somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমরা দিন দিন খুনী হয়ে যাচ্ছি...

২৯ শে নভেম্বর, ২০০৭ বিকাল ৫:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একজন মানুষের ভিতরেরও একজন মানুষ থাকে। আমরা শুধু বাইরের খোলসটাকেই দেখি। দুধ ডিম খাইয়ে বড় করি। ক্রীম, রূপটান মেখে ঝলমলে করি। বাহারী কাপড়ে সাজিয়ে রাখি। সুগন্ধীতে মোহময় করে রাখি।

কিন্তু এ তো আসলে কেবলই খোলস। না হলে কি কখনও মৃত মানুষকে মাটি চাপা দিয়ে ঘরে ফিরে নিজেস্ব জীবনে ফিরতে পারতাম আমরা? আগুনে ঘি ঢেলে প্রিয় মানুষটার শরীর পুড়াতে পারতাম গন্ধ থেকে বাঁচতে? ল্যাবরেটরিতে কেমিকেলে চুবিয়ে কাটা কাটি করতে পারতাম সে খোলস?

মৃত্যু কি বুঝার পর থেকেই আমরা জানি বাইরের দেহটা কেবল খোলস। ভিতরের সত্ত্বাটুকুই আসল। অথচ, সেই সত্ত্বাটাকে চোখে দেখা যায় না সহজে। কারও খুব কাছে গেলে, তখন দেখা যায়। চোখের গভীরে চোখ রেখে দেখা যায়। কাউকে অনুভব করতে পারলে দেখা যায়। কারও জীবনে ঢুকে গেলে একটু একটু বুঝা যায়। সে সত্ত্বার বড় হতেও পুষ্টি লাগে, আদর লাগে, যত্ন লাগে। অথচ, কি বিভ্রমে, আমরা কেবল বাইরের শরীরটাকে খাইয়ে, পড়িয়ে যাই। ভিতরের সত্ত্বাটুকু অভুক্ত রাখি। আবর্জনা, অখাদ্য খাইয়ে ছাড়ি।

ভিতরের আমিত্বের বেড়ে উঠায় আশে পাশের মানুষগুলোর ভূমিকা অনেক। বাইরের সত্ত্বাটাকে ধরে, বেঁধে, বন্দী করে রাখলে কি তা বাড়তে পারে? চাইনীজ মেয়েদের পা এভাবেই অষ্টে পিষ্টে বেঁধে রাখা হতো। ফলাফল কি হতো? হাড় বাঁকা হয়ে, সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যেত। ওরা পালকিতে চড়ে বেড়াতো। বাড়তে 'বাঁধা' দিলে এমনই হয়।

ভিতরের সত্ত্বাটাকে বাড়তে দিতে হয়। বাড়ার জন্য জায়গা দিতে হয়। সময় দিতে হয়। সুযোগ দিতে হয়। পুষ্টি আর আদর দিতে হয়।

আমাদের সমাজ তা দেয় কই? প্রতিটা মানুষের কত কত বাঁধা। পয়সা নেই বিধায় বই কেনায় বাঁধা। মধ্যবিত্তের সন্তান তাই নিজে খেঁটে অন্যের মুখে অন্ন তোলার চিন্তা বিলাসিতা। নিজেদের সীমাবদ্ধতার বাঁধা তো আছেই। নিরাশা, হতাশা সব কিছুতে ডুবে থাকতে থাকতে আমরা বড় তিতকুটে হয়ে যাই। আমাদের দিন দিন ক্ষুদ্র হতে থাকা অন্ত:করীনে আমরা শুধুই 'বাঁধা' দিতে শিখি। নিজেরা বাড়তে পারি না, তাই অন্যকেও বাড়তে দিতে চাই না। "আরোপিত বাঁধা" দিয়ে চলি। চাইনীজ মেয়েদের মত আঁকাবাঁকা হাড্ডির পঙ্গু পা সৃষ্টিতে ব্যস্ত থাকি, সকাল বিকাল।

ব্লগ দেখে প্রথমে স্বপ্ন দেখেছিলাম। সত্যি জীবনের অনেক অনেক বাঁধা, সীমাবদ্ধতা। আমরা যতটুকু বাড়ার স্বপ্ন দেখি, ততটুকু বাড়তে পারি না। ভেবেছিলাম, ব্লগ, হয়তো বড় করে দিবে। কিন্তু হায়, এখানেও আরেক সমাজ হয়ে গিয়েছে, যেখানে অষ্টে পিষ্টে বেঁধে ফেলার, সামান্য বাড়তেই ছেঁটে ফেলার পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়ে গিয়েছে। সম্পূর্ণ মানুষটাকে বুঝার বিন্দুমাত্র প্রচেষ্টা নেই। এসবে কি লাভ হয়?

আমরা কি বুঝতে পারি না, আমরা বাইরের খোলসকে খুন করছি না ঠিকই, কিন্তু প্রতিনিয়ত একজন মানুষের আসল সত্ত্বাকে রক্তাক্ত করছি, ক্ষত বিক্ষত করছি, সব সময়ের জন্য পঙ্গু করে দিচ্ছি। নিহত করছি। পাপী যে আমরা খোলস খুনীর চেয়েও বেশি!

একটা মানুষকে নিজেস্ব গতিতে বড় হতে দিলে সমাজে আরেকজন পরিপূর্ণ মানুষ বাড়তো হয়তো। একজন মানুষের মনে লোহার শিকল পড়িয়ে দিলে, মনটাকে খুন করলে, "আমাদের সমাজেই" যে আরেকজন পঙ্গু মানুষ বাড়বে! মৃত অন্ত:করনের হেঁটে বেড়ানো মৃত মানুষ বাড়বে! আমরা পড়ালেখা শিখা মানুষেরা এতটা অবুঝ হলে চলবে?

------------------------------
ছবি: অষ্টে পৃষ্টে বাঁধা চাইনীজ মেয়েদের পা
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে নভেম্বর, ২০০৭ বিকাল ৫:৩৯
১৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×