আসন্ন বিশ্বকাপ নিয়ে উন্মাদনা কোন পর্যায়ে পৌছেছে তা টিকেট ক্রেতাদের আগ্রহ থেকে ভালই জানা গেল। আমি নিজ চোখে দেখেছি টানা চারদিন লাইনে থেকেও টিকেট পায়নি এমন ক্রিকেট প্রেমীও আছে। আমি নিজে ৩০ ঘন্টা লাইনে থেকে যখন বুঝতে পারলাম টিকেট আর পাওয়া হলো না তখন লাইন ছেড়ে আসতে বাধ্য হয়েছি।
বিশ্বকাপ যখন শুরু হবে তখন বোর মৌসুমও শুরু হবে। সাধারণত এই সময়টিতে দেশে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ চাহিদা থাকে। কৃষি কাজে বিদ্যুৎ সরবরাহের কারণে গত বছর কখনো কখনো প্রতি ৩০ মিনিট পরপর টানা দুঘণ্টা করেও লোড শেডিং দেয়া হয়েছে। এ বছর বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে এমন কোন উন্নতি হয়নি যে আমরা আশা করতে পারি অবস্থা গতবারের থেকে অনেক ভাল হয়ে যাবে। এখন প্রশ্ন হলো যে লোকটি এত কষ্ট করেও টিকেট পেল না সে যদি লোডশেডিংয়ের কারণে টিভিতে প্রিয় দলের খেলা দেখতে না পারে তার মধ্যে কি প্রতিক্রিয়া হতে পারে? সে নিশ্চয় ঘরের মধ্যে সুবোধ বালকের মতো বসে থাকবে না? আমি দিব্যচোখে দেখতে পাচ্ছি বিশ্বকাপ চলাকালীন সময়ে সরকারের সামনে বিশাল একটি চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। যদি এখনই এই পরিস্তিতি মোকাবেলা করার জন্য সরকার পর্যাপ্ত প্রস্তুতি না নেয় তাহলে সরকার সেই পরিস্থিতিকে কোন ভাবেই মোকাবেলা করতে পারবে না। যদিও আমাদের সরকার কোন সমস্যায় পড়ার আগে সমস্যা থেকে বাঁচার আগাম প্রস্তুতির কথা ভাবে না। যখন সমস্যা থেকে উত্তরণের উপায় খোঁজে ততক্ষণে ক্ষতি যা হওয়ার হয়ে যায়। বিশ্বকাপ চলাকালীন সময়ে লোডশেডিং এর কারণে যদি জনরোষ ছড়িয়ে পড়ে তখন কিন্তু দেশ বিদেশে আমার মানইজ্জত বলে আর কিছু থাকবে না।
আমার মনে হয় সরকার যদি আগাম প্রস্তুতি গ্রহন করে তবে এই সমস্যার সমাধান খুবই সহজসাধ্য একটি ব্যপার। আমি আগাম প্রস্তুতির একটি নমুনা দিলাম।
প্রথমে দেখে নেয়া যাক বাংলাদেশের খেলাগুলোর সময় সূচী।
19 Sat- India v Bangladesh
25 Fri- Bangladesh v Ireland
04 Fri- Bangladesh v West Indies
1 Fri- Bangladesh v England
14 Mon- Bangladesh v Netherlands
19 Sat- Bangladesh v South Africa
একটি ব্যপার লক্ষ করুন। বাংলাদেশ খুবই সৌভাগ্যবান যে আমাদের গ্রুপ পর্যায়ের একটি বাদে সবগুলো খেলা পড়েছে সরকারী ছুটির দিনে। এর মধ্যে তিনটি খেলা আবার ডে নাইট। আর ঠিক এই জিনিসটাকে সরকার যদি বুদ্ধিমত্তার সাথে কাজে লাগাতে পারে তবে আমি মনে করি অন্তত বাংলাদেশের খেলাগুলো আমাদের দেশের মানুষ নির্বিঘ্নে দেখতে পারবে। সেই সাথে সরকারও সম্ভাব্য জনরোষ থেকে রক্ষা পেতে পারে। আর এর জন্য সরকারকে যা করতে হবে যেদিন বাংলাদেশের খেলা থাকবে সেদিন সরকারীভাবে দেশে ছুটি ঘোষনা করা। গ্রুপ পর্যায়ের খেলায় এমনিতে একদিন বাদে প্রতিদিন সরকারী ছুটি থাকবে। এখানে সরকারকে যা করতে হবে তা হলো বাধ্যতামূলক ভাবে সকল বেসরকারী অফিসকেও ছুটির আওতায় আনতে হবে। সেই সাথে সকল মার্কেট বন্ধ ঘোষনা করতে হবে। যেদিন ডে নাইট খেলা হবে সেদিন দুপুর ১২.৩০ মিঃ পর্যন্ত অফিস ও মার্কেট চলতে পারে। এতে করে যেমন কর্মজীবী মানুষগুলো খেলা দেখার সুযোগ পাবে সেই সাথে লোডশেডিং এর মাত্রাও সহনীয় পর্যায়ে থাকবে। সরকারও সাধারণ মানুষের থেকে বাহবা পাবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো সরকার তা করবে কি?
আমি জানি আমার এই পরামর্শটি কোনদিন সরকারের উর্ধতন মহলে পৌছে দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব না। যদি সম্ভবও হয় তারা আমার মতো একজন সাধারণ ''পাবলিকের'' কথা শুনবে কেন?
আমি বিশ্বাস করি এই ব্লগে শুধু আমার মতো সাধারণ ব্লগাররাই আসে না। অনেক সাংবাদিক, মিডিয়ার লোকজন, সরকারের উর্ধতন মহলের লোকজন অবশ্যই আসেন। সরকারের গোয়েন্দা বিভাগের লোকজনও যে ব্লগটির উপর নজরদারি করে না এ আমি বিশ্বাস করি না। মোট কথা আমার এই কথা গুলো সরকারের উর্ধতন মহলে পৌছে দেয়ার মতো অনেকেই এই ব্লগে আসেন। সুতরাং তাদের কাছে সবিনয় আবেদন, আপনারা সরকারের উর্ধতন মহলকে একজন সাধারণ ''পাবলিকের'' পরার্মশটি যদি পৌছে দেন তবে হয়তো ক্রিকেট প্রেমীদের অনেক উপকার হবে। সরকারও সম্ভাব্য বিপর্যয় থেকে রক্ষা তো পাবেই সাথে কিছু বাহবাও পাবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:২৫