গত কয়েক বছর যে শেখ হাছিনাকে দেখেছি তার সাথে বর্তমান শেখ হাছিনার বহুত পার্থক্য। কথা বার্তা ও সিদ্ধান্ত নেয়ার যে ক্ষমতা তিনি পূর্বে প্রয়োগ করেছে তা অতুলনীয়। বিডিআর বিদ্রোহ দমন, গনজাগরণ মঞ্চ নিয়ন্ত্রণ বা পদ্মসেতু দুর্নীতি কিংবা হেফাজতে ইসলাম কে নিয়ন্ত্রণ বা খালেদা জিয়াকে বাড়ি থেকে উৎখাত এবং জেলে প্রেরণে যে পদ্ধতি অবলম্বন করছে সেগুলো যথেষ্ট কৌশলী ছিল। এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গণে জঙ্গি বিরোধী অভিযান এবং রোহিঙ্গা বিষয় ভুমিকা যথেষ্ট প্রশংসার দাবিও রাখে। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল, ১৫৪ জন অনির্বাচিত সংসদ সদস্য নিয়ে ২য় বারের মত সংসদীয় ক্ষমতা ধরে রাখা। সেটা তেও তিনি ভালো ভাবেই উতরে গিয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে কিছু বিষয় সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত যথেষ্ট প্রশ্নবিদ্ধ ও দৃষ্টিকটু। প্রথমত কোটা আন্দোলন কে যেভাবে দমন করেছেন তা সকলের মনে বিরূপ ও এতদিন মানুষ আওয়ামীলীগের অন্য নেতাদের অতটা গন্য না করলেও শেখ হাছিনাকে যথেষ্ট মান্য করত। কিন্তু কোটা নিয়ে এই রাজনৈতিক খেলার কারণে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা যথেষ্ট কমেছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী ইচ্ছে করলে এইখানে অারো কৌশলী হতে পারতেন এবং ভালো ভাবেই কোটার ব্যপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন সাথে জনপ্রিয়তাও বাড়ত। যেখানে কোটা ব্যপারে বিশাল একটা জনগোষ্ঠী, বলা যায় দেশের প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষই কোটা সংস্কারের পক্ষে ছিল এবং যারা বিপক্ষে ছিল তাদেরও অতটা জোরালো কোন অবস্থা ছিল না কিংবা থাকলেও তাদের স্বার্থরক্ষা করেও এর সুন্দর সমাধানের বহু পথ খোলা ছিল সেখানে উনার এমন হঠকারি সিদ্ধান্ত কেন তা আজও অনেকের মনে প্রশ্ন। দ্বিতীয়ত নিরাপদ সড়ক অান্দোলন কে কেন দলীয় ভাবে মোকাবেলা করতে হলো তা কোটার চেয়েও বড় ভূল। মানুষের মনে এখন এই ধারনা জন্মেছে, সরকার ইচ্ছে করলেই যেকোন আন্দোলন দমন করতে পারে এবং হেমলেট পড়ে যেকেউই পুলিশের কাজ নিজ হাতে তুলে নিতে পারে এবং সরকার দলীয় ছাত্রসংগঠন সব আন্দোলনের বিপক্ষে এবং তারা যে কাউকে হাতুড়ে পেটা করতে পারে যা মানুষের মনে আইনি শাসনের প্রতি অনাস্থা সৃষ্টি করতেই যথেষ্ট। সরকার বাধ্য করছে, মানুষকে নিজেদের কথাগুলোকে গিলাতে কিন্তু ভুলে যায় জনগন অন্ধ কিংবা বধির নয়। তারাও সুযোগ ফেলে তাদের ক্ষমতা প্রর্দশন করে ঠিকই ছাড়বে। এই বছরের শুরু থেকেই একে একে বের হয়ে আসছে বড় বড় দুর্নীতির থলের বেড়াল গুলো। সবচেয়ে বড় ধান্দাবাজি হচ্ছে,জনতা ব্যাংকের মত টাকার কেলেঙ্কারি হওয়া একটা ব্যাংককে সরকারের বাজেট থেকে অর্থ সহয়তা। যা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। একই ভাবে এই বছরও তা কন্টিনিউ রয়েছে। কয়লা, স্বর্ন বদল, অবশেষে পাথর চুরি। সরকারের ভাবমুর্তিতে বড় ধরনের আঘাত হেনেছে। তবে শেখ হাছিনা সামান্য নৌমন্ত্রী শাহজাহান খানকে নিয়ন্ত্রন করতে না পারা বিরাট ধরনের দুর্বলতার বহিঃপ্রকাশ। এর মানে শেখ হাছিনা চাইলেও এখন অনেক সিদ্ধান্ত একা নিতে পারে না।সামনে নির্বাচন। এখন দেখার বিষয় সরকার এতে কি কৌশল কিভাবে প্রয়োগ করে করে।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১০:৫১