somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সরকারের সংবিধান কাঁটা ছেঁড়ায় বারণ করার সাধ্যি কার!

৩০ শে আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৩:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় দেশের মৌলিক আইনের স্পর্শ কাতর আইনি দলিল-ই হচ্ছে সংবিধান। সংবিধান প্রণয়ন যেমন একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্যে অর্জিত হয় তেমন রাষ্ট্রের সাথে জনগণের সম্পর্ক ও আইনের শাসন সহ সমাজ, সংস্কৃতি,শাসন ব্যবস্থা, শাসক সম্পর্কিত আইনি দিক প্রতিফলিত হয় প্রণিত সংবিধানে। ১৯৭২ সালে যাঁরা স্বাধীন বাংলাদেশ এর জন্য সংবিধান প্রণয়ন করেছিলেন তা করার বৈধ কতৃত্ব ছিল কিনা সেই প্রসঙ্গে না যেয়ে সংবিধান সংশোধনীতে বড় বেশী এগিয়ে রাষ্ট্রের শাসক শ্রেনী।

sঅভিযোগ আছে, ১৯৭২ সালে প্রণীত আমাদের সংবিধান মূলত রচিত হয়েছিল বাংলা সাহিত্যের অনুবাদ নির্ভর কবি সাহিত্যিকদের মত। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, ইতিহাস-ঐতিহ্য, জাতীয় বিশিষ্টতা, গৌরবোজ্জ্বল বাংলার ইতিহাস, ইসলামী মূল্যবোধ, সামাজিক-সাংস্কৃতিক চাহিদা প্রভৃতিসমূহকে ম্রিয়মান রেখে বৃটিশ, ভারত, পাকিস্তান এবং খুব বেশি ১৯৩৫ সালে ভারত শাসন আইনের প্রভাবিত আদল রেখে রচিত হয় মুক্তিযুদ্ধ করে আনা সংবিধান। ৭২’র সংবিধান প্রবর্তনের পর ২ বছর ৩ মাসের মধ্যে এই সংবিধানের প্রণয়ন ও প্রবর্তনকারীদের ৪ বার সংশোধন করতে হয়। তার ধারাবাহিকতায় যখন যে সরকার আসছে তার স্বার্থ সংরক্ষণে এ পর্যন্ত পঞ্চদশ সংশোধনি আনা হয়েছে। এটা ঠিক জনমানুষের জন্য সংবিধান, সংবিধানের জন্য মানুষ নয় কিন্তু নিজেদের উপযোগী রাজনৈতিক দর্শন, ক্ষমতায় টিকে থাকার কৌশল ও প্রায়শই সামরিক বাহিনীর অযাচিত ক্ষমতা দখল প্রতিরোধে উল্লেখযোগ্য সংশোধনী আনায় ব্যস্ত রয়েছে ক্ষমতার স্বাদে থাকা দুটি বিশেষ দল।

এদিকে জননেতা রিসার্চ সেল মনে করছে, রাষ্ট্রের গতির যন্ত্র মন্থর হয়ে পড়ে প্রায়শই দূরদৃষ্টিহীন এই সংবিধানের অপরিণত ধারা বা অনুচ্ছেদ সংজ্ঞায়িত প্রশ্নে। কিন্তু সংশোধনের মাধ্যমে যা প্রবর্তিত হচ্ছে তা রাজনৈতিক উদ্দ্যেশ্যপ্রণোদিত। অথচ যে রাষ্ট্রের জনশ্রেনী তার সংবিধানের জন্য জীবন দেয়ার বাস্তবতায় না থাকে সেই রাষ্ট্রের কোনোদিন মঙ্গল বা ভবিষ্যৎ সুখের হতে পারেনা। দুঃখজনক হলেও সত্য বাংলাদেশের সংবিধান নিয়েও জাতীয়তার মতো এখানেও রাষ্ট্রের জনগণ দু'ভাগে বিভক্ত।

জননেতা ডট কম এর এক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের এখন অনেক তরুন আইনজ্ঞ কিংবা সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলেন, আমাদের নতুন করে একটি সংবিধান প্রণয়ন করা জরুরি যাতে আগামী একশো বছরে কাটা-ছেড়া করার কোনো সুযোগ বা অবকাশ না থাকে। রবীন্দ্র সাহিত্যে ২০০/৩০০ বছরের জীবন দর্শন যেমন বেঁচে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে তেমন অত্যন্ত দূরদৃষ্টি নিয়ে পূর্বেকার সংবিধান প্রণেতারা সহ নবীন উচ্চ মার্গের ব্যক্তিবর্গ এই সংবিধান রচনায় যুগপৎ ভাবে একটি অর্থবহ সংবিধান রচনা করতে পারে এবং তা দেশের স্বার্থেই।

গবেষণায় উঠে এসেছে, টেলিভিশন খুললেই রাষ্ট্রের প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলসমূহের রাজনৈতিক নেতারা সংবিধান সংবিধান বলে প্রতিদিন চিৎকার করছেন অথচ আমাদের কাউকেই সংবিধান সম্পর্কিত পড়তে হয় না জানতেও হয় না। যেমন, বিদেশীদের আমেরিকান নাগরিক হওয়া সব যোগ্যতা পূরণ করার পর সর্বশেষ বাধা হল ঐ দেশের সংবিধানের উপর একটি বিশেষ পরীক্ষা দিতে হয়। আমাদের অন্তত পরীক্ষা নয়, এই সংবিধানকে কতটুকু সকলের তরে সহজ ভাষায় পৌছানো যায় এবং ঐ সংবিধানের জন্য নিবেদিত হওয়ার প্রয়াস গ্রহণ করা ছাড়া আর কোন বিকল্প পথ খোলা নাই যে সরকারই রাষ্ট্রীয় শাসন ক্ষমতায় থাকুন না কেন।

এদিকে আগামী ১ সেপ্টেম্বর শুরু হচ্ছে দশম জাতীয় সংসদের তৃতীয় অধিবেশন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে ঐ দিন বিকাল পাঁচটায় এ অধিবেশন বসবে। আর ঐ দিনই শুরু হবে সংবিধানের ষষ্ঠোদশ সংশোধনী নিয়ে প্রাসঙ্গিক আলোচনা। এ নিয়ে মোট ১৬ বার সংবিধান সংশোধন করা হচ্ছে। তবে এবারের সংশোধনীর মূল উপজীব্য বিষয় হচ্ছে- বিচারপতিদের অভিসংশসন (অপসারণ) ক্ষমতা জাতীয় সংসদের কাছে ফিরিয়ে আনা। এ জন্য সংবিধানের ৯৬ তম অনুচ্ছেদ কাঁটছাট করা হবে বলে জানা যায়।

সংবিধান, মুলত রাষ্ট্র বিষয়ক জনগণের আশা-আকাঙ্খা-স্বপ্নের তাত্তিক কাঠামোগত প্রায়োগিক নির্দেশনা । বাংলাদেশের সংবিধান প্রণীত হয় ১৯৭২ সালের ৪ঠা নভেম্বর এবং ১৬ ই ডিসেম্বর এটি কার্যকর হয়। সংবিধান সংসদের জন্য সংসদ সদস্যদের দুই তৃতীয়াংশ ভোটের প্রয়োজন হয়। এই সংবিধানে মোট ১৫ বার সংশোধনী আনা হয়েছে। সর্বশেষ ১৫ম সংশোধনী আনা হয় ২০১১ সালে। ২০১১ সালের পর এবার ২০১৪ তে আর একবার সংবিধান সংশোধন করার উদ্যোগ নিয়েছে বর্তমান সরকার। ১লা সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া দশম জাতীয় সংসদের তৃতীয় অধিবেশনর মেয়াদ হবে সংক্ষিপ্ত। তবে মেয়াদ যাই হোক এই অধিবেশনেই সংবিধানের ১৬তম সংশোধনী আনা হবে বলে চুড়ান্ত করেছে সংসদ সচিবালয়। সঙ্গত কারণেই সংবিধান সংশোধনী নিয়ে সর্বত্র আলোচনা সমালোচনা ছড়িয়ে পড়েছে।

এদিকে এবাব সংবিধানের ৯৬তম অনুচ্ছেদের কিছু অংশের সংশোধনী আনা হবে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে বিচারপতিদের অভিসংশনের (অপসারণ) ক্ষমতা জাতীয় সংসদের কাছে ফিরিয়ে আনতে সংবিধান সংশোধনের এ উদ্যোগ নিয়েছেন। এর আগের মেয়াদে ক্ষমতায় এসে মহাজোট সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল,অবৈধভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল বন্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে সবোচ্চ শাস্তির বিধান রাখাসহ বাহাত্তরের মূল সংবিধানের চেতনায় ফিরে যাওয়ার জন্য সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর বিল পাশ করেন।

গতবারের মত এবারও উঠেছে সংবিধান সংশোধনী নিয়ে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা।সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলছেন,’৭২-এর সংবিধানে ফিরে যাওয়ার কথা বললেও সরকার মূলত তা s2করছে সুবিধামতো। পুরোপুরিভাবে ’৭২-এর সংবিধানে ফিরে যাচ্ছে না তারা। পঞ্চদশ সংশোধনীর সময়ও একই কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু সে সময়ও সুবিধামতো সংবিধান সংশোধন করা হয়েছে।বিচারপতিদের অভিসংশসন ক্ষমতা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কাছ থেকে পার্লামেন্টে নেয়ার ক্ষেত্রে দ্বিমুখীনীতি অবলম্বন করছে সরকার। সংশ্লিষ্টপক্ষগুলোর কোনো বক্তব্য না নিয়েই ১৯৭২ সালের সংবিধানে ফিরে যাওয়ার কথা বলে সংবিধানের এ-সংক্রান্ত অনুচ্ছেদে আনা হচ্ছে সংশোধনী। এব্যাপারে সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের বলেছেন, ১৯৭২-এর সংবিধানে ফিরে যাওয়ার কথা বলে সরকার দেশের জনগণকে বিভ্রান্ত করছে। তারা তাদের ইচ্ছামাফিক সংবিধানে পরিবর্তন আনছে। মূলত বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ ও দলীয়করণ করার জন্যই এই অশুভ প্রচেষ্টা নেয়া হয়েছে।

অন্যদিকে সরকার পক্ষের আইনজীবীরা বলছে ভিন্ন কথা । তাদের মতে জনস্বার্থ রক্ষার্থে সরকার সংবিধান সংশোধন করছে। তাছাড়া সংবিধান কোন ধর্মীয় বা ঈশ্বর প্রদত্ত কোন গ্রন্থ নয় যে সেটা সংশোধন করা যাবে না।

জননেতা রিসার্চ টিম বলছে, ইতিহাস যেমন হলো- শাসক শ্রেনীর নিকট বন্দী থাকা এবং তাদেরই প্রয়োজনে সকলের জন্য উন্মোচিত পান্ডুলিপি। ঠিক একই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের শাসক শ্রেনী- ইতিহাস ও সংবিধান নিজেদের মত করে রচনা এবং সংশোধনে তৎপর রয়েছে। গভীর পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ঐতিহ্য থাকলেও অনেক প্রশ্নে তাঁদের গণতান্ত্রিক আবহে স্বৈরতান্ত্রিক হতে দেখা যাচ্ছে। অন্যদিকে তাঁদের বিরুদ্ধ শক্তি বিএনপির রাজনৈতিক ঐতিহ্য যেমন নড়বড়ে তেমনি সুশিক্ষায় নেই খোদ দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। সেক্ষেত্রে তাঁদের জনগণের নিকট গ্রহণ যোগ্যতা না থাকারই কথা। কিন্তু যে কোনো অনিবার্য কারণে ক্ষমতাসীন দলটির অজনপ্রিয়তা বিএনপিকে রাজনীতিতে বাঁচিয়ে রেখেছে। কিন্তু ইতিহাস বড় নির্মম, স্বেচ্ছাচারী সংস্কৃতিতে হাসিনা সরকারের সংবিধান কাঁটা ছেঁড়ায় বারণ করার সাধ্যি কার

প্রথম প্রকাশ http://jononeta.com
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাগতম ইরান

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৩

ইরানকে ধন্যবাদ। ইসরায়েলকে দাত ভাঙ্গা জবাব দেওয়ার জন্য।

হ্যাঁ, ইরানকে হয়তো এর জন্য মাসুল দেওয়া লাগবে। তবে, কোন দেশ অন্য দেশের সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপে করবে আর সেদেশ বসে থাকবে এটা কখনোই সুখকর... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:৩৯




আমরা পৃথিবীর একমাত্র জাতী যারা নিজেদের স্বাধীনতার জন্য, নিজস্ব ভাষায় কথা বলার জন্য প্রাণ দিয়েছি। এখানে মুসলিম হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান চাকমা মারমা তথা উপজাতীরা সুখে শান্তিতে বসবাস করে। উপমহাদেশের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্যা লাস্ট ডিফেন্ডারস অফ পলিগ্যামি

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০


পুরুষদের ক্ষেত্রে পলিগ্যামি স্বাভাবিক এবং পুরুষরা একাধিক যৌনসঙ্গী ডিজার্ভ করে, এই মতবাদের পক্ষে ইদানিং বেশ শোর উঠেছে। খুবই ভালো একটা প্রস্তাব। পুরুষের না কি ৫০ এও ভরা যৌবন থাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রিয় কাকুর দেশে (ছবি ব্লগ) :#gt

লিখেছেন জুন, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৩



অনেক অনেক দিন পর ব্লগ লিখতে বসলাম। গতকাল আমার প্রিয় কাকুর দেশে এসে পৌছালাম। এখন আছি নিউইয়র্কে। এরপরের গন্তব্য ন্যাশভিল তারপর টরেন্টো তারপর সাস্কাচুয়ান, তারপর ইনশাআল্লাহ ঢাকা। এত লম্বা... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেরত

লিখেছেন রাসেল রুশো, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:০৬

এবারও তো হবে ইদ তোমাদের ছাড়া
অথচ আমার কানে বাজছে না নসিহত
কীভাবে কোন পথে গেলে নমাজ হবে পরিপাটি
কোন পায়ে বের হলে ফেরেশতা করবে সালাম
আমার নামতার খাতায় লিখে রেখেছি পুরোনো তালিম
দেখে দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×