somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রদর্শনচিন্তা, অহংকার এবং সমাজ ব্যবস্থা।

২১ শে জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৮:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমি মনে করি, কাউকে সহযোগিতা করতে পারাটা, আমার ওপর আল্লাহর রহমত। কারণ আল্লাহ ইচ্ছে করলে অন্য কারো মাধ্যমে কাজটি করাতে পারতেন। এখন আপনি কারো সহযোগিতা করাটাকে যদি নিজের প্রচারের কাজে ব্যবহার করেন তবে সেটা আর আল্লাহর রহমত থাকে না, হয়ে যায় লোক দেখানো কাজে(প্রদর্শন)। এই প্রদর্শন তখন অন্তরে রিয়া(অহংকার)সৃষ্টি করে। অথচ এই সহযোগিতা কতই না রহমত স্বরূপ ছিল।
আজকাল সবকিছুতেই আমরা প্রদর্শনে বিশ্বাসী। দেখা যায়, আপনি একজন বৃদ্ধ রিক্সা চালককে অন্তর থেকেই পাঁচটাকা বেশি দিলেন। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য। এরপর বাসায় এসে ছোট্ট করে ফেবুতে রিক্সা চালক ও আপনার সেলফি সম্বলিত স্ট্যাটাসের মাধ্যমে সবাইকে সেটা জানালে, "চলুন এই কনকনে শীতে রিক্সা চালকদের কে ভাড়া বাড়িয়ে দিই এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করি।" এই স্ট্যাটাসের মাধ্যমে ফেবু ফ্রেন্ডদের আপনার সম্পর্কে একটা ভালো দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হলো। অথচ কাজটি আপনি শুধু অাল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যেই করেছেন এখন সেখানে মানুষও ভাগ বসালো। আর মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি, ফেবু ফ্রেন্ডদের শুভেচ্ছা স্বরুপ কমেন্ট। যেকোন সময়ে আপনার অন্তরে রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। যেটা অাপনাকে শয়তানের কাতারে নিয়ে যেতে পারে। কারণ শয়তানও অাত্মঅহংকারে ভুগেছিল যার ফলশ্রুতি সে আজ শয়তান।
এখনকার দিনে দেখা যায়, শীতবস্ত্র বিতরন, পথশিশুদের জন্য কাজ করা, ব্যপারগুলো অবশ্যই মহত্ব। কিন্তু যেভাবে এইগুলোকে নিয়ে বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যে প্রতিযোগিতা প্রদর্শন করা হয় কিংবা কার আগে কে সেলফি তুলে ফেবু অাপলোড দেয়া নিয়ে প্রতিযোগিতা দেখা যায় তখন এই মহত্ব কাজটিই হয়ে যায় প্রদর্শন তুল্য। যার দরুণ আমরা শয়তানের কাতারে চলে যাই।

আরো বাজে উদাহরণ হচ্ছে নিজের বৌকে প্রদর্শন করানো। অথচ অাল্লাহ তালা বলছেন, ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। (আল- নূর,আয়াত ৩১) যেখানে একজন স্বামী, স্ত্রীকে অন্য পুরুষের লোভাতুর দৃষ্টি থেকে রক্ষা করার কথা সেখানে উল্টোটা হচ্ছে। শুধুমাত্র প্রদর্শন চিন্তা থেকে যে, দেখ হে বন্ধুগণ আমার স্ত্রী কত সুন্দর!(নাউযুবিল্লাহ)

প্রদর্শন চিন্তা ভাবনা এমন পর্যায়ে চলে গেছে, যেখানে একজন মৃত ব্যক্তিও ছাড় পাচ্ছে না। এই লেখাটি যখন লেখা শুরু করি তখন খরচের জন্য দোকানে যাই। সেখানে দেখি দোকানদার ও কয়েকজন মিলে একটি শোকবার্তা লেখার পরিকল্পনা করছে।লেখাটি অনেকটা এমন "হাজী অমুক মারা গেছে তার মৃত্যুতে আমরা সকলে গভীরভাবে শোকাহত। তমুক গ্রুপের সদ্যসবৃন্দ"এখানে নিজেদেরকে প্রদর্শন ছাড়া অার কিছুই নেই। এমন পোষ্টার সমুহ ভার্সিটিতে অহরহ দেখা যায়। "অমুকের বাবার অকাল মৃত্যুে, অমুক মেধাবী ছাত্রের অকাল মৃত্যুে " ব্যপারটা অারও ভয়াবহ। কারণ "অকাল মৃত্যু" বলতে আপনি কি বুঝাচ্ছেন? একজন মানুষ আল্লাহকর্তৃক নির্ধারিত সময়ে মৃত্যুবরণ করে।এক সেকেন্ড এইদিকও না ঐদিকও না। তাহলে অকাল মৃত্যু দ্বারা আপনি কি আল্লাহর বিচারকে অস্বীকার করছেন না?আমাদেরকে কি এই সব ব্যপারে আরও ভাবা বা নিজেদের চিন্তাশক্তিকে ব্যয় উচিত না?

আমাদের চারপাশে আজ শুধু প্রদর্শন, প্রদর্শন ও প্রদর্শন। নিজেকে সবার থেকে আলাদা করতে গিয়ে আমরা হচ্ছে অহংকারী। আমাদের অন্তরে তৈরি হচ্ছে প্রতিযোগি মনভাব ফলে অন্যের ভাল কাজকে উৎসাহ দেয়ার পরিবর্তনে আমাদের ভেতর তৈরি হচ্ছে হিংসা। আমরা হয়ে যাচ্ছি হিংস্র পশুর মতো ফলে নিজেকে হাইলাইট করতে গিয়ে অন্যকে ফেলে দিচ্ছি নর্দমায়, যার উল্টো রিএকশনে আমরাও তাতে পতিত হচ্ছি। ফলে সমাজে তৈরি হচ্ছে বিভেদ, অবিশ্বাস, আত্মকেন্দ্রিকতা। যা ফলে একদিকে দিনদিন জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও অন্যদিকে সমাজ গুলো ভেঙ্গে আমরা নিজেকে একঘরে নিয়ে যাচ্ছি।ভুগছি মানসিক যন্ত্রনায়।
আমাদের প্রত্যককে প্রদর্শন চিন্তা থেকে বের হয়ে আসতে হবে, এতে আমাদের অন্তর হবে অহংকার মুক্ত। যে লোকটি যিনার মতো খারাপ কাজ করেছে, তার কর্মকান্ডের খবর হয়ত তার শুভাকাঙ্খীরা জেনে তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসতে পারে কিন্তু আপনার মনের গভীরে লুকিয়ে থাকা অহংকারের খবর শুধু আপনিই জানেন, পৃথিবীর অার কেউ জানে না। অাপনার শুভাকাঙ্খীরা কখনও জানতেই পারবেনা। অতএব এই রোগের ঔষুধ অাপনি নিজেই। নিজেকেই বের করতে হবে, কোন কোন কাজ অাপনার ভেতরে অহংকারের সৃষ্টি করে, কিভাবে এই অহংকার থেকে নিজেকে মুক্ত রাখবেন? হাদীসে আছে, যার ভেতরে সরিষা দানা পরিমাণ অহংকার থাকবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। আল্লাহর ভয় আমাদের অন্তরকে সকল কলুষিত কাজ থেকে বিরত রাখুক।

আল্লাহর কাছে দোয়া করি, আল্লাহ যেন প্রদর্শন চিন্তা থেকে আমাদের অন্তরকে মুক্ত রাখার তৈফিক দান করেন।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৮:৪৭
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×