কাবাডি:
আমাদের জাতীয় খেলা। গ্রামের মেঠো পথের ধারে কোর্ট বানিয়ে লুঙ্গি কাছা মেরে বুড়া জোয়ান মিলে খেলার মজাই আলাদা। বাড়তি বিনোদন হিসেবে আছে পথচারী দর্শকদের তুমুল করতালি এবং উতসাহব্যঞ্জক মন্তব্য। মনে পড়ে, ছোট বেলায় একবার আমার বড় ভাই "কাবাডি কাবাডি" বলতে থাকা চাচাত ভাইকে নিজেদের অংশের মধ্যে ধরে ফেলতে গিয়ে দুটো দাত ভেঙে ফেলে যেগুলো চাচাত ভাইয়ের মাথার মধ্যে ঢুকে যায়। সুতরাং প্রচণ্ড সাবধানতা অবলম্বন করার বিকল্প নেই।
গোল্লাছুট:
ছোটবেলায় মেদবিহীন শরীরের অধিকারী হওয়ার পিছনে আসল অবদান এই খেলার। সবচেয়ে বেশি দৌড়াতে পারা খেলোয়াড়কে জাতি-লিঙ্গ নির্বিশেষে দলের সবাই সমীহ করে চলত, যদিও বিপক্ষ দলের বেশির ভাগ খেলোয়াড়রা তাকে জীবন বাজি রেখে ধাওয়া করত। স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়ায় দৌড় প্রতিযোগিতার প্রথম পুরস্কার জুটত সেই ধাওয়া খাওয়া খেলোয়াড়ের কপালে।
ক্রিকেট:
ভদ্রলোকের খেলা বলে দাবি করা হলেও এটাকে স্বার্থপরদের খেলা মনে হয়। পুরো সময়ে বিনোদিত হয় অলরাউন্ডাররা্। অন্যদিকে আমার মত ব্যাটিং- বোলিং এ অপারদর্শী কিন্তু ফিল্ডিং এ মোটামুটি মানের খেলারামের অবস্থা হল তীর্থের কাকের মত। যক্ষের ধন ব্যাটিং পাওয়ার দুইবল পরে আউট হওয়ার পরে সারা বিকাল আক্ষেপে আগুনে পুড়তে থাকি, "ধুত্তুরি, শটটা ওভাবে খেলার কি দরকার ছি্ল, সারা দিনটাই মাটি হয়ে গেল!!" তবে বন্ধুবান্ধব মিলে টিভিতে লাইভ ম্যাচ দেখার সময় বিশেষজ্ঞের(!) মত মতামত দেওয়া আর কোন খেলোয়াড় খারাপ করলে তাকে তুলাধুনা করার মত সুখ জগতে আর কোথাও নেই।
ফুটবল:
শারিরীক চর্চার আর টিম ওয়ার্ক শেখার সবচেয়ে উত্তম উপায়। তবে আমার মত অলস ব্যক্তিদের দুইটা ফ্রী টিপস দেই। প্রথমত, সবসময় চেষ্টা করবেন স্ট্রাইকিং পজিশনে খেলতে এবং অপর পক্ষের গোল পোষ্টের কাছাকাছি থেকে সুযোগের সন্ধানে ব্যস্ত থাকতে। এতে স্বল্প পরিশ্রমে অধিক গোল করতে পারবেন। লোকে আপনাকে গোল মেশিন উপাধি দেবে। বোনাস হিসেবে সারামাঠে প্রচন্ড পরিশ্রম আর দাপাদাপি করে বেড়ানো মিডফিল্ডার আপনাকে বল পাস না করলে বেচারাকে ঝাড়ি দেওয়ার অপার সুয়োগ তো আছেই! দ্বিতীয়ত, ক্লান্ত হয়ে গেলে গোলকিপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করুন। একটু আরামও করা গেল আর গোল হজম করলেও কারো বকা খাওয়ার সম্ভাবনা নেই বরঞ্চ সবার সিম্প্যাথি পাওয়া যাবে।
বাস্কেটবল:
অনেক সাহস করে গতকাল বাস্কেটবল খেলতে গেলাম। গোটা মাঠে ৪০ মিনিটের মত আজাইরা দাপাদাপি করে ঘর্মাক্ত হয়ে সাইড বেঞ্ছে বসে মনে মনে অবসরের ঘোষণা দিলাম। অবসর ভেঙে সেদিনই মাঠে ফিরব যেদিন দুটো নতুন নিয়ম চালু করা হবে। ১. ডিফেন্সের খেলোয়াড়রা সরাসরি গোল করতে পারবে না। গোল করার পুর্বে বলকে কমপক্ষে তিনজনের হাত বদল হতে হবে! ২. আমার চেয়ে লম্বা খেলোয়াড়রা মাঝমাঠের ওপারে গেলে ফাউল হিসেবে গন্য হবে!!
ভলিবল:
কম খাটুনিতে আগ্রহী ব্যক্তিদের জন্য উপযুক্ত খেলা। নিজ জায়গায় দাঁড়িয়ে লম্পঝম্প করে বাহবা কূড়ানো ছেলের হাতের মোয়ার মত সহজ। তবে খেলার নিয়মে একটা পরিবর্তন আনা সময়ের দাবি। সেটা হল যে, লম্বা ব্যক্তিরা প্রতিপক্ষের বল ব্লক করলে প্রতিপক্ষ এক পয়েণ্ট পাবে!! তবে 'দশেমিলে করি কাজ, হারি জিতি নাহি লাজ' এই মুল্যবান উক্তি বাস্তবায়নের অগাধ সুযোগ রযেছে।
ক্যারাম:
গ্রামের মুদির দোকানের সিংগারা, বিস্কুটের সবচেয়ে বড় ক্রেতা ক্যারামের খেলোয়ারগণ। এ খেলার দর্শকরা খেলোয়াড়দের পরামর্শ দিতে সদা উদগ্রীব থাকে। নাছোড়বান্দা দর্শকদের পাল্লা থেকে নিস্কৃতির পাবার জন্য অনেক সময় মুখ বন্ধ রাখার কড়া নিয়ম চালু করা হয়।
ব্যাডমিন্টন:
একটু খরুচে খেলা হলেও শীতের রাতে বন্ধুরা মিলে খেলার মজাই অন্যরকম। তবে 'জীবন থেকে নেওয়া' শিক্ষা থেকে একটা পরামর্শ দিই। ডাবল গেমে কখনোই আপনার চেয়ে বেশি পারদর্শী এবং না জিতলে মরে যাবে এমন কারো সাথে জুটি বাধতে যাবেন না। নচেৎ, সেই বেচারা আপনার কোর্টে ছটফট করে বেড়াবে আর অসতর্কতাবশত তার তেজি র্যাকেটের নিষ্ঠুর বাড়ি গিয়ে পড়বে আপনার ঘাড়ে। পরবর্তী পরিস্থিতি নিজ দায়িত্বে কল্পনা করুন।