somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উচ্চশিক্ষা ও ট্রানজিট

২০ শে অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৩:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঘটনা ১:
বুয়েটে লেভেল-৩ টার্ম-২ এ অধ্যয়নের সময় মনের মধ্যে একটা অদ্ভুত দ্বন্দ্ব চলছিল। দেশে চাকরির বাজার ভাল থাকায় পাশ করার পরে খেয়েপরে বাঁচা নিয়ে চিন্তা ছিল না। কিন্তু বন্ধুদের সাথে আড্ডা শেষ করে রাতে ঘুমানোর আগে নিজেকে প্রশ্ন করতাম, "কেন এমন হল? আমরা তো সবাই একসাথেই বুয়েটে ভর্তি হয়েছিলাম। সময়ের বিবর্তনে আজকে আমার অবস্থান ক্লাসের শেষের দিকে। আর আমার বন্ধুদের সিজিপিএ অনেক ভাল। তারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পড়াশুনা অথবা চাকরি করবে আর আমি সারাজীবন একঘেয়েমি ছাপোষা জীবন যাপন করব।

বাস্তবতার কাছে হার মেনে নিয়ে ভবিষ্যতের পরিকল্পনা করছি, এমনই এক সন্ধ্যায় বাসে করে বাসায় ফেরার সময় প্রিয়বন্ধু রাশেদ বলল, "আগামী সপ্তাহে আমাদের ডিপার্টমেন্টের তত্বাবধানে উচ্চশিক্ষা বিষয়ে একটা সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে, তুমি আসবা নাকি?"
আমি বললাম, "না রে, আমার রেজাল্টের যা অবস্থা তা দিয়ে বাহিরে লেখাপড়ার সুযোগ পাওয়া সম্ভব না, তাই ওখানে গেলে মনটা আরো খারাপ হবে।"
রাশেদ বলল, "বুঝতে পেরেছি কিন্তু আমাদেরকে সঙ্গ দেওয়ার জন্য হলেও তোমাকে উপস্থিত থাকতে হবে।"

রাশেদ আর কয়েকজনের জোরাজুরিতে আমাদের ক্লাস রুমে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গেলাম। আমেরিকা, কানাডা, সুইডেন সহ বিভিন্ন দেশ থেকে বেড়াতে আসা সিনিয়ররা একে একে তাদের নাম, পরিচয়, বর্তমান অবস্থা, বুয়েটে পাওয়া সিজিপিএ এবং কিভাবে উচ্চশিক্ষার জন্য বাহিরে যাওয়া যায় তার বর্ণণা দিলেন। অনুষ্ঠানের মাঝে নিজের মধ্যে একটা আত্মবিশ্বাসের জন্ম হল। দুর্বল সিজিপিএ পাওয়া সিনিয়রদেরকে বারবার জিজ্ঞেস করছিলাম তাদের রেজাল্টের কথা, যেহেতু নিজের কানকে বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল।
মধ্যম আর দুর্বল গ্রেড পাওয়া বন্ধুরা মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম জিআরই আর টোফেল কোচিং করার। ভর্তি হলাম ধানমন্ডির একটি কোচিং সেন্টারে। শুরু হল দলবেধে পড়াশুনা।

বছরখানেক পরে অনেকেই জিআরই আর টোফেল পরিক্ষা দিল। আমি অন্যদের চেয়ে অলস হওয়ায় চাকরির পাশাপাশি প্রস্তুতি নেওয়া সত্বেও কোন পরিক্ষায় অংশ নিলাম না। স্পনরশীপ পাওয়ায় চলে এলাম জার্মানিতে।
আমার সেই বন্ধুরা বিভিন্ন দেশে মাস্টার্স শেষ করে এখন চাকরি অথবা পিএইচডি করছে।

ঘটনা ২:
সেদিনের সেই আয়োজনে উপস্থিত শিমুল ভাই (ছদ্মনাম, তবে ওনার সিজিপিএ মধ্যম পর্যায়ের ছিল) তখন মালয়েশিয়ার একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স করছিলেন। সেসময় মালয়েশিয়ায় পড়াশুনা করতে যাওয়াটা অনেকটা সাহসী পদক্ষেপ বলে গণ্য করা হত। আসলে শিমুল ভাই চাকরি করতে সেখানে গিয়েছিলেন। কিন্তু চাকরি ভাল না লাগায় মাস্টার্সের জন্য এডমিশন নেন এবং একজন প্রফেসরকে ম্যানেজ করে সস্ত্রীক কোন রকমে দিনানিপাতে সক্ষম বৃত্তির ব্যবস্থা করেন। কয়েকটি আন্তর্জাতিক পাবলিকেশনসহ মাস্টার্স শেষ করেন। অফার পান বিশ্বের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয় ব্রিটিশ কলম্বিয়ায় পিএইচডি করার। ডক্টর উপাধি নিয়ে শিমুল ভাই এখন কাজ করে যাচ্ছেন বিজ্ঞানকে আরো সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নিতে।

ঘটনা ৩:
চাকরিতে কলিগ হিসেবে পাই মেকানিক্যালের এক সিনিয়র ভাইকে। তার সিজিপিএ ছিল তিনের অনেক নিচে। মেইন্টেনেন্সে কাজ করায় চাকরি নিয়ে অসন্তুষ্ট ছিলেন। উচ্চশিক্ষার জন্য আবেদন করলেন দক্ষিণ কোরিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে।একটি স্বল্প বেতনের এসিস্টেন্টশিপ পেয়ে গেলেন। খুব ভালভাবে মাস্টার্স সম্পন্ন করে এখন পিএইচডি করছেন কানাডার একটি নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে।

শেষকথা:
এরকম আরো কয়েকজনকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি যাদের জিপিএ অনেক দুর্বল, কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া এবং হংকং এ স্বল্প বেতনের স্কলারশিপ নিয়ে কৃতিত্বের সাথে মাস্টার্স সম্পন্ন করে আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়ার নামকরা ভার্সিটিতে উচ্চমানের বৃত্তি নিয়ে পিএইচডি করছেন। দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া এবং হংকং ছিল তাদের কাছে উচ্চশিক্ষা এবং সফলতার ট্রানজিট।
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×