somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশে শিশুদের উপর নতুন নতুন “ভ্যাক্সিন”এর ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল!! স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আমরা গিণিপিগ হচ্ছি নাতো!!!

১২ ই ডিসেম্বর, ২০১২ দুপুর ১:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সম্প্রতি আমাদের দেশে আইসিডিডিআরবি 'র অধীনে অনেক গুলো ভ্যাক্সিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পরিচালিত হচ্ছে। যেমন মিরপুরে কলেরা ভ্যাক্সিন, চাঁদপুরের ‘মতলব’ এ জাপানিজ এনসেফালাইটিস ও সিজনাল ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাক্সিনের ট্র্যায়াল চলছে। এছাড়া ঢাকার কমলাপুর এলাকায়ও এধরনের অনেকগুলো গবেষণা পরিচালিত হচ্ছে।


ছবিঃ গবেষণায় ব্যাবহৃত কলেরা ভ্যাক্সিন

বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে উল্লেখিত গবেষণাগুলো পরিচালিত হচ্ছে হয় বস্তিতে বসবাসরতদের উপর অথবা সমাজের অশিক্ষিত, অসহায় ও সু্যোগ সুবিধা বঞ্চিত দরিদ্র্য খেটে খাওয়া মানুষগুলোর সন্তানদের উপর। দেশী বিদেশী বিজ্ঞানীদের প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতা ও তদারকির মধ্য দিয়ে এবং গবেষণার সকল নিয়ম নীতি অনুসরণ করেই এ ধরণের গবেষণাগুলো পরিচালিত হচ্ছে সংস্থাটির এমন দাবীর পরও সচেতন মানুষের মধ্যে সবসময় জানার একটা কৌতুহল থেকেই যায় আর তা হলো কেনই বা বেশীরভাগ ক্ষেত্রে সমাজের এলিট শিক্ষিত অংশকে পাশ কাটিয়ে অবহেলিত ও অপেক্ষাকৃত পিছিয়ে থাকাদের টার্গেট করা হয়।

মানুষের উপর নতুন কোন টীকা বা ঔষুধের যেকোন ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ক্ষেত্রেই মূল শর্ত থাকে যে লাভ ক্ষতির বিবেচনায় লাভের পাল্লা অবশ্যই ভারী হতে হবে। গবেষণায় অংশগ্রহনকারী প্রত্যেকের এ ধরনের গবেষণায় অংশগ্রহন থেকে কি কি ধরনের উপকারীতা পাবার সম্ভবনা আছে সেটি জানার সাথে সাথে গবেষণা উপাদানটির সমূহ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে তাদের সম্যক ধারণা থাকতে হবে। শুধুমাত্র যেসব স্বেচ্ছাসেবী গবেষণার সম্ভাব্য উপকারিতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে পুরোপুরি জানার পরও সজ্ঞানে এধরনের গবেষণায় অংশগ্রহনের লিখিত সম্মতি দেবে কর্তৃপক্ষ শুধুমাত্র তাদেরকেই গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করার অধিকার পাবে। এরপরও শর্ত থাকে যে চাইলে যে কোন সময় অংশগ্রহনকারী স্বেচ্ছায় এ গবেষণা থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিতে পারবে। শুধু তাই নয় গবেষণায় অংশগ্রহণকারী প্রত্যেকের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও নৈতিক দিকটি পুরোপুরি রক্ষিত হচ্ছে কিনা এজন্য গবেষনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সকল পর্যায়ে দেশী-বিদেশী, সরকারী-বেসরকারী সংশ্লিষ্ট সংস্থার নিরপেক্ষ তদারকি থাকা আবশ্যক।

ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অতীত ঘটনাবলী মানব সভ্যতার ইতিহাসের পাতায় অনেক কলঙ্কজনক অধ্যায়ের সূচনা করেছে। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের নাম শুনলেই সবার্গ্রে মানব পটে যে ঘটনাটির বিভৎসতা ভেসে উঠে তা হলো দ্বিতীয় বিশ্বযুধ্বের অব্যাহতি পর ঐতিহাসিক ন্যুরেম্বার্গ ট্রায়াল (১৯৪৬-১৯৪৭) ‘র মাধ্যমে প্রকাশিত হওয়া হিটলারের নাযি চিকিৎসগণ কর্তৃক কনসান্ট্রেশন ক্যাম্প গুলোতে শত শত বন্দীদের উপর চালানো সব অমানবিক কুখ্যাত গবেষণা।


ছবিঃ হিটলারের নাযী বাহিনীর গবেষণার শিকার মানবতা

সে সময় মানবাধিকারের নূন্যতম তোয়াক্কা না করে এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানের সকল নীতি নৈতিকতা লঙ্ঘন করে বন্দীদের শরীরে বিষাক্ত দাহ্য রাসায়নিক পদার্থ থেকে শুরু করে মরণঘাতী জীবন্ত ভাইরাস ব্যাক্টেরিয়া পর্যন্ত সিরিঞ্জের মাধ্যমে ঢুকিয়ে সেগুলোর কার্যকারীতা পরীক্ষা করা হয়েছিলো। পরে অবশ্য ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আদালত তেইশ জন চিকিৎসক ও কর্মকর্তার মধ্যে সাত জনকে মৃত্যুদন্ড ও বাকি ষোল জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দিয়েছিল।


ছবিঃ ঐতিহাসিক ন্যুরেম্বার্গ ট্রায়াল

পরবর্তীতে এই ধরণের অমানবিক গবেষণার পুনরাবৃত্তি রোধে এবং স্বাস্থ্যবিজ্ঞান গবেষণার সকল ক্ষেত্রে সব ধরণের মানবাধিকারের দিকটি যাতে সুরক্ষিত থাকে সে লক্ষ্যে আন্তর্জাতিকভাবে নতুন কিছু নীতিমালা প্রণয়ন করা হয় যেটি ইতিহাসে ন্যুরেম্বার্গ কোড নামে পরিচিত হয়ে আছে। তারপরও থেমে থাকেনি বিজ্ঞান গবেষণার এই কুৎসিত প্রচেষ্টার দিকটি। এরপর ১৯৭২ সালে প্রকাশিত এক রিপোর্টে আমেরিকার আলাবামা অংগরাজ্যের তাসকিগিতে দীর্ঘদিন ধরে সেখানকার কালোদের উপর পরিচালিত সিফিলিস জীবাণু নিয়ে গবেষণার সব ভয়ঙ্কর লোমহর্ষক কাহীনি উঠে আসে যা কিনা বিশ্ব বিবেককে স্তম্ভিত করে দেয় এবং বিশ্বের সব যায়গা থেকে সমালোচনার ঝড় উঠে।


ছবিঃ তাসকিগি সিফিলিস গবেষণা

১৯৩০ সাল থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত পরিচালিত এ গবেষণায় কোন রকম সম্মতি ছাড়া, জোর করে, কোন ধরণের চিকিৎসা সুবিধা না এবং অনেক সময় চিকিৎসার ফাঁদে ফেলে দিয়ে শত শত আফ্রিকান-আমেরিকানদের শরীরে বাইরে থেকে সিফিলিসের জীবাণু ঢুকিয়ে দিয়ে পরীক্ষা চালানো হয়।


ছবিঃ সিফিলিস পরীক্ষার ভয়াবহতা

এবং এর পর থেকে গবেষণার সাবজেক্ট হিসাবে মানুষকে ব্যবহারে কঠোরতা আরোপের নিমিত্তে আরও কিছু আইন কানুনের প্রণয়ন করা হয়।

গবেষণার নামে অতীতের মতো মানুষকে ধরে ধরে সহজেই আর যাতে গিনিপিগ বানানো না যায় এগুলোকে নিয়ন্ত্রন এবং দেখভালের জন্য বর্তমানে বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থা, আমেরিকার খাদ্য ও ঔষুধ অধিদপ্তর, ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ হেলথ সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নানা অধিদপ্তর বিভিন্ন আইন ও নীতিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে কাজ করে যাচ্ছে। এসব সংস্থার প্রণীত এই নীতিমালাগুলোর কিছু হলো অভিন্ন ও সার্বজনীন এবং কিছু আছে স্থান কাল পাত্রভেদে ভিন্ন। এ ধরণের নিয়ম নীতি গুলোকে সাধারণত ‘গুড ক্লিনিক্যাল প্র্যাক্টিস’ নামে অভিহিত করা হয়। এটাকে বলা যেতে পারে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের সংবিধান। কিন্তু শুধু সংবিধান থাকলেই তো আর চলে না। গবেষণার প্রতিটি ক্ষেত্রে এগুলোকে ঠিকঠাক মতো মেনে চলা হচ্ছে কিনা সেটা তদারকির জন্য নৈতিক কমিটি, রিভিউ কমিটি, দেশী বিদেশী পর্যবেক্ষন কমিটি, প্রভৃতি বিভিন্ন ধরনের নিয়ন্ত্রক সংস্থার শক্ত ভূমিকা থাকা আবশ্যক। অনেকটা আইন প্রয়োগের তদারকিতে পুলিশের ভূমিকার মত। এখন আমাদের দেশে এই ধরণের গবেষণার ক্ষেত্রে কি ধরণের নীতিমালা আছে এবং সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট সংস্থা গুলো তার আলোকে কতটুকু ভূমিকা পালন করছে এবং সর্বোপরি পুরো প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতার প্রশ্নে দেশের গণমাধ্যমের ও সচেতন সমাজের সম্পৃক্ততা কতটুকু আছে সেটি নিরুপন করাটা এখন সময়ের দাবী।

দীর্ঘদিন ধরে আমাদের দেশের স্বাস্থ্যখাতে আইসিডিডিআরবি 'র ব্যাপক সুনামকে কাজে লাগিয়ে বিদেশীরা অতি সহজেই আমাদের উপর দিয়ে তাদের উৎপাদিত নতুন নতুন ভ্যাক্সিনের কার্যকারীতা যাচাই করে নিচ্ছে। বাস্তবতা হলো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে তাদের এই ধরণের গবেষণার পিছনে জনস্বাস্থ্য সেবার চেয়ে ব্যাবসায়িক স্বার্থই অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রাধান্য পায়। আমাদের দেশে চাঁদপুরের ‘মতলব’ হচ্ছে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের উর্বর ক্ষেত্র।


ছবিঃ মতলব হাসপাতাল ও এর আওতাধীন গবেষণা এলাকা

সেখানে আইসিডিডিআরবি ‘র প্রতিষ্ঠিত একটা হাসপাতালের মাধ্যমে দূর্গম এলাকার দরিদ্র্য জনগষ্ঠীর দ্বারপ্রান্তে চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দেওয়ার বিনিময়ে তাদের উপর দিয়ে অতীতে স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত অসংখ্য ভ্যাক্সিনের কার্যকারীতার পরীক্ষা চালানো হয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ কলেরা (১৯৮৫-১৯৯০), শিগেলা (২০০০-২০০১) সহ রোটা ভাইরাস প্রতিরোধী রোটা শিল্ড (১৯৯৮-১৯৯৯), রোটা টেক (২০০৭-২০০৮) ও রোটা রিক্স (২০০৮-২০১১) প্রভৃতি ভ্যাক্সিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালগুলোর কথা উল্লেখ করা যেতে পারে।

বলা বাহুল্য জনস্বাস্থ্য বিবেচনায় ও বিশেষ করে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে পরিচালিত এধরণের কয়েকটি গবেষণার কিছুটা যৌক্তিকতা থাকলেও বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই দেশের জন্য সমস্যা নয় এমন সব রোগের ভ্যাক্সিনের কার্যকারীতা এখানে যাচাই করা হয়ে থাকে। উদাহরণ স্বরূপ মতলবে বর্তমানে পরিচালিত জাপানিজ এনসেফালাইটিস ভ্যাক্সিনের ট্রায়ালের ব্যাপারটা উল্লেখ করা যেতে পারে। দক্ষিণ এশিয়ার শ্রীলঙ্কাতে এই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত রোগের কিছুটা প্রাদুর্ভাব থাকলেও বাংলাদেশের জন্য এ পর্যন্ত এটা কোন সমস্যা তৈরী করেনি। মজার ব্যাপার হলো আমাদের দেশে এধরণের প্রজেক্টে ফান্ড পাওয়া যতোটা না সহজ স্বাস্থ্যবিজ্ঞানের অন্যান্য মৌলিক গবেষণার ক্ষেত্রে তা বিপরীতক্রমে ঠিক ততোটাই কঠিন। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দেশের চিহ্নিত দু’এক জন গবেষক নিজেদের পকেট ভারী করতে সক্ষম হলেও মৌলিক গবেষণায় পর্যাপ্ত অর্থাভাবে আইসিডিডিআরবি ‘র মূল গবেষণা ল্যাবের অনেকগুলোই খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। এমনকি প্রজেক্ট না থাকাতে তরুন গবেষকদের অনেকেই চাকরি হারাচ্ছেন। দেশে যদি ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পরিচালনার এধরণের অবাধ সুযোগ থাকে তবে ভবিষ্যতে দ্বাতাগোষ্ঠী গুলো অর্থায়নের ক্ষেত্রে মৌলিক গবেষণার চেয়ে এগুলোতেই প্রাধাণ্য দিতে থাকবে। দেশের স্বাস্থ্য বিজ্ঞান গবেষণার বিকাশে যেটি কখনোই শুভকর বলে বিবেচ্য হতে পারেনা।

বাস্তবতা হলো এসব ট্রায়ালের ক্ষেত্রে দেশ যে খুব বেশী লাভবান হয় তা নয়। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর অংশ গ্রহনের দ্বারা মানব দেহে এসব ভ্যাক্সিনের কার্যকারীতা ও নিরাপত্তাজনিত ইস্যুগুলোর সমাধানের মাধ্যমে পৃথিবীর অন্যান্য জনগোষ্ঠীগুলোর যাদের মধ্যে কিনা প্রকৃতই সংশ্লিষ্ট রোগের প্রাদুর্ভাব বিদ্যমান তাদের উপর প্রয়োগের লাইসেন্স প্রাপ্তির অভিপ্রায়ের মহান স্লোগানকে সামনে রেখে এসব করা হয়। কিন্তু এর সাথে সাথে এ সবের পেছনে উন্নত দেশগুলোর কর্পোরেট ওষুধ কোম্পানিগুলোর যে বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা নিহিত থাকে সে দিকটিও অস্বীকার করার সুযোগ নেই।

বেশীরভাগ সময় দেশে বৈদেশিক অর্থ আসছে, ছাত্র ছাত্রীরা আধুনিক গবেষণার সুযোগ পাচ্ছে, অনেক লোকের কর্মসংস্থান হচ্ছে, গরিব মানুষগুলো সংস্থার হাসপাতাল থেকে বিনা মূল্যে চিকিৎসা সুবিধা পাচ্ছে ইত্যাদি ভেবে সরকারের নৈতিক কমিটিগুলোর এধরণের প্রজেক্ট অনুমোদনের বাছ বিচারের ক্ষেত্রে অনেক নমনীয় হতে দেখা যায়। দেশের প্রধান সারির মিডিয়া গুলোও এসব ব্যাপার নিয়ে খুব বেশী ঘাটাঘাটি করেনা। যার ফলে এসব গবেষণায় অংশগ্রহনকারী ঐ সব দরিদ্র্য মানুষগুলো পরবর্তীতে কি কি স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে বা প্রজন্মের পর প্রজন্ম তাদের মধ্যে তদজনিত কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও স্বাস্থ্য জটিলতা দেখা দিচ্ছে কিনা ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো বরাবরই উপেক্ষিত থেকে যায়। অপর দিকে অবস্থার বিবেচনায় বিদেশী স্বার্থান্বেষি দ্বাতা গোষ্ঠীগুলো এসব ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পরিচালনার ক্ষেত্রে দেশকে আফ্রিকার অতি নিম্নবিত্ত দেশের মত লোভনীয় ভাবতে শুরু করেছে। অথচ আমাদের পাশের দেশে ইন্ডিয়াতেই এ ধরনের গবেষণা পরিচালিত করতে গেলে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থা থেকে অনু্মোদন নিতে নিতে তাদের অবস্থা হয় অনেকটা ত্রাহি ত্রাহি। তারপর গবেষণা চলাকালীন সময়ে দেশীয় বিভিন্ন সংস্থার কঠোর পর্যবেক্ষন তো থাকেই।

আমাদের দেশে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পরিচালনা আইনের নিয়ন্ত্রণ ও নীতিমালা কতটা যুগপোযুগী ও কার্যকরী এবং বর্তমানে পরিচালিত গবেষণায় এর কতটা প্রয়োগ হচ্ছে এটা জানতে স্বাস্থ্য সচেতন সমাজের বড়ো অংশের যথেষ্ঠ কৌতুহল আছে। এতগুলো ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চললেও এ সংক্রান্ত কোন প্রতিবেদন আমাদের জাতীয় পত্র পত্রিকায় কখোনো সচারোচর চোখে পড়েনা। গবেষণা সংস্থা হিসাবে আইসিডিডিআরবি ‘র নিজস্ব একটা রিভিউ কমিটি ও নৈতিক কমিটি আছে। সাধারণত তারাই এধরনের গবেষণার প্রারম্ভিক অনুমোদন দিয়ে থাকে এবং একই সাথে গবেষণা চলাকালীন সময়ে নিবিড় তদারকীর সাথেও জড়িত থাকে। কিন্তু এক্ষেত্রে একটা ব্যাপার সবসময় রয়েই যায় আর তা হল বৈদেশিক দাতা গোষ্ঠীগুলো গবেষণার জন্য তো তাদেরকেই অর্থায়ন করছে। তবে এর মাধ্যমে আমি এধরণের গবেষণার গুনগত মান নিয়ন্ত্রনে তাদের ভূমিকা ও পর্যবেক্ষনের নিরপেক্ষতা নিয়ে কোন প্রশ্ন তুলছিনা। আমার বক্তব্য হলো এর সাথে দেশের সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট বিষেশজ্ঞদের সম্পৃক্ততা কতটুকু আছে সেদিকে আলোকপাত করা। কাগজে কলমে নিয়ম থাকলেও বাস্তবে সেগুলো কতটা পালিত হচ্ছে সেগুলো অন্তত জনগনের সম্মুখে উন্মোচন করা। স্বাস্থ্যঝুঁকির মতো স্পর্শকাতর বিষয় জড়িত থাকায় এক্ষেত্রে গণমাধ্যমের ও একটা শক্তিশালী ইতিবাচক ভূমিকা থাকা আবশ্যক।

পরিশেষে যেটি বলতে চাই তা হলো গবেষণার মাধ্যমে প্রাপ্ত নতুন কোন ঔষুধ বা টিকার কার্যকারিতা ও নিরাপত্তা যাচায়ের জন্য মানুষের উপর তার প্রয়োগ সেটা গবেষণার যে পর্যায়েই হোক না কেন গ্রহনযোগ্যতার বিচারে এখন পর্যন্ত বির্তকের উর্দ্ধে উঠতে পারেনি। বরঞ্চ দিনে দিনে বিশ্বের ধনী দেশগুলোর এ ধরণের গবেষণার জন্য তৃতীয় বিশ্বের অনুন্নত ও অপেক্ষাকৃত গরীব দেশগুলোকে বেছে নেয়ার বর্ধিত প্রবণতা এই বির্তকের পেছনের যুক্তি গুলোকেই শাণিত করছে। ফলশ্রুতিতে যতোই নতুন নতুন আইন কানুনের ফ্রেমে বন্দী করে মানব দেহের উপর এই ধরণের গবেষণাকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করা হোক না কেন বাস্তবে বিশ্বব্যাপী এর বিরুদ্ধেই জনমত প্রবল হচ্ছে। আর এ জন্য উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে এধরণের গবেষণা পরিচালনা করা অতটা সহজ হচ্ছে না। সে সব দেশে আইনের কঠোরতা এবং দেশের সরকারী বিভিন্ন সংস্থার অনুমোদন প্রাপ্তির পূর্বশর্তের কঠিন বেড়জালে ফেলে এগুলোকে নিয়ন্ত্রন করা হচ্ছে। তাই আমাদেরকেও এক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে। আর এ জন্য দেশের সরকারী ও বেসরকারী উভয় পর্যায় থেকেই এ ধরণের গবেষণার ক্ষেত্রে নৈতিকতার দিকটি পুরোপুরি রক্ষিত হচ্ছে কিনা, স্বাস্থ্যঝুঁকির বিবেচনায় অংশগ্রহণকারী জনগোষ্ঠির উপর অদূর ভবিষ্যতে কি ধরণের প্রভাব পড়তে পারে এবং সর্বোপরি এসব থেকে জনগণ প্রকৃত অর্থে কতটুকু উপকৃত হচ্ছে তার পরিপূর্ণ ও সুস্পষ্ট তথ্যচিত্র জনসম্মুখে তুলে ধরার জন্য স্পষ্ট নীতিমালা প্রণয়নের দরকার। সাথে সাথে দেশের স্বাস্থ্যখাতে বিদেশী অনুদান এবং নতুন নতুন গবেষণার বিকাশ যাতে বাধা গ্রস্থ না হয় সে বিষয়গুলোকে মাথায় রেখেই এর সাথে দেশের সকল পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের নিরপেক্ষ তদারকির বাস্তব প্রয়োগ থাকতে হবে। তাহলেই কেবলমাত্র এ ধরণের গবেষণার মাধ্যমে দেশের জনগনকে যে গিনিপিগ বানানো হচ্ছে না সে বিষয়টি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।





ছবি ও তথ্য সূত্রঃ
1. Web site: International Centre for Diarrhoeal Disease Research, Bangladesh
2. Matlab Health Research Centre
3. Human Demographic Surveillance System, Matlab Chandpur
4. Different GCP guidelines for clinical trial study
5. Website: Online Certificate Course on “Protecting Human Research Participant” by National Institute of Health, USA
6. Others Website
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১২ দুপুর ১:১২
২৭টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×