মোঃ সানোয়ার হোসেন।
বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভয়াবহ রকমের শঙ্কটের মধ্যে দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে। বিগত সরকার গুলোর আমলের চেয়ে বর্তমান সরকারের আমলে প্রশাসন যে পরিমাণ প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে তা আর কখনো হয়নি। বিচার বিভাগও খানিকটা প্রশ্নবিদ্ধ বটে। আরো আছে ১৫৪টা সংসদীয় আসন বিনা ভোটে নির্বাচিত হওয়ার মত ঘটনা। যেটা কিনা কোন রাষ্ট্রে এটাই প্রথম। আছে রজনৈতিক কাঁদা ছোড়াছুড়ি। সরকার দলীয় মন্ত্রী এমপি সহ প্রায় সবাই বিরোধী জোটের দিকে আক্রমনাত্বক বক্তব্য ছুড়ে দিচ্ছে, পক্ষান্তরে বিরোধী জোট নিজেদের অস্তিত্ব সঙ্কটে দিন অতিবাহীত করছে দিনের পর দিন। নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে নির্বাচনের জন্য আন্দোলনে যেন বিরোধী জোট হাপিয়ে উঠেছে। অপর দিকে সরকার একগুঁয়েমিপনা ধরেই সামনের দিকে এগি যাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ক্রমেই বাড়ছে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তাহীনতা। প্রশাসন হয়ে পড়ছে নিয়ন্ত্রনহীন। ভিন্নমতের রাজনৈতিক কর্মি হলেই ধরাও পাকড়াও চলছে নিয়ম না মেনেই। গ্রেপ্তারে দেখানো হচ্ছে ৫৪ ধারার অজুহাত। বেড়েছে সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠন গুলোর অবাধে দোউরাত্ব। লাগাম ছাড়া যেন তারা, খোদ সরকারেরই অনেক মন্ত্রী ছাত্র সংগঠন গুলোর বিরুদ্ধে তুলছে অভিযোগ। এই যখন অবস্থা তখন দেশের সার্বিক উন্নয়ন কি করে সামনের দিকে এগুবে সেটা নিয়ে বিশ্লেষকদের মনে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। একটা সত্য ঘটনা বলি, কিছুদিন আগে গ্রামের বাড়ি গিয়েছিলাম আমার দাদীর দাফনের কাজে। এক পরিচিত ছোট ভাইয়ের সাথে কথা হলো। সে এসএসসি পাশ করে গতবার পলিটেকনিকে ভর্তি হয়েছে সবে মাত্র। বয়স পনেরো কি ষোল হবে। গ্রামের দরিদ্র পরিবারে জন্ম হওয়ায় ঠিকমত পড়ার খরচ পায়না। তাই সামান্য বিলাশিতাও তাদের মানায় না। বয়সন্ধিকাল হওয়াতে মুখে সামান্য গোঁফ দাড়ি গজিয়েছে তার। যেখানে খাতা কেনার পয়সা হয় না সেখানে দাড়ি গোঁফ কামানোর জন্য রেজার কেনা বা সেলুনে গিয়ে সেভ করারর কথা ওরা চিন্তাও করতে পারে না। একদিন সিন্ধ্যায় বাজারে খাতা কেনার জন্য ওরা কয়েকজন মিলে দোকানে যায়। মাঝপথে বিজিবি টহলরত অবস্থায় ওদের সন্দেহমূলকভাবে গ্রেপ্তার করে থানা হাজতে নিয়ে যায়। সারা রাত নাখাইয়েই থানা হাজতে রাখে ওদের। পরের দিন সকালে ওদের সামনেই দুইজন পুলিশের কর্মকর্তা আলাপচারিতা করতে থাকে। একজন বলল, “স্যার ওদের কাছে তো কিছুই নেই, এক কাজ করেন ওদের ব্যাগে প্রেট্রল বোমা রেখে কোর্টে চালান করে দেই।” অন্য পুলিশ কর্মকর্তা বলল, “ না আগেই না, দেখি ওদের কেউ আসে কিনা? আগে ওদের সাথে কথা বলে নেই। তার পর দেখাযাবে কি করা যায়।” আমার সেই পরিচিত ছোট ভাইটির ওদের কথা শুনে হঠাৎ করে মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে গেলো। সে ঐ পুলিশ কর্মকর্তাকে বলল যে “আমার চৌদ্দগুষ্টি আওয়ামীলীগ এর রাজনীতি করে, আর আমাকে ধরেছেন জামাত শিবির সন্দেহে? আমাকে একটা ফোন দেন আমি বাসায় ফোন দেই।” কথাটা বোধহয় ঐ পুলিশ কর্মকর্তার বিশ্বাস হয়েছিলো। তাই তিনি অনেকক্ষণ চিন্তা করে কোর্টে চালান করার আগেই ওর পরিবারের লোকজনকে ডেকে আনে। কিছুটাকার বিনিময়ে তৎক্ষণাৎ ছেড়ে দেয় ওকে। অর্থাৎ ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতি করলে সাত খুন মাফ! এটাই যেন প্রশাসন এখন প্রমাণ করে চলেছে দেশের সর্বত্র। এটাকি প্রশাসনের পক্ষপাতিত্তমূলক আচারণ নয়? সাধারণ জনগণ তাহলে পুলিশকে বন্ধু ভাববে কি করে?
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ১১:৪৫