somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অভিজিৎ রায়ের স্বপ্নই হোক আমাদের আগামী দিনের শপথ

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ ভোর ৫:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(অভিজিৎ-এর মৃত্যুতে আমি নির্বাক, স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। চোখ দিয়ে পানি গড়িয়েছিল। যখন একটু স্বাভাবিক হলাম, তখন একটি লাইনও লিখতে পারছিলাম না। তবে কিছু একটা লিখতে চাচ্ছিলাম। লিখতে গিয়েও বাঁধা আছে। আপনার প্রিয়জনেরা নিশ্চয়ই চাইবেনা যে, আপনারও হুমায়ুন আজাদ, রাজীব হায়দার, অভিজিৎ-এর মতো পরিণতি হোক। কিন্তু আজকের এই সভ্যতা এভাবে এগোয়নি। সেই ব্রুনো, গ্যালিলিও থেকে আজকের অভিজিৎ নিজেদের বিসর্জন দিয়েছে। এইসব বিজ্ঞানমনষ্ক, মুক্তমনা চিন্তার অধিকারীদের বিসর্জনের উপরই দাঁড়িয়ে আছে আজকের এই সভ্যতা। কাজেই বিজ্ঞান ও যুক্তিকে আঁকড়ে ধরে থাকবো, সবকিছু নষ্টদের অধিকারে যেতে দিবো না)

বাংলাদেশে অনেকগুলো ব্লগ আছে, অনেক ব্লগারও আছেন। আছেন লেখক, বুদ্ধিজীবী। কিন্তু “মুক্তমনা”র মতো আর একটা ব্লগও কি আছে? এই ব্লগটি চালাতে হলে মনটি হতে হবে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত, ভয়হীন। শুধু তা হলেই চলবে না, থাকতে হবে যথেষ্ট জ্ঞান, নিয়মিত পড়াশুনা, বিজ্ঞানমনষ্ক একটি মন ও বুদ্ধিবৃত্তির চর্চা। এই ব্লগটিরই প্রতিষ্ঠাতা প্রিয় অভিজিৎ রায়। অভিজিৎ রায় ছিলেন একজন বিজ্ঞানমনষ্ক, যুক্তিবাদী, মুক্তমনা মানুষ।

অভিজিৎ নিজে লিখতেন, অন্যকে দিয়ে লেখাতেন, লেখক তৈরি করতেন। অভিজিৎ আমাকেও কয়েকবার উৎসাহ দিয়েছিলেন “মুক্তমনায়” লিখতে। কিন্তু কেন যেন আমার আর সেখানে লেখা হয়ে উঠেনি।

অভিজিৎ আর নেই। অভিজিৎকে প্রকাশ্যে ধারালো চাপাতি দিয়ে কোপানো হয়েছে, কুপিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। কুরাবানীর পশুর গলায়ও ধারালো ছুরি দিয়ে কোপানো হয়। সেই কোপানো থেকে তার স্ত্রীও রেহাই পায়নি। তার স্ত্রীকেও হত্যা করতে চেয়েছিল। তার স্ত্রী গুরুতর আহত, একটি আঙ্গুল কেটে রাস্তায় পড়ে রয়েছে।

অভিজিৎ-কে আগেই মৃত্যুর হুমকি দেয়া হয়েছিল। হ্যাঁ, একটি বিশেষ ধর্মের বিশ্বাসীরাই তাঁকে মৃত্যুর হুমকি দিয়েছিল। তিনি জানতেন যে, তিনি হিটলিস্টে আছেন। যেমন ফেসবুকে একজন লিখেছিল, "অভিজিৎ রায় আমেরিকা থাকে।তাই তাকে এখন হত্যা করা সম্ভব না। তবে সে যখন দেশে আসবে তখন তাকে হত্যা করা হবে।” অভিজিৎ হুমকিকে ভয় পাননি। মৃত্যুকে পরোয়া করেনি। সবাইকে ভয় পেলে চলে না। কাউকে না কাউকে এগিয়ে আসতে হয়, নির্জলা সত্যকে যুক্তি দিয়ে তুলে ধরতে হয়। অভিজিৎ সেই কাজটিই করতেন। অভিজিৎ বিশেষ কোন ধর্ম নয়, সকল ধর্মের বিরুদ্ধে যৌক্তিক কথা লিখতেন, বলতেন। অভিজিৎ কাল্পনিক ঈশ্বরকে বাদ দিয়ে বিজ্ঞানের কথা বলতেন। বলতেন, শূন্য থেকে মহাবিশ্ব সৃষ্টির কথা। আদম-হাওয়ার অযৌক্তিক ও কাল্পনিক গল্পকে বাদ দিয়ে তিনি বিবর্তনের কথা বলতেন। তিনি ধর্মপ্রবর্তকদের তৈরিকৃত কাল্পনিক ঈশ্বরের বিরুদ্ধে, ধর্মের বিরুদ্ধে গিয়েছিলেন, যুদ্ধ নয়, যৌক্তিক ভাবে আলোচনা করতেন। কিন্তু বিশ্বাসীরারা তা মানবে কেন? বিশ্বাসীদের বইতে লেখা আছে……

অভিজিৎ তলোয়ার বা চাপাতি নয়, কলমকে হাতে তুলে নিয়েছিলেন, তিনি ধারালো যুক্তি দিতেন, বিজ্ঞানের কথা লিখতেন, তিনি ধর্মবিশ্বাসের ভাইরাসের কথা বলতেন, তিনি মানুষকে বিশ্বাসের ভাইরাস থেকে মুক্ত করতে চেয়েছিলেন। বিশ্বাসীরা তার যুক্তিকে মেনে নিতে পারেনি, তাদের কলম দূর্বল কিন্তু তাদের তলোয়ার আছে, সে তলোয়ারে আগুনের মতো ধার আছে, তাই তারা অভিজিতের উপর চাপাতি চালিয়েছে, যেমন চালিয়েছিল হুমায়ুন আজাদ, রাজীব হায়দারের উপর। এই বিশ্বাসীরা রোগগ্রস্ত। এরা “দ্যা ওয়াকিং ডেড” সিরিজের সেই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগাক্রান্ত মানুষগুলোর মতো। "ওয়াকিং ডেড" সিরিজের আক্রান্ত মানুষগুলোর মস্তিষ্কের নিউরন ভাইরাসে আক্রান্ত। এই ধর্ম বিশ্বাসীদের মস্তিষ্কের নিউরনও ধর্ম নামক ভাইরাসে আক্রান্ত। এরা জীবিত থেকেও মৃত। এই ধর্ম ভাইরাসে আক্রান্ত জীবন্মৃত মানুষগুলো রক্ত ঝরাতে পছন্দ করে যেমনটা করতো "ওয়াকিং ডেড” সিরিজের সেই রোগগ্রস্ত মানুষগুলো।

আমাদের দেশকে নিয়ে অনেকেকেই গর্ব বোধ করতে দেখেছি। তারা বলেন, এই দেশের বেশীরভাগ জনসংখ্যা বয়সে তরুণ যা নাকি অন্যান্য দেশের তুলনায় ঈর্ষণীয়। কিন্তু হায়, আমি দেখি এই তরুণ জনসংখ্যার বেশিরভাগই বিশ্বাসের ভাইরাসে আক্রান্ত, জীবন্মৃত। এরা হুমায়ুন আজাদ, রাজীব হায়দারকে হত্যা করেছে, আসিফ মহিউদ্দিনকে হত্যা করতে চেয়েছে। এরা আবারো হত্যা করলো অভিজিৎ রায়কে। এই হত্যা তাদেরকে কাঁদায় না, তারা আনন্দে উল্লাস করে, কারণ তারা ভাইরাসের প্রতিষেধক ধ্বংস করতে পেরেছে, তারা যুগ যুগ ধরে ধর্ম ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারবে। তাঁদের ধর্ম ভাইরাস বেঁচে গিয়েছে, তাদের ধর্ম বেঁচে গিয়েছে। এদের দিয়েই আমাদের বুদ্ধিজীবীরা দেশের উন্নয়নের স্বপ্ন দেখছেন!

ধর্মের তলোয়ার, চাপাতি থেকে বাংলাদেশ এখন আর নিরাপদ নয়। রাজনীতি, রাষ্ট্রনীতি, ধর্মনীতি সব এখন মিলেমিশে একাকার। ক্ষমতাসীন সরকার ও তার দল এখন ধর্মীয় দলের সাথে আপোষ করে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে চায়, মদিনা সনদ অনুযায়ী দেশ চালাতে চায়, বিরোধীদলও ধর্মীয় দলকে নিয়েই ক্ষমতায় যেতে চায়। সুবিধাবাদীরা ধর্মের সাথে এক হয়ে মিশে থাকে, বুদ্ধিজীবীরা ধর্মকে ঘাঁটাতে চায় না।

এই হল আমার প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশ। আমার প্রিয় জন্মভূমির ভবিষ্যৎ নিকষ কালো অন্ধকার। এ দেশে কোন মুক্তচিন্তার মানুষ টিকে থাকতে পারবে না। এই মৃত্যু উপত্যকাই এখন আমার দেশ। এখানকার সবকিছু নষ্টদের অধিকারে চলে গিয়েছে।

তারপরেও সত্য ও যুক্তির জয় একদিন হবেই হবে। অভিজিৎ রায় অযৌক্তিক ধর্মবিশ্বাসের ভাইরাস নির্মূল করার যে অভিযান শুরু করেছিলেন, আমরা তাঁকে ভুলে যাবো না, আমরা মুক্তমনারা সে অভিযান অব্যাহত রাখবো। অভিজিৎ রায়ের স্বপ্নই হোক আমাদের আগামী দিনের শপথ। কারণ অভিজিৎই বলে গিয়েছেন,

"যারা ভাবে বিনা রক্তে বিজয় অর্জিত হয়ে যাবে তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন। ধর্মান্ধতা, মৌলবাদের মত জিনিস নিয়ে যখন থেকে আমরা লেখা শুরু করেছি, জেনেছি জীবন হাতে নিয়েই লেখালিখি করছি। জামাত শিবির, রাজাকারেরা নির্বিষ ঢোরা সাপ না, তা একাত্তরেই আমরা জেনেছিলাম। আশি নব্বইয়ের দশকে শিবিরের রগ কাটার বিবরণ আমি কম পড়িনি। আমার কাছের বন্ধুবান্ধবেরাই কম আহত হয় নাই।থাবা বাবার মর্মান্তিক খবরে আমি ক্ষুব্ধ, ক্রুদ্ধ, উন্মত্ত, কিন্তু বিশ্বাস করুন, এক ফোঁটা বিচলিত নই। জামাত শিবির আর সাইদী মাইদী কদু বদু যদু মোল্লাদের সময় যে শেষ এ থেকে খুব ভাল করেই আমি বুঝতে পারছি। এরা সব সময়ই মরার আগে শেষ কামড় দিতে চেষ্টা করে। ৭১ এ বিজয় দিবসের দুই দিন আগে কারা আর কেন বুদ্ধিজীবী হত্যায় মেতে উঠেছিল শকুনের দল, মনে আছে? মনে আছে স্বৈরাচারের পতনের ঠিক আগে কি ভাবে প্রাণ দিতে হয়েছিল ডাক্তার মিলনকে? এগুলো আলামত। তাদের অন্তিম সময় সমাগত। পিপিলিকার পাখা ওঠে মরিবার তরে!বিজয় আমাদের অবশ্যাম্ভাবী।
(এই স্ট্যাটাস থাবা বাবারপ্রতি ক্ষুদ্র শ্রদ্ধার নিদর্শন হিসেবে রাখলাম) "

এভাবেই বিজ্ঞান ও যুক্তি এগিয়ে যাবে, সাথে সাথে এগিয়ে যাবে সভ্যতা, আমরা ছড়িয়ে পড়বো পৃথিবী ছাড়িয়ে দূর-দূরান্তরে নক্ষত্রলোকে।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×