও একই ডিপার্টমেন্টের একজন পুলিশ অফিসার হিসেবে কর্মরত ।



ডেক্সটারের মত সিরিয়াল কিলারদের সাথে অন্য সিরিয়াল কিলার পার্থক্য হলো সে একটি বিশেষ কোড ফলো করে । সে কোডের নাম ‘হ্যারী’স কোড’ । হ্যারী তার পালক পিতার নাম । যিনি পেশায় একজন চৌকশ খ্যাতনামা পুলিশ অফিসার ছিলেন । হ্যারী ডেক্সটারকে এক ক্রাইম সিনে খুঁজে পান । যেখানে ডেক্সটারের মাকে কিছু ক্রিমিনাল একটি কন্টেইনারের ভিতর টুকরো টুকরো রেখে যায় । ডেক্সটার ২টা দিন মায়ের রক্তের উপর বসে থাকে । পরবর্তী জীবনে ডেক্সটারের কিলার সত্ত্বার ক্ষেত্রে এই ঘটনাটি প্রধান ভূমিকা পালন করে । হ্যারী নিজের ছেলের মতই ডেক্সটারকে লালন পালন করতে গিয়ে ডেক্সটারের ভিতর এক ভয়ংকর নিষ্ঠুর কিলার সত্ত্বা আবিস্কার করেন । সে অল্প বয়সেই এলাকার কুকুরদের হত্যার মত নিষ্ঠুর কাজ করতে গিয়ে হ্যারীর হাতে ধরা খায় । হ্যারী দিব্যচক্ষে দেখতে পারছিলেন আগে হোক পরে হোক ডেক্সটারের হাতে মানুষ খুন হবে । অনেক চেষ্টা করেও হ্যারী তাকে পরিবর্তন করতে না পেরে তাকে ট্রেনিং দিতে শুরু করেন । এইভাবে অনেক বছরের সাধনায় ডেক্সটার এক ভয়ঙ্কর কিলারে পরিনত হয় । তবে হ্যারী তার ভিতর কিছু নীতি বাক্য তথা ‘হ্যারী’স কোড’ ঢুকিয়ে দেয় । হত্যা যেহেতু সে করবেই সেহেতু তাকে এমন কাউকে হত্যা করতে হবে যে - সমাজের জন্য বোঝা, যার এই সমাজে থাকার কোনো অধিকার নেই, যারা আইনের হাত থেকে বের হয়ে যাচ্ছে, যারা আইনের আওতায় আসছে না তাদের হত্যা করা যাবে । তবে সকল ট্রেনিং এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে একটি আর সেটি হচ্ছে ধরা না পড়া । যাতে সে ইলেক্ট্রিক চেয়ার এড়াতে পারে । তাই তার খুনগুলো হয় নিখুঁত ও শৈল্পিক (!) ।
.



অর্জন ও জনপ্রিয়তা - ডেক্সটার চরিত্রে অসাধারণ পারফর্মেন্স দেখানোর জন মাইকেল সি. হল টানা পাঁচবার প্রাইমটাইম এমি অ্যাওয়ার্ড এ সেরা টিভি অভিনেতা হিসেবে মনোনীত হন এবং ২০১০ সালে গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ড জিতে নেন । ডেক্সটার টিভি সিরিজটি ২০০৮-২০১১ সাল পর্যন্ত টানা চারবার প্রাইম টাইম এমি এওয়ার্ডে সেরা টিভি সিরিজের ক্যাটাগরিতে মনোনয়ন পায় । ডেক্সটার সিরিজটি খ্যাতি এতটাই ছড়িয়ে পড়েছিল যে, সিরিজটির নানা রকম আইপ্যাডে ও আইফোনে গেমস বের হয়েছিল । এমনকি মার্ভেল কমিকস ২০১৩ সালে ‘ডেক্সটার লিমিটেড সিরিজ’ প্রকাশ করে !!
.


Miranda Barbour

সিরিজটির সমালোচনা - টিভি সিরিজটি মানসিকভাবে দুর্বল মানুষদের প্রতি খারাপ প্রভাব ফেলে । বিশ্বের অনেক জায়গায় অনেক অপরাধ ডেক্সটার থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছিল । যেখানে পিতাকে কুপিয়ে হত্যা , ভাইকে শ্বাস রুদ্ধ করে হত্যা ও এক ব্রিটিশ তরুণের দুই তরুণী হত্যা অন্যতম (Mark Twitchll, Miranda Barbour ও Andrew Conley নাম উল্লেখযোগ্য ) । এই অবস্থায় প্যারেন্টস প্রটেকশন কাউন্সির নামক সংগঠন সামাজিক যোগাযোগ , মাধ্যমে ব্যাপক আন্দোলন করে যাতে সিরিজকে টিভিতে না দেখানো হয় । যদিও খুব একটা লাভ হয়নি । ব্যাপক দর্শক প্রিয়তার কারণে এই সিরিজটি বন্ধ করার সম্ভব হয়নি ।
.



প্রিয় ডাইলগ-
We all make rules for ourselves. It's these rules that help define who we are. So when we break those rules we risk losing ourselves and becoming something unknown" - Season 7 Finale
I love Halloween. The one time of year when everyone wears a mask... not just me. People think it's fun to pretend you're a monster. Me, I spend my life pretending I'm not. Brother, friend, boyfriend - All part of my costume collection. Some people might call me a fraud. Let's see if it will fit. I prefer to think of myself as a master of disguise.
“They make it look so easy, connecting with another human being, it’s like no one told them it’s the hardest thing in the world.” -Dexter
"Surprise motherfucker" - Sgt. Doakes
"I'm a very neat monster."
"Monsters don't get to live happily ever after.
"Dating is hard... especially for a serial killer"
"People fake a lot of human interactions, but I feel like I fake them all, and I fake them very well."



উপসংহার - দয়া করে ভয় পাবেন না । এই টিভি সিরিজটি নির্দ্বিধায় দেখে ফেলেন । আশা করি সিরিয়াল কিলার হবেন না । নাকি হবেন ? চান্স নিয়ে দেখবেন নাকি ? এমনিতেই বাংলাদেশে ওর্য়াল্ড ক্লাস সিরিয়াল কিলারের বড্ড অভাব ।



কৃতজ্ঞতাঃ বিভিন্ন ব্লগ ও নেট জগত
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুন, ২০১৮ দুপুর ২:৪৩
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পরিণতি - ৩য় পর্ব (একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস)

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১২:২৮



( পরিণতি ৬১ পর্বে'র একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস ।)

তিন


আচানক ঘুম ভেঙ্গে গেলো ।

চোখ খুলে প্রথমে বুঝতে পারলাম না কোথায় আছি । আবছা আলোয় মশারির বাহিরে চারপাশটা অপরিচিত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইফতার পার্টি মানে খাবারের বিপুল অপচয়

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৩



গতকাল সরকারি ছুটির দিন ছিলো।
সারাদিন রাস্তাঘাট মোটামুটি ফাকাই ছিলো। ভাবলাম, আজ আরাম করে মেট্রোরেলে যাতায়াত করা যাবে। হায় কপাল! মেট্রো স্টেশনে গিয়ে দেখি গজব ভীড়! এত ভিড়... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×