somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মস্কোর ঘন্টা

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০০৮ দুপুর ১:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মস্কোর ক্রেমলিনের ইভান গ্রেট বেল টাওয়াররে অনতিদুরে দেখা মিলল সপ্তম আশ্চর্যর এক আশ্চর্য যাকে আমরা মস্কোর ঘন্টা বলে জানি আদপে তা ‘জার বেল’(Tsar Bell) নামে পরিচিত।
দৈত্যাকৃতি ঘন্টা আর বিশাল এক ক্যানন বা কামান সেটা 'জার কামান' নামে পরিচিত যা এযাবৎকালের বড় কামানের একটা।
আমি প্রথমে যার পর নাই হতাশ হয়েছিলাম এ দুটো শিল্পকর্ম দেখে।
আমি ভেবেছিলাম আমার ধারনার থেকে বিশাল ঘন্টা ঝুলে আছে ততোধিক কারুকার্য খচিত গ্রেট বেল টাওয়ারের বারান্দায়। চোখ তুলে ঘন্টার বিশালতা আর কারুকার্য দেখে বিস্ময়ে হা হয়ে যাব- সপ্তাশ্চর্য বলে কথা! বিমুগ্ধ দৃষ্টিতে কাটিয়ে দেব ঘন্টার পর ঘন্টা- অপেক্ষা করব জলদগম্ভীর কন্ঠে তার ধ্বনি! বুকে কাপন ধরাবে সে ঘন্টার মুর্ছনা! গীর্জা ঠিকই আছে কল্পনার সাথে মেলে কিছুটা, কিন্তু একি-ঘন্টার এ হাল কেন?
একটা গ্রানাইডের বেদীর উপর কাত হয়ে দাড়িয়ে আছে বিশ্বের এক অন্যতম বিস্ময়। ভাঙ্গা ঘন্টা-এটা বাজবেনা কখনো।পরে জেনেছি এটা বাজেওনি কখনো! অর্থ আর প্রতিপত্তির কি নিদারুন অপচয়!
বিশ্বের এক বৃহত্তম ঘন্টা যার থেকে একবারো ধ্বনিত হয়নি কোন মূর্ছনা আর বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম কামান,যেটা থেকে একটা গোলাও বর্ষিত হয়নি।লেনিনের সমাধি মন্দির দেখে যতটা বিমোহিত হয়েছিলাম ঠিক ততটাই হতাশ হলাম মাথামোটা জারদের এমন অসহ্য কর্মযজ্ঞ দেখে।
এমন দুটো মহান(!) শিল্পকর্ম মানব জাতির কাজে আকাজে কোনকিছুতেই আসেনি। তবে ঘন্টা বাজা না বাজার উপর মানবজাতির কোন কল্যান অকল্যানের ব্যাপার জড়িত থাকার কথা নয় কিন্তু কামান থেকে যে একটা গোলাও বের হয়নি এটা নিঃসন্দেহে ভালো খবর।
জার বেলের ওজন মতভেদে ২০০ থেকে ২১৬ টন। উচ্চতা নিয়েও মতভেদ আছে- উচ্চতা ৬ থেকে ৬.১৪ মিটার আর ব্যাসার্ধ ৬.৬ মিটার।
জার পিটার দ্যা গ্রেটের ভাতিজি সম্রাজ্ঞী আন্নার অনুমতিক্রমে তৈরি করা হয় জার বেল।
রাজকুমারী আন্না প্রথমে ফ্রান্সের রাজকীয় কারিগর দিয়ে ঘন্টাটি তৈরি
করতে চেয়েছিলেন কিন্তু জার্মানীর আদালত এটাকে অসম্ভব কর্ম বলে প্রত্যাখান করার ফলে,আন্না কাজটি করার দায়িত্ব দেন তৎকালীন বিখ্যাত রুশ কারিগর ইভান মতরিন আর ছেলে মিখাইল মতরিনকে।
প্রথমবার দুবছর কাজ করার পরে এক রহস্যময় অগ্নিকান্ডের ফলে ঘন্টাটি নষ্ট হয়ে যায়,যার শোকে মারা যায় মুল কারিগর ইভান মতরিন।(মতৈক্য বিদ্যমান)
পরবর্তীতে মিখাইল মতরিন পুরো দায়িত্ব নিজের কাধে তুলে নেয়। দুইশত নামিদামী কারিগরের এক বিশাল বহর নিয়ে ১৭৩৫ থেকে ৩৭ সালে এই বিশাল কর্মযজ্জ্ঞটি শেষ করে। কিন্তু জনশ্রুতি আছে,ঘন্টাটি তৈরির পরে মাটির গর্তে যখন ঠান্ডা করা হচ্ছিল তখন আবার ক্রেমলিনের ফের ভয়ঙ্কর এক অগ্নিকান্ডে ঘন্টা’টির ক্ষতিসাধন হয়। রাজকীয় কর্মচারিরা উত্তপ্ত সেই ঘন্টাখানা অতুদ্রুত শীতল করেত গিয়ে সবচে বড় ক্ষতিটা করে ফেলে।
অন্য এক সুত্র মতে,আচমকা মুষল ধারায় বৃষ্টিপাতের ফলে উত্তপ্ত ঘন্টাটি অতিদ্রুত ঠান্ডা (overheating and uneven cooling )হওয়ার ফলে ভেঙ্গে যায়। ঘন্টা থেকে ১১.২ টনের একটা খন্ড আলাদা হয়ে যায়।
অন্য আরেক সুত্র থেকে জানা যায় সুইডিসদের সাথে এক ভয়ঙ্কর যুদ্ধে জয়ী হয়ে পিটার দ্যা গ্রেট যখন মস্কোতে ফিরে আসেন তখন তিনি আদেশ করেন তার বিজয় সেলিব্রেট করতে মস্কোর সব ঘন্টা বাজাতে।কিন্তু সারা মস্কের সব ঘন্টা যখন টুংটাং স্বরে বাজছিল তখন নিশ্চুপ ছিল শুধু জার বেল। পিটার দ্যা গ্রেটের গার্ড রেজিমেন্টের সব সৈন্য মিলে বহু চেস্টা করেও সেই ঘন্টা থেকে একটা ঢং শব্দ বের করেত পারেনি!
জার বলে কথা-তখন পিটারের সব গোস্যা গিয়ে পড়ল সেই ঘন্টার্ উপর! তার ধারনা ছিল তার এই মহান বিজয় উৎসবের বিরোধীতা করছে এই ঘন্টা-অতএব সেটাকে ভেঙ্গে নিক্ষেপ কর গর্তে।
সুত্রমতে ‘জার বেল’ ঠিক একশত বছর ১৮৩৫ সাল পর্যন্ত অনাদর অবহেলায় পড়ে ছিল সেই গর্তে। ফরাসী স্থপতি অগুস্তে মন্তফ্রেন্দ সেটাকে উত্তোলোন করে গ্রানাইড ভিত্তিস্থম্ভে স্থাপন করেন-আর ভাঙ্গা সেই টুকরোটিকে রেখে দেন তার পাশেই।
এর আগে একই নামে আরো দুটো ঘন্টা তৈরি করা হয়েছিল। প্রথমমটা তৈরি হয় ১৬৫৫ সালে যার ওজন ছিল ১৩০টন। সেটাও কখোনো বাজেনি চার্চের বিরোধীতার কারনে আর পরেরটা তৈরি হয় ১৭০১ সালে সেটারো হাল হয়েছিল ওমনি।
(মাঝের ছবিটি ১৯৯২-৯৩ সালে পোলারয়েড ক্যামেরায় তোলা)
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০০৮ দুপুর ১:৪৩
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×