somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলী প্রিয় কবি ও সাহিত্যিক ড. আশরাফ সিদ্দীকি

০১ লা মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৫:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



তখন আমি খুব সম্ভবত অষ্টম বা নবম শ্রেণির ছাত্র। আমার কাজিন পড়তেন ডিগ্রী ক্লাসে, যিনি আমাকে পড়াতেনও। একদিন। দুপুর বেলা। কী নির্জন দুপুর। কেমন যেন উদাস করা হাওয়ারা বইছিলো শমশম। বারান্দায় চাঁটাইয়ে শুয়ে কাজিনের বাংলা বইটা নিয়ে পড়ছিলাম। আমার কবিতার প্রতি দূর্বলতা ছিলো। ‘তালেব মাস্টার’ কবিতাটা পড়ে আমি কিছুক্ষণ নীরব হয়ে গিয়েছিলাম। হঠাৎ চীৎকার করে উঠেছিলাম, আর আমার চোখ ফেটে জল এসেছিলো।

প্রথম যেদিন, উনাকে আমি দেখি, আমার খুব ইচ্ছে করেছিলো, ছুঁয়ে দেখতে। সত্যি খুব ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে করেছিলো। কিন্তু আমি কেন জানি পারিনি।

পরবর্তীতে, যখন উনার বিষয়ে জানতে শুরু করলাম, আমার মনে হয়েছিলো, জীবন এবার থেমে গেলে মন্দ নই। খুব অবাক হলে, অনন্দিত হলে আমার মরতে ইচ্ছে করে। তৃপ্তির সাথে মৃত্যু। যদি পরের মুহুর্তটা ভয়ানক খারাপ হয়, এই ভয়ে!

রচনা করেছেন পাঁচশ’র ও অধিক কবিতা। বাংলার লোকঐতিহ্য নিয়ে করেছেন গভীর গবেষণা। তিনি একাধারে প্রবন্ধকার, লোকসাহিত্যিক, ছোটগল্প লেখক এবং শিশু সাহিত্যিক।
এ অঞ্চলের লোকসাহিত্য ও সংস্কৃতি লিপিবদ্ধ করতে ব্যাপক তৎপরতা শুরু করেছিলেন ড. দীনেশ চন্দ্র সেন, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ও কবি মনসুরুদ্দিনের মতো সর্বসৃজনশীল ব্যক্তিরা। পরবর্তী সময়ে সেই ধারা নিরন্তর গতিশীল রাখতে কাজ করেছেন যারা; ড. আশরাফ সিদ্দীকি তাদেরই একজন। ড. আশরাফ সিদ্দীকি একজন কবি, একজন শিক্ষক, তবে বহির্বিশ্বে তিনি বিশেষভাবে পরিচিত লোকবিজ্ঞানী হিশেবে। আমরা হয়ত অনেকে জানিই না, বাংলা একাডেমী বইমেলা, জাতীয় পর্যায়ে বৈশাখী মেলা, যাত্রা ও সং এর নাটক উদযাপন, উচ্চতর পর্যায়ে বাংলা ভাষায় পাঠ্যপুস্তক রচনা, চার খণ্ডে নজরুল রচনাবলীর প্রকাশ, প্রাচীন সাহিত্যিকদের রচনা প্রকাশ এবং যার মৌলিক ভুমিকার ফলশ্রুতিতে প্রথম বাংলা টাইপ রাইটার মুনির অপটিমা বাজারজাত করে বাংলা সাহিত্যের বিকাশে যুগান্তকারী পদক্ষেপ গৃহীত হয়, তিনি ড. আশরাফ সিদ্দীকি। এমনকী জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের আজকের যে সমাধিস্থল, সেই স্থান নির্বাচনে ড. আশরাফ সিদ্দীকির ভুমিকা ছিল অবিস্মরণীয়। বাংলা চলচ্চিত্রের স্বর্ণযুগের ছবি সুভাষ দত্ত পরিচালিত ডুমুরের ফুল সিনেমার গল্পটি ড. আশরাফ সিদ্দীকির, যা গলির ধারের ছেলেটি নামে পরিচিত, এবং বাংলা সাহিত্যে এই গল্পটি একটি উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে আছে। ড. আশরাফ সিদ্দিকী লেখা ও সম্পাদনায় এ যাবত প্রকাশিত হয়েছে ৭৫টি গ্রন্থ। ১৯৫০ সালে প্রকাশিত হয় কবির কালজয়ী প্রথম কাব্যগ্রন্থ "তালেব মাস্টার ও অন্যান্য কবিতা"। তিনি দক্ষিণ এশীয়দের মধ্যে প্রথম ব্যক্তি যিনি, ফোকলোর বিষয়ে আমেরিকার ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৬ সালে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন। লোকমুখে প্রচলিত যে বাংলার গ্রামাঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নানা লোকজ সংস্কৃতি, গল্প-গাঁথা সমূহকে লিখিত রূপ দান করার জন্য বিশ্বব্যাপী তিনি সমধিক পরিচিত। ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র থাকাবস্থায় তাঁর বই ‘ভোম্বল দাস’ ‘the uncle of lion’ ১৯৫৮ সালে ম্যাকমিলান প্রেস কর্তৃক প্রকাশিত হয়। এরকম নানান বর্ণাঢ্য সৃষ্টিকর্মের কথা উল্লেক করা যায়। শুধুমাত্র একটা বইয়েই তাঁকে তুলে ধরা একেবারেই অসম্ভব।

এদেশের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে ড. আশরাফ সিদ্দীকি’র ছিল সুচিন্তিত অংশ গ্রহণ। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের মৃত্যুর পর তৎকালীন প্রেসিডেন্ট তাঁকে বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গণে সমাধিস্থ করার কথা ভাবছিলেন। ড. আশরাফ সিদ্দীকি কর্তৃপক্ষকে বোঝাতে সক্ষম হন যে, বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গণ কবির যথোপযুক্ত স্থান নয়। পরবর্তীতে বাংলা একাডেমীর জরুরী সভার আলোচনায় স্থির হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে তাঁকে সমাধিস্থ করা হবে, যে আকাঙ্খা কবির গানে প্রকাশিত হয়েছিল।

১৯৮৮ সালে জাতীয় একুশে পদক, ১৯৬৪ সালে বাংলা একাডেমী পদক, শিশু সাহিত্যের জন্য ১৯৬৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক রিডার্স ডাইজেস্ট এ্যওয়ার্ড, ১৯৬৬ সালে ইউনেস্কো সম্মাননা ও ড. দীনেশচন্দ্র সেন সম্মাননা এগুলোর মধ্যে অন্যতম।

এক নাগাড়ে অনেক বর্ণনা লিখে ফেললাম। কিন্তু তাঁর যে বর্ণাঢ্য জীবন ও কর্ম এবং সৃষ্টি তার ওপরই গবেষণা হওয়া দরকার। তিনি নিজেই একটি ইন্সটিটিউট। তাঁর জীবন ও কর্ম নিয়ে সম্প্রতি একটি ওয়েবসাইট করা হয়েছে, যার লিঙ্কটা পাঠকের সুবিধার্থে দিলামঃ http://www.ashrafsiddiqui.com/

আজ এই মহান মানুষটির জন্মদিন। ৮৯তম জন্মবার্ষিকী।
জন্মদিনের শ্রদ্দাঞ্জলী, মহান সাহিত্যিক, কবি, সাধক পুরুষ। আমাদের শ্রদ্ধাবনত শুভেচ্ছা আপনার করকমলে।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মার্চ, ২০১৫ দুপুর ২:৩৪
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদী নামের এই ছেলেটিকে কি আমরা সহযোগীতা করতে পারি?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:০৪


আজ সন্ধ্যায় ইফতার শেষ করে অফিসের কাজ নিয়ে বসেছি। হঠাৎ করেই গিন্নি আমার রুমে এসে একটি ভিডিও দেখালো। খুলনার একটি পরিবার, ভ্যান চালক বাবা তার সন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে হিমশিম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভালোবাসা নয় খাবার চাই ------

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:০৬


ভালোবাসা নয় স্নেহ নয় আদর নয় একটু খাবার চাই । এত ক্ষুধা পেটে যে কাঁদতেও কষ্ট হচ্ছে , ইফতারিতে যে খাবার ফেলে দেবে তাই ই দাও , ওতেই হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় ইউনিভার্সিটি শেষ করার পর, ৮০ ভাগই চাকুরী পায় না।

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৭



জাতীয় ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ালেখা শেষ করে, ২/৩ বছর গড়াগড়ি দিয়ে শতকরা ২০/৩০ ভাগ চাকুরী পেয়ে থাকেন; এরা পরিচিত লোকদের মাধ্যমে কিংবা ঘুষ দিয়ে চাকুরী পেয়ে থাকেন। এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×