somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমি আসলেই বুজতেছি না কিভাবে ভাষা সৈনিকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবো?

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ২:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ মহান একুশে ফেব্রুয়ারি। বাঙালি জাতির কাছেই দিনটির আলাদা একটি অর্থবহ সজ্ঞা আছে।
ছোটবেলায় আমরা অধির আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করতাম দিনটির জন্য। মুলত দুইটি কারণে এক ঐদিন স্কুল বন্ধ থাকত আর দ্বিতীয়ত ঐদিন আমরা সকাল বেলা হিন্দু পাড়ায় যেতাম ফুল চুরি করার জন্য। এই চুরির মধ্যেও একটা প্রতিযোগিতা চলত কে কত সতেজ জবা, গোলাপ ফুল সংগ্রহ করতে পারে? সকাল ভোরে চুরিকৃত ফুল নিয়ে স্কুল ড্রেস পড়ে পাড়ার সব স্কুল পড়ুয়া বন্ধু, বড় ভাই, বড় আপুরা মিলে স্কুলে যেতাম। স্কুলে পিটি হত আগের মতো তার সাথে চলত বিখ্যাত,
অামার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি.... গানটি। এরপর শুরু হত নিরব পদযাত্রা। ও একটা জিনিস বলা হয়নি সেটা হল এই পদযাত্রারায় পায়ে পাদুকা ব্যবহার নিষিদ্ধ ছিল। নগ্ন পায়ে আমরা পুরো এলাকায় চক্র দিয়ে আবার স্কুলে ফিরে শহীদ মিনারে পুষ্পঅর্পন করতাম। আমাদের বন্ধুদের মধ্যে যারা একটু চালাক ছিল তারা হাতের শুকিয়ে যাওয়া ফুলটি পুষ্পবেদীতে ফেলে সতেজ একটা ফুল নিয়ে বাড়ি ফিরত। এই নগ্ন পদযাত্রা কিংবা পুষ্পঅর্পনের ব্যপারগুলো আমাদের কাছে তখন অনেক অর্থবহন করত, আমাদের কাছে ব্যপারটা অন্য রকম , রোমাঞ্চকর ছিল। সারাদিন আমরা পাক বাহিনী আর ভাষা সৈনিক খেলা খেলতাম,, ঢিশুম ঢিশুম বলে একজন কান্তা ওয়ালা বাঁশের লাঠি কে বন্দুক বানিয়ে একজনের দিকে তাক করত। আর আরেকজন আহ আহ,, করে মাটিতে লুটিয়ে পড়তে পড়তে জিহ্বা বের করে চোখ উল্টিয়ে পেলত। এভাবে সারাদিন কাটিয়ে দিতাম। কেউ কেউ কলা গাছ দিয়ে শহীদ মিনার বানাত। সাথে ভাত চালন খেলা চলত। বিকালের দিকে হত জোলাভাতি। আব্বা আম্মারাও মানা করত না বরং উৎসাহের সঙ্গে চাল, ডাল দিত আর পুকুর থেকে আমরাই মাছ ধরতাম। এই সবই চলত সারাদিন।

বড় হলাম। স্কুল কলেজ পার হয়ে এখন ভার্সিটিতে পড়ি। ভার্সিটিতে উঠার পর দেখলাম আরে এতদিন আমরা যেভাবে যেসময়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করছি সেটা ছিল ভুল সময়ে। সঠিক সময় ত রাত বারোটা এক মিনিটে। এবং ঐ সময়ে যদি শ্রদ্ধা নিবেদন না করতে পারেন,তবে আপনার ভাষার প্রতি যে শ্রদ্ধা সেটা আর রইল কই? আপনি ত পাকি, বেজম্মা হয়ে গেলেন? যে যত বড় লিডার সে তত ভাষার প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং তাকেই প্রথমে শ্রদ্ধা অর্পন করতে হবে এবং সারা দেশে তার আগে কেউই অর্পন করতে পারবে না? তার পরে সবাই করতে থাকবে? অঞ্চলে ভেদেও সেই ক্রম বলবৎ থাকবে? হল সভাপতির আগে ভার্সিটির সভাপতি, তার আগে শিক্ষক সমিতি তারও আগে ভিসি কে শ্রদ্ধা জানাতে হবে। তারপর বিরোধীদল, ক্যান্টিনের সভাপতি তার পর দোকানদার সভাপতি তারপরে আসবে আমজনতা। এই ক্রমের ব্যতিক্রম হল ত জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে। হুম আরো ভালো হয় যদি আপনি পুলিশদের কাছ থেকে প্রথম প্রহরে শ্রদ্ধা নিবেদনের অনুমিত নেন এইতে আপনার গুরুত্ব ও মর্যাদা আরোও বেড়ে যাবে। (বিঃদ্রঃ উপরের ক্রমের মাঝে আমি একদল প্রাণীকে অর্ন্তভুক্ত করতে ভুলে গেছি যারা নিজেদের কে সুশীল বলে জাহির করে। আসলে আমি এদেরকে ক্রমে ফেলতে পারিনি কারণ এরা দেখা যায় সকালে সরকার দলের হয়ে চামচামি করে ত বিকালে বিরোধদলের। আমি আসলে ভয়েই এদেরকে এবয়েড করাছি দেখা যাবে এদেরকে কোন একটি দলে অন্তর্ভুক করার পর বিকালে এরা দুই দলে বিভক্ত হয়ে একদল এদের দলভুক্তকে মানহানি বলে আমার বিরুদ্ধে মানববন্ধ করবে ত, অন্য দল আমাকে সমর্থন করে।)

শ্রদ্ধা নিবেদনের আরেক পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়েছে তা হলে মোমবাতি প্রজ্বলন। আপনি যদি কোন ভাবেই মিনারে গিয়ে ফুল দিতে না পারেন তবে বাসার নিচে গ্যারেজে কিংবা কয়েকজন বন্ধুমিলে রাস্তার মাঝে মোববাতি দিয়ে একুশ লিখেও শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারেন। এখানে বাড়তি সুবিধা হল, "নো ঠেলা ঠেলি অনলি জ্বলবে বাতি "
তারপর সুন্দরভাবে একটা সেলফি ফেবুতে আপ করে লিখুন "একুশেলফি"।হয়ে গেল শ্রদ্ধা নিবেদন।
এরপর আরো পদ্ধতি আছে, মোবাইলের রিংটোন চেঞ্জ করে, "আমার ভাইয়ের রক্ত রাঙানো..... " গানটি সেট করুন। মোবাইলের ওয়ালপেপারটা চেঞ্জ করে শহীদ মিনারে ছবি সেট করুন। এতেই আপনার শ্রদ্ধা সবাই বুঝতে পারবে।
আরো পদ্ধতি আছে, সকলে যাতে আরো সহজে ধরতে পারে আপনি একজন নিবেদিত ভাষাপ্রেমিক তার জন্য শহীদ মিনার অংকিত পাঞ্জাবি পড়ে, মুখে "অ ক খ " টেটু এঁকে রিক্সায় ঘুরে বেড়ান।( বিঃদ্রঃ সাথে গার্লফেন্ড থাকা অাবশ্যক, এতে একটা গাম্ভীর্য পূর্ণভাব ভেতরে জেগে উঠবে)

আমি পড়ছি একটা মহা বিপদে, ছোট বেলা থেকেই আমি ডিসিশন নিতে একটু দোটানায় থাকি কোনটা ফেলে কোনটি করবো? এই সকল শ্রদ্ধা নিবেদন দেখে ভাবছি কোন পদ্ধতিতে করলে , সাপও মরবে না লাঠিও ভাঙ্গবে না? অর্থাৎ কোন পদ্ধতিতে করলে আমার টাকাও লাগবে না আবার শ্রদ্ধাও জানানো হবে? আসলে এখনও গত মাসের মেসের খাবারের টাকা টাইও দিতে পারি নি।
আচ্ছা টাকা বিহীন, ক্ষমতা, চামচামি, পাবলিচিটি বিহীন কি শ্রদ্ধা নিবেদন হয়না? ফুল, নগ্ন পদযাত্রা, মোমবাতি, টেটু, পাঞ্জাবী বিহীন কি শ্রদ্ধা হয়না?
এই সব মেকি শ্রদ্ধা জানানো কি খুবই দরকার? কোটি কোটি টাকা খরচ করে কেন হাজার হাজার ফুল নষ্ট করে রাতের অন্ধকারেই কি শ্রদ্ধা জানাতে হবে? কি পাপ করেছিল শহীদেরা যে তাদের জন্য দুই হাত তুলে একটু দোয়া করার লোক আজ এই বাংলায় বিরল প্রজাতিতে পরিনত হয়েছে? এই সব শুভঙ্করের ফাঁকি আর কত দিন? আমরা প্রতিনিয়ত নিজেদেরকে আধুনিক মানুষ বলে পরিচয় দিই , মাজার পূজা , কে ঘৃণা করি অথচ নিজেরাই একটি জড় পদার্থ ,বিশাল বড় খাম্বা সজ্জিত বেদীকে হাজার হাজার ফুল দিয়ে ডুবিয়ে পূজার করে ভাষার চোদ্দগোষ্ঠি উদ্ধার করছি।
এত এত প্রফেসর এদেশে জন্ম গ্রহন করলো আরো বহু জন্মগ্রহনের পথে, এখনো উচ্চশিক্ষার রিসোর্স কে তারা বাংলাতে পরিনত করতে পারল না। একটা মানসম্মত উচ্চশিক্ষার বাংলা বই দিতে পারলো না। এই দুঃখ আপনি কাকে বলবেন? বাচ্চার নাম থেকে শুরু করে দোকান পাট সবকিছু তে, আজ শুধু ইংরেজির ছাপ আর একুশ এলেই জেগে উঠে চেতনার নিম্ন চাপ। বাপরে বাপ।"
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১২:৩৫
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×