আপনাকে সচেতন করতে আমি এই লেখাটি মাধ্যমে আপ্নাকে জানাতে যে, কি উপায়ে কোরবানীর হাটের জন্য গরু মোটাতাজা করন করা হয় ! আপনি হয়তো বলতে পারেন গরু মোটাতাজা করন পদ্ধতি প্রয়োগ করলে সমস্যা কোথায় ? আমি বলবো অবশ্যই সমস্যা রয়েছে।
সাধারনত প্রাকৃতিকভাবে একটি গরু মোটাতাজা ও বলিষ্ঠ্য হলে সেই গরুটির মাংস খেতে কোন বাঁধা নেই । কিন্তু যদি কৃত্রিম উপায়ে গরু মোটা তাজা করা হয়ে থাকে এবং সেটি যদি নিয়ম না মেনে করা হয় তবে সেই গরুর মাংস আপ্নার জন্য বয়ে আনতে পারে , ব্রন / নিদ্রাহীনতা / মাথাঘোরা / ওজন বৃদ্ধি পাওয়া / যে কোন ক্ষত দেড়িতে প্রশমন / সাময়িক উত্তেজনা / উচ্চ রক্তচাপ/ইনফেশনের সম্ভাবনা বেড়ে যাওয়া / ঝাপসা দৃষ্টি /স্মৃতিভ্রষ্ট / অস্থিরতা / মাথা ব্যাথা / পেপ্টিক আলসার / প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া / মাথা ঘোরা / বিরক্ত বোধ সৃস্টি হওয়া / গর্ববর্তী মায়েদের বিকলাঙ্গ সন্তান ।
বলতে পারেন এই রোগ গুলো কেন হবে বা হওয়ার যুক্তিটাই বা কি ?
সাধারনত নিয়মের বাইরে গরু মোটাতাজা করনে ব্যবহার করা হয় ডেক্সামেথাসন নামক এক ধরনের স্টেরয়েড , যা মানব দেহের জন্য মাত্রাতিরিক্ত গ্রহনের ফলে উপরের সমস্যাগুলো দেখা দেয় ।
আসুন জেনে নেই ডেক্সামেথাসন আসলে কি ?
ডেক্সামেথাসন কোরটিকোস্টেরয়েড গ্রুপের একটি সিনথেটিক হরমোন। এটি প্রাকৃতিক হরমোনের চেয়ে প্রায় বিশগুণ শক্তিশালী। ফলে স্বল্পমাত্রায় ব্যবহার বেশ কার্যকরী। সাধারনত সুযোগ সন্ধানী গরু ব্যবসায়ীরা তাদের গরুকে দ্রুত মোটাতাজা করনের উদ্দেশ্যে এই ওষুধটি গরুর উপর প্রয়োগ করে , ফলে গবাদি পশুর কিডনি, লিভার ও শরীরে অতিরিক্ত পানি জমে এবং পশুটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।
ওষধটিকে গরু ব্যবসায়ীরা পাম্প বড়ি বলে থাকে। ফার্মেসীতে খুব সহজেই পাওয়া যাচ্ছে এসব নিষিদ্ধ ভয়ানক মেডিসিন। যা একটি গরুকে তিন বেলাই খাবারের সাথে গুড়া করে দেয়া হয় । এই ধরনের পশুর মাংশ খেলে গর্ববর্তী মায়েদের গর্বের সন্তানের উপরও মারাত্মক প্রভাব পরবে। এতে জম্ন নেয়া সন্তান বিকলঙ্গও হতে পারে।
অনেকে মনে করেন গরু মোটাতাজাকরনে ডেক্সামেথাসনের কোন ভূমিকা নেই তবে মোটাতাজাকরন কালীন সময়ে মূলত যেসব গরু দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে অর্থাৎ সীমান্তের ওপার হতে আসে সেসব গরুতে কিছু জরুরী অবস্থার সৃষ্টি হয় বা হতে পারে যার কারনে ডেক্সামেথাসন প্রয়োগ করতে হয় , কিন্তু আমাদের দেশে সাধারনত গরুকে মোটা তাজা করার উদ্দ্যেশেই ডেক্সামেথাসন প্রয়োগ করা হয় ।
ডেক্সামেথাসন একটি প্রেসক্রিপশন ড্রাগ অর্থাৎ চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ব্যতীত এর ক্রয়বিক্রয় ও ব্যবহার করা উচিত নয়। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, বাংলাদেশের ফার্মেসিগুলোতে গিয়ে যে কেউ এটি কিনতে পারেন। ফলে অবৈধ উপায়েও ডেক্সামেথাসন ব্যবহৃত হচ্ছে।
এখন হয়তো বলতে পারেন ডেক্সামেথাসন প্রয়োগের কারনে গরুর মাংস খাওয়া বন্ধ করে দেবো ? বা কোরবানী দেয়া বন্ধ করে দিবো ?
আমি বলবো না , তা করতে হবে না । আপ্নি যদি স্টরয়েড প্রয়োগ করা গরু চিনতে পারেন তবে সেই গরুটি কোরবানী বা খাওয়ার জন্য আপ্নি কিনবেন না । তাহলেই আপ্নি ও আপ্নার পরিবার ঝুঁকিমুক্ত থাকতে পারবেন ।
বলতে পারেন কোন কৌশলে স্টেরয়েড প্রয়োগ করা গরু চিনতে পারবো ?
কয়েকটি লক্ষন দেখলেই আপ্নি বুঝতে পারবেন যে গরুটি স্টেরয়েড প্রয়োগ করা ,
☆ এই ধরনের গরু ফার্মের মুরগির মতো কম নরাচরা করে , এক যায়গায় শান্তভাবে বসে থাকে , কিন্তু এর দৃশ্যমান শারীরিক কাঠামোর সাথে এর শান্ত স্বভাব বেমানান মনে হবে ।
☆ সাধারনত প্রাকৃতিকভাবে যে সকল গরু স্বাস্থ্যবান হয়ে থাকে সেগুলো খুব দুস্টু ও বেপরোয়া গোছের হয় । এবং সবসময় গুতা গুতি ও দৌড়ঝাপ করে থাকে ।
☆ একটা জিনিস লক্ষ্য করে দেখবেন অনেক সময় বয়স্ক মানুষের শরীরে পানি আসে , তখন হাত পা ফুলে যায় , ফুলে যাওয়া হাত পায়ে আঙুল দিয়ে টিপ দিলে বা চেপে ধরে ছেড়ে দিলে সেই স্থানটি পুনরায় আগের অবস্থানে ফিরে আসতে সময় নেয় এবং স্থানটি দির্ঘ সময় দেবে থাকে । স্টেরয়েড প্রয়োগ করা গরুর বেলাতেও ঠিক এ্কই প্রক্রিয়ায় চেপে ধরলে স্থানটি দেবে থাকে । মেডিকেল এর ভাষায় একে ইডিমা (Edema) বলে
☆ স্টেরয়েড প্রয়োগ করা গরুর রানে প্রচুর মাংস থাকে। স্বাভাবিকের চাইতে এর রান অনেক মোটা দেখা যায় ।
লেখাটি আপ্নাদের উপকারে আসবে এবং আপ্নি কোরবানীর গরু শনাক্ত করে একটি সঠিক নিরাপদ গরু কিনতে পারবেন । ঈদ হোক সকলের জন্য আনন্দের সকলের জন্য নিরাপদ । নিজে সচেতন থাকুন পরিবারের সদস্যদের নিরাপদে রাখুন ।
তথ্যসুত্রঃ
ব্লগার শুভকবি
উইকিপিডিয়া
ড্রাগ্সডটকম
ইন্টার নেট
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ১:৩৩