somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন সৎ সিএনজি ওয়ালার গল্প, পড়লে অবাক হবেন মনে হচ্ছে

১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ওয়ার্ল্ড চাইল্ড ক্যান্সার বিশ্বের ক্যান্সার আক্রান্ত শিশুদের জন্য কাজ করে যাচ্ছে আজ বহু বছর যাবত। বিশেষ করে অনুন্নত দেশগুলোর শিশুদের জন্য কেমোথেরাপীর ফ্রি ঔষধ বিতরন ও ডাক্তারদের প্রশিক্ষনের কাজ করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। গত কয়েক বছর যাবত এ সংস্থাটির সাথে কাজ করার সুযোগ আসে আমার। বিশেষ করে এদের বিভিন্ন সেমিনারে আমার ডাক পড়ে প্রতিবারই। এ সংস্থাটির সাথে কাজ করতে পেরে খুব আনন্দিত বোধ করি সব সময়ে। এবার বলি আজকের একটি মজার গল্প।

কানাডার ভ্যানকুভার ইউনিভার্সিটি থেকে ডাঃ মেগান আসলেন সেমিনারে বক্তব্য রাখতে। অনুষ্ঠান চলছে পিজি হাসপাতালের ডাঃ মিলন হলে। বক্তব্য শেষে তিনি লক্ষ্য করলেন তার ল্যাপটপ ও অন্যান্য দরকারী জিনিসপত্র সহ রাখা ব্যাগটি তিনি খুজে পাচ্ছেন না। আমরা সবাই হন্যে হয়ে খুঁজলাম এবং বুঝতে পারলাম যে এই ব্যগটি চুরি হয়ে গেছে। লজ্জায় আমাদের সবার মাথা হেট হয়ে আসছিলো। ছি ছি কি বাজে দেশেই না আমাদের জন্ম হয়েছে। আমরা আমাদের অথিতিদের সামান্য ব্যগের নিরাপত্তাও দিতে পারিনা

অনুষ্ঠান শেষ করে সিএনজিতে করে বাসায় ফিরছি। পিজি হাসপাতালের শিশু অনকোলজী বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ডাঃ আফিকুল ইসলাম ও আমি এক সিএনজিতে করে বাসায় ফিরছি। ডাঃ আফিকুল ইসলাম তাঁর ল্যাপটপ সহ ব্যাগটি আমার হাতে দিলেন নিরাপদে রাখার জন্য। আমি ব্যাগটি সিএনজি এর পেছনে রাখলাম। সিএনজিকে গুলশানের একটি রেষ্টুরেন্টে থামিয়ে আমরা সেখানে খেতে বসলাম। খাবার শেষ হবার কিছু আগে মনে হলো আমি উক্ত ব্যগটি না নিয়ে নেমে পড়েছি। এর অর্থ দাঁড়ায় আমরা আর ঐ ল্যাপটপটি ফেরত পাচ্ছিনা। যে দেশে চোখের সামনে ব্যাগ নিয়ে যায় সে দেশে এ ব্যাগ আর ফেরত আসবে হতেই পারেনা। সবচেয়ে বড় কথা হলো ঐ ল্যাপটপে সারা দেশের সমস্ত ক্যান্সার আক্রান্ত শিশুদের ডাটা ছিলো যা বহু কষ্টে সংগ্রহ করা হয়েছে।

যাই হোক আমরা মলিন মুখে বাসায় ফিরে আসছি। ডাঃ আফিকুল ইসলাম আমাকে অত্যান্ত স্নেহ করেন তাই কিছু বলছেন না। কিন্তু আমি জানি আমার সামান্য ভুলের জন্য কত বড় ক্ষতি হয়ে গেলো। তবু ও কোন এক আশায় আমি রেষ্টুরেন্টে আমার ফোন নাম্বার দিয়ে আসি যদি কখনো ফেরত পাই সে আশায়।

আমি বাসায় এসে মন খারাপ করে বসে আছি। হঠাত রেষ্টুরেন্ট থেকে ফোন। স্যার ঐ সিএনজি ওয়ালা ফেরত এসেছে। আমি তো অবাক এও কি সম্ভব। দৌড়ে ছুটে গেলাম।গিয়ে দেখী আমার সব ধারনাকে মিথ্যে প্রমান করে দিয়ে সিএনজি ড্রাইভার সত্যি সেই ল্যাপটপের ব্যগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। খুশিতে আমার কান্না পেয়ে গেলো। আমি অবাক নয়নে লোকটির দিকে তাকিয়ে আছি।

গতকাল সকালে বাংলাদেশ নিয়ে আমার যে মূল্যায়ন ছিলো তার জন্য নিজের কাছে লজ্জা লাগছে। সত্যিই আমরা দরিদ্র হতে পারি আমাদের অর্থকড়ী কম থাকতে পারে কিন্তু আমাদের সোনার মানুষগুলো এখনো বেঁচে আছে আর আছে বলেই এ শত প্রতিকুলতার মধ্যে আমরা আবার নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখতে শুরু করি।


ছবিঃ আমার সাথে সেই সিএনজি ড্রাইভার
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×