somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাম্প্রদায়িকতা, ভাবনার সংকীর্ণতা ও বৈচিত্র

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ ভোর ৬:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঘটনাঃ মোঃ মনির হোসেন নামের একটা ছেলে শুক্রবার রাতে ছিন্তাইকারীদের ছুরিকাঘাতে নিহত হয়। নিহত ছেলেটা কোন এক গার্মেটসে কাজ করতো। তার বাড়ি মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং থানার দীঘলি গ্রামে। পরদিন পত্রিকার নিউজ-"ছুরিকাঘাতে পোষাক শ্রমিক নিহত"।
ফলাফলঃ গার্মেন্টস বন্ধ, পোশাক শ্রমিকদের দ্বারা গার্মেন্টস ফ্যাক্টিরি ও রাস্তায় কিছু গাড়ি আর দোকানে ভাংচুর। রাস্তা বন্ধ। পুলিশেষ লাঠিচার্চ। কিছু শ্রমিক গ্রেফতার।
------------এটা কিন্তু একটা সাম্প্রদায়িক ঘটনার উদাহরণ। ঐ ছেলেটা "পোষাক শ্রমিক" সম্প্রদায়ের বা তাকে ঐ সম্প্রদায়ের লোক হিসেবে পরিচিত করানো হয়েছে।
মজার বিষয়- নিহত ছেলেটাকে আরো অনেক সম্প্রদায়ে পরিচিত করা যায়-
যেমনঃ- ছেলেটাঃ
*এশিয়
*ভারতিয় উপমহাদেশীয়
*বাংলাদেশী
*বাঙ্গালী
*বিক্রম্পুইরা
*মুসলমান
*সুন্নি
*হানাফী
*পুরুষ
*অশিক্ষিত
*ডানহাতি
*দরিদ্র
*নিট গার্মেন্টস শ্রমিক

আচ্ছা, এইটা বাদ দেই। এরকম করে আরো অনেক সম্প্রদায়/দল/গোষ্টিতে ফেলা যাবে নিহত মনির কে।

ধরি, মুন্সিগঞ্জের কতিপয় লোক "স্বাধীন বিক্রমপুর" এর দাবীতে আন্দোলন করছে। সরকার তাদের দমন করতে চেষ্টা করায় তারা সহিংস আন্দোলন (!?) শুরু করছে। তারা এখানে সেখানে হামলা চালাচ্ছে। তারাও নানা দল উপদলে বিভক্ত। একদিন কিছু দুর্বৃত্তের সশস্ত্র হামলায় "মোখলেস" নামে একজন নিহত হল। কিন্তু তাদের সংগঠনের প্রচলিত নাম "এন্টি জেলা গোষ্ঠি"। সে জেলা বিরোধী হলেও সবসময় শুধু বিক্রমপুর তথা মুন্সিগঞ্জেরই সমালোচনা করতো ও কুতসিত গালিগালাজ করতো বিক্রমপুরবাসীদের। মোখলেস চাইতো দেশে আলাদা আলাদা জেলা থাকবে না। পুরা বাংলাদেশ একটা মাত্র জেলা হবে। "জেলা পদ্ধতি"র বিরোধিতা করে পত্রপত্রিকায় ও অনলাইনে লেখালেখি করা ও বিক্রমপুর/বিক্রম্পুরবাসী নিয়ে আজে বাজে কটুক্তি করাই ছিল মোখলেসের কাজ। তাই প্রায় সবার ধারণা এটা নিশ্চই কোন বিক্রমপুইরার কাজ। হত্যাকান্ডের বেশ খানিক সময় পর টুইটারে "বিক্রমপুইরা পোলা ৮০ টাকা তোলা" নামের একটি গ্রুপ মোখলেস হত্যার দায় স্বীকার করে টুইট করে। এরাও "স্বাধীন বিক্রমপুর" আন্দোলন করে ।

"এন্টি বিক্রমপুর গোষ্ঠি"র প্রতিক্রিয়াঃ বিক্রম্পুইরা খা*কির পো*রা খারাপ। ওগো মায়রে বাপ!!! বিক্রমপুইরাগো সব এদেশ থিকা খেদানো হোক।

ঢাকায় স্থায়ী বিক্রমপুরের কিছু লোকের প্রতিক্রিয়াঃ আমি বিক্রমপুরে আর যামু না। আমি ঢাকায় সেটল করে ভালো করেছি। বিক্রমপুরে জন্ম নেয়ায় আমি লজ্জিত।

টাইপ-১ বিক্রমপুর বাসীর প্রতিক্রিয়াঃ মোখলেস হত্যার বিচার হওয়া উচিত। কোন হত্যাকান্ডই সমর্থন যোগ্য না। বাট মোখলেসের উচিত হয় নাই বিক্রমপুর নিয়া আজেবাজে কথা বলা।

টাইপ-২ বিক্রমপুরবাসীর প্রতিক্রিয়াঃ জানোয়ার হত্যার আবার বিচার কী?! মোখলেস বেশি বাইড়া গেছিল তাই শাস্তি পাইছে। মোখলেসের চ্যালাপ্যালাদেরও সাইজ করা উচিত।

টাইপ-৩ বিক্রমপুরবাসীর প্রতিক্রিয়াঃ স্বাধীন বিক্রমপুর একটা রঙ কনসেপ্ট। এটা সকল বিক্রমপুরবাসীর মতামত নয়। যারা এটা করেছে তারা প্রকৃত বিক্রমপুরী না।

টাইপ-৪ বিক্রমপুরবাসীর প্রতিক্রিয়াঃ মোখলেস কেডা?

টাইপ-৫ বিক্রমপুরবাসীর প্রতিক্রিয়াঃ মোখলেস ভাইয়ের চেতনা আমরা বৃথা যেতে দিব না। তিনি আঞ্চলিকতা মুক্ত বিশ্বের স্বপ্ন দেখেছেন। কালকা গুলিস্তানে আমরা মোমবাত্তি জ্বালামু।

অন্য জেলাবাসীর টাইপ-১ প্রতিক্রিয়াঃ- বিক্রমপুইরারা মানবতার শত্রু তা আবারো প্রমানিত হল।

মোখলেসের জেলাবাসীর প্রতিক্রিয়াঃ- আর কত? আর কত প্রান গেলে শান্ত হবে বিক্রমপুইরারা?! আমরা এই দেশে জন্ম নিয়ে ভুল করেছি। আমরা পাশের জেলায় চলে যাব।

"এন্টি জেলা গোষ্ঠি"র সমর্থকের প্রতিক্রিয়াঃ এক মোখলেসের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে হাজারো মোখলেস জন্ম নিবে।

নব্য "এন্টি জেলা গোষ্ঠি"র অল্পবয়সী সদস্যের প্রতিক্রিয়াঃ "আমিই মোখলেস"!!!
২১টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×