১৯৯৪ সালের জুন মাস। পিজি হাসপাতালের সি ব্লকের ২য় তলায় চাইল্ড ওয়ার্ড এর এফ সেভেন বেডে শুয়ে জীবন থেকে বিদায় নেয়ার দিনক্ষন গুনছি। ৭ বছরের বাচ্চা। কিইবা দেখেছি দুনিয়ার। ডিউটি ডাক্তার আসাদ বার বার আম্মাকে শান্তনা দিচ্ছেন সব ঠিক হয়ে যাবে বলে। কিন্তু ডাক্তার ও জানেন আনডায়াগোসিস এ (অজানা রোগ) আক্রান্ত এ শিশুটির হার্টরেট কমে এসেছে,পালস ও কমে যাচ্ছে। শিশুটি কোমায় চলে যাবে এর পর সেখান থেকে আর ফিরে আসবেনা। কিন্তু এ সহজ কথাটি শিশুটির মাকে বলা যাবেনা। দুনিয়ার সব সহজ কথা সহজ করে বলা যায়না।
মুখে আক্সিজেন মাক্স,হাতে পালস অক্সিমিটার লাগানো অবস্থায় কার্ডিও মনিটর এর টু টু শব্দ কানে ভেসে আসতে লাগলো। আমি বুঝতে পারছিলাম আজ আর ফিরে আসতে পারবোনা। আমি কল্পনা করতে লাগলাম আমার বাড়ির পাশের সরিষা ক্ষেত,আমার খেলার মাঠ আর আমাদের ডাকাতিয়া নদীর কথা। আমি হারিয়ে যাচ্ছি অনন্ত নক্ষত্রবীথির জগতে। যে জগত থেকে আর কেউ কখনো ফিরে আসেনা। মনে করতে লাগলাম আমার মায়ের মধুর মুখখানি। মনে মনে বলতে লাগলাম হে পরোয়ার দিগার আমি চলে গেলে আমার মাকে দেখে রেখো।
পরদিন খুব ভোরে আমার ঘুম ভাঙলো। দেখি বিছানার পাশে ফ্লোরে আমার মা জায়নামাজ বিছিয়ে মোনাজাত করছেন আর বলছেন হে পরয়য়ার দিগার আমি তো অনেক দিন তোমার দুনিয়া দেখেছি আমার আর এ দুনিয়া দেখার ইচ্ছা নেই। আমার জীবনের বিনিময়ে আমার সন্তানের জীবন ফিরিয়ে দাও। দয়ার সাগর আল্লাহ আমার মায়ের কথা শুনেছেন তিনি আমাকে ঐবারের জন্য বাঁচিয়ে দিয়েছেন।
আমি মনে করি আমার এ ২য় বার বেঁচে থাকা শুধু আমার মায়ের বদৌলতে। সেই ঘটনার পর থেকে আমি দেখেছি আমাদের ২ভাই এর মধ্যে আম্মা আমার জন্য এক ধরনের দূর্বলতা অনুভব করেন। আমি ১ ঘন্টার জন্য বাইরে গেলে আম্মা ৩বার ফোন দিবে। আমি মাঝে মাঝে রাগ হই। কারন প্রতিবার ফোন করে তিনি নানান ধরনের আলাপ করে যে আলাপ বাসায় এসে বললেও চলে। একবার রাগ করে বললাম মা তুমি বড্ড ডিস্টার্বিং। মা বললো একদিন বুঝবি। আসলে আমার বুঝতেও বেশী সময় লাগলোনা। মা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে। আমি বাইরে নানা কাজে যাই কিন্তু কেউ ফোন করেনা আমি বার বার মোবাইলের দিকে তাকাই কিন্তু কোন ফোন আসেনা আমার মায়ের। মনটা হু হু করে উঠলো। সেদিন আসলেই বুঝলাম মা কি জিনিস
শুনো রাখো পশ্চিমা দুনিয়ার মানুষেরা মা বাবাকে ওল্ড হোমে রেখে বছরের একদিন মা দিবস,বাপ দিবস নাম দিয়ে তাদের দেখতে যাও। আর সারা বছর কোন খবর রাখনা তোমাদের এই দিবসের আমি নিকুচি করি।
আমরা ভাটির দেশের মানুষ আমাদের মন নদীর কাদার মত নরম। আর বন্ধন ইস্পাতের চেয়ে শক্ত। তোমাদের এই সব দিবসের আমাদের দরকার নাই।
কারন তোমাদের বাবা মা তোমাদেরকে ১৮ বছর পরে ছেড়ে চলে যায় আর আমাদের বাবা মা শরীরের শেষ ফোটা রক্ত দিয়ে হলেও সন্তানকে আগলে রাখে।
আজ মা দিবস নামক তোমাদের এই নাটকে আমরা অংশ নেইনা। আমাদের মা আজ ও সকাল সকাল আমাদের সাথে হম্বি তম্বি করে ঘুম থেইকা উঠাইছে। আমাদের ওই গালাগালি বেশি ভালো লাগে।
আলোচিত ব্লগ
কুড়ি শব্দের গল্প
জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!
সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন
ধর্ম ও বিজ্ঞান
করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন
তালগোল
তুমি যাও চলে
আমি যাই গলে
চলে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফুরালেই দিনের আলোয় ফর্সা
ঘুরেঘুরে ফিরেতো আসে, আসেতো ফিরে
তুমি চলে যাও, তুমি চলে যাও, আমাকে ঘিরে
জড়ায়ে মোহ বাতাসে মদির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন
মা
মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।
অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন
কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।
একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন