কবি আপন মাহমুদ-এর লৌকিক প্রস্থানে :: এক পাখি উড্ডয়নের দৃশ্য
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
অনেক রথী মহারথী মারা যান। কখনো কখনো তাদের দেখতে যাই, কখনো যাইনা। আমি তাদের সাথে পরিচিত হবার দুঃখ নিয়ে বেঁচে থাকি আর তারাও আমার সাথে পরিচিত হবার দুঃখ না নিয়েই চলে যান।
আজকের সকালটা একটু একটা মহাজাগতিক দুঃখের। আমার বাসায় কবি সাইয়েদ জামিল আর হিজল জোবায়ের ছিলেন। হিজলের ফোনে সংবাদ এলো আপন মাহমুদ মারা গেছেন স্ট্রোক করে। আমরা বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। জামিল ফোন দিলো কবি জুয়েল মুস্তাফিজকে। আমরা নিশ্চিত হলাম। আমরা নিশ্চিত হলাম আপন মাহমুদের আপন জগৎটা আর আমাদের কাছে রইলো না। আপনের নিজের কাছেও রইলো না। সে এক হলুদ পাখি হয়ে উড়ে গ্যাছে শূন্যতার সবুজ সংকেতের দিকে। যিনি একদিন লিখেছিলেন-
‘‘গোলাপ অথবা চন্দ্রমল্লিকার সঙ্গে মায়ের সম্পর্ক কেমন ছিল
জানি না- তবে কোনো এক শীতসকালে ঘরের পেছনে অকারণে
ফুটে থাকা কিছু ঘাসফুলের সঙ্গে মা আমার আলাপ করে দিয়ে
বলেছিলেন, ‘ জীবনের যত কফ-থুথু আর উড়াল হারানোর
বেদনা আমি জমা রেখেছি এই ঘাসফুলের কাছে, এমনকি প্রসব
বেদনাও’- সেই থেকে যেকোনো নীল ঘাসফুলই আমার মায়ের
প্রতিনিধিত্ব করে- যার আজো কোনো বাজারমূল্য নেই
এখনো শীত আসে পৃথিবীতে, আসে বসন্ত-গোলাপ অথবা
চন্দ্রমল্লিকারাও এখনো আলতা পরে পায়ে- তবু পৃথিবীর যত
খুন, প্রতারণা আর ব্যর্থ-প্রেমের কবিতা নিয়ে আমি সেই
ঘাসফুলের কাছেই যাই
চোখ বন্ধ করে একটু দাঁড়াই...’’
দ্বৈরথ সম্পাদনা করতে গিয়ে তার সাথে যোগাযোগ, লেখা চাইলাম। মাত্র দু’দিন সময় নিয়ে আমাকে দিলেন অসাধারণ দু’টি লেখা, দু’তিন দিন আগে। এই লেখা দু’টোই সম্ভবত তার শেষ লেখা। সেই লেখা দু’টির একটির নাম পাখি। পাখি কবিতার শেষের লাইনগুলো এরকম-
‘‘সাকোঁর এপাড়ে প্রশ্ন নিয়ে পড়ে আছি, উত্তর
প্রত্যাশী- ওপাড়ে কবিতা, পারমিতাদের পাখি
ছড়ালো হাসি…
কে জানে, পাখি খুঁজতে খুঁজতে কোন দিকে যাচ্ছি!’’
আপন মাহমুদ সম্ভবত তার আত্মার সাথে যোগাযোগ করতে পেরেছিলেন। আত্মার সাথে তার সংলাপও হয়তো হয়েছিল, আমাদের জানা হয়নি সেসব শব্দাবলী। সে শুধু এক বর্ণ হারানো সাদা পাণ্ডুলিপি মাত্র।
আপন মাহমুদের সাথে আমার কখনো চা খাওয়া হয়নি, রাস্তায় হাঁটা হয়নি; কোন বিষাদের বাতাসও ভাগাভাগি করে গায়ে মাখা হয়নি। কিন্তু আমি তার জগৎটাকে আমার নিজের হাতের আঙ্গুল দিয়ে স্পর্শ করতে পেরেছিলাম। আমি জেনেছিলাম, বিষাদ আর দুঃখকে খুব সহজেই আলোর দিকে ধাবিত করা যায়। সেখানে আপনিই ফুটে ওঠে হলুদ হলুদ অলকানন্দা। হ্যাঁ, আজ সকালে আমরা যখন অ্যাপোলো হসপিটালের ইমারজেন্সি’র বাইরে অপেক্ষা করছিলাম তখন সেখানে কিছু হলুদ রঙের অলকানন্দা ফুলও ফুটে ছিল, আমার দুঃখ এই যে এই ফুলের দুঃখ আমার শোনা হয়নি। আমরা এই সকালে আপন মাহমুদের নিথর শরীরের কাছাকাছি যেতে চেয়েছিলাম আর সকালটির আসলেই কোন দাঁড়ি কমা ছিলনা।
২৮টি মন্তব্য ২টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই
দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।
সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন
রম্য : মদ্যপান !
প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন
মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে
সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন
= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=
এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।
বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন
Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই
শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন