somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শেয়ার বিনিয়োগ

০৪ ঠা মে, ২০১৫ সকাল ১১:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার এক বন্ধু একবার ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিল এরকম "কোটি টাকা মুনাফার আশায়, শেয়ার বাজারে লক্ষ টাকা ঢেলে, এখন আমি হাজার টাকার মালিক।" আমি জানিনা সত্যই তার এই অবস্থা না-কি, তবে আঁচ করতে পারি বহু মানুষের এই একই অবস্থা।
অমানবিক শোনালেও আমার মতে এই শোচনীয় অবস্থার জন্য প্রায় ৯০%-ই দায়ী বিনিয়োগকারী নিজেই।
ধরিঃ আমার বন্ধুর স্ট্যাটাসটিকে যদি হয় অনেক বিনিয়োগকারীর প্রাণের কথা। যা নিম্নরূপঃ
"কোটি টাকা মুনাফার আশায়, শেয়ার বাজারে লক্ষ টাকা ঢেলে, এখন আমি হাজার টাকার মালিক।"
উপরোক্ত বাক্যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখিত।
১) মুনাফা ২) ঢেলে- (বিনিয়োগ করে) ৩) শেয়ার বাজার।
আমি শুধুমাত্র ১ ও ২ নম্বর নিয়ে আলোকপাত করব। কেননা ৩ নম্বর পয়েন্ট নিয়ে কথা বললে বহু বিজ্ঞ ব্যক্তির সাথে বিতর্ক করতে হবে। (আমার কাছে একজন লিফটম্যান দাবি করেছিল যে তার মতো কেউই শেয়ার বাজার বোঝে না ।)
যাই হোক,
বিনিয়োগঃ বিনিয়োগ হোল কোন ব্যবসায় আর্থিক পুঁজি খাটানো। বিনিয়োগের প্রেরণা হল মুনাফা অর্জন। এটা সম্পত্তিবাচক হিসাব। বিনিয়োগ করে অর্থনীতির "সারপ্লাস ইউনিট", যারা সাধারণত গৃহিণী, অবসরপ্রাপ্ত, জমানো টাকার মালিক তারা। অন্যদিকে "ডেফিসিট ইউনিট" হল উদ্যোক্তারা।
(অর্থনীতিতে ব্যঙ্ক হোল এমন এক প্রতিষ্ঠান, যারা সারপ্লাস ইউনিট থেকে টাকা নিয়ে ডেফিসিট ইউনিটকে (উদ্যোক্তাদের) বিভিন্ন শর্তসাপেক্ষে ঋণদান করে, নির্দিষ্ট হারে।)
ফিরে আসি বিনিয়োগের কথায়ঃ
১) বিনিয়োগ হতে হবে দীর্ঘমেয়াদী। বিনিয়োগ একটি সম্পত্তিবাচক হিসাবও বটে। সম্পত্তিবাচক হিসাব দীর্ঘমেয়াদী হয়।
২) বিনিয়োগ হতে হবে আপনার জমানো টাকার অংশ বিশেষ। সম্পূর্ণ জমানো টাকা নয়, ঋণ করেতো নয়-ই। (পাঠ্যপুস্তক আনুযায়ী ঋণ নেবে অর্থনীতির "ডেফিসিট ইউনিট"। "সারপ্লাস ইউনিট" নয়।)
আপনি যখনই বিনিয়োগ করছেন আপননি যতই বুদ্ধিমান হোন- না কেন, আপনি 'সারপ্লাস ইউনিট'- এর প্রতিনিধি। আপনি কখনই উদ্যোক্তার মতো চালাক নন। ব্যবসায়ীক তথ্য-প্রাপ্ত-ও নন। তবে আপনি কেন ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করবেন?
৩) বিনিয়োগ হতে হবে সেখানেই যা আপনি বোঝেন। আপনি-কি সত্যই শেয়ার-বাজার বোঝেন?
৪) মাথায় আপনাকে রাখতে হবে, বিনিয়োগ আপনাকে দেবে মুনাফা, মূলধনী মুনাফা নয়। প্রতিষ্ঠিত নিয়ম হোল বিনিয়োগের মুনাফা হবে ব্যঙ্ক সুদের চেয়ে কিছু বেশী।
শেয়ারের মুনাফা কি?
শেয়ারর মুনাফা হোল বাৎসরিক লভ্যাংশ যা একটি কোম্পানি প্রদান করে।
ধরি ২০১৪ সালের ১লা জানুয়ারি কোম্পানি 'ক' এর ১০০টি শেয়ার বাজারে ছাড়ল। ৫০ টাকা প্রতিটি। এখন কোম্পানি 'ক'-এর ভ্যালু হচ্ছে (১০০ * ৫০) = ৫০০০ টাকা।
২০১৪ সালের ৩১শে ডিসেম্বর কোম্পানি 'ক' এর ৩০০ টাকা লাভ হলে লভ্যাংশ আসবে (৩০০/১০০)= ৩ টাকা প্রতিটি শেয়ার-এ।
কোম্পানি 'ক' যদি শেয়ার হোলডারদের ৩ টাকা করে লভ্যাংশ দিয়ে দেয়, তবে গাণিতিক নিয়মে, অন্যান্য অর্থনৈতিক উপাদান অপরিবর্তিত থাকলে মার্কেটে কোম্পানি 'ক' এর শেয়ার এর দাম অপরিবর্তিত-ই থাকবে। তথা ১লা জানুয়ারি ২০১৫ তে প্রতিটি শেয়ারের দাম ৫০ টাকাই থাকবে। কোম্পানি 'ক'-এর টোটাল ভ্যালু (১০০ * ৫০) = ৫০০০ টাকায় অপরিবর্তিতই থাকবে।
অন্যথায়, যদি কোম্পানি 'ক' ব্যবসায় সম্প্রসারণ করার পরিকল্পনা থাকে, এবং মুনাফার ৩০০ টাকাই পুনর্বিনিয়োগ (reinvest) করে, তবেই শুধু মাত্র শেয়ারের মূল্য বেড়ে দাঁড়াবে (৫০+৩)= ৫৩ টাকা। (অন্যান্য অর্থনৈতিক উপাদান অপরিবর্তিত থাকলে)। কোম্পানি 'ক'-এর নতুন টোটাল ভ্যালু হবে (১০০ * ৫৩) = ৫৩০০ টাকা।
এখন আপনি যদি সেই ৫৩ টাকার শেয়ার ৩০০০ টাকায় বাজার থেকে কেনেন তবে তা আপনার ব্যর্থতা। সার্থকতা কার জানিনা।
শেয়ার বাজারে লক্ষ টাকা ঢেলে কোটীপতি কখনই হওয়া যাবেনা। ব্যঙ্ক সুদের চেয়ে কিছু বেশি টাকা পেতে পারেন।
কোটিপতি হতে চাইলে অ্যাপল বা মাইক্রোসফট এর মতো উদ্ভাবনী কোম্পানি খোঁজ করে তাতে প্রাথমিক অবস্থায় বিনিয়োগ করতে পারেন। অথবা নিজেই ব্যবসায় নেমে যেতে পারেন।
মনে রাখবেন শেয়ারবাজার কোন ব্যবসায় স্থান নয়। শেয়ারবাজার হোল বিনিয়োগের স্থান।
আপনি কখনই শেয়ার ব্যবসা করেন না। আপনি শেয়ার-এ বিনিয়োগ করেন।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×