somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খেলাঘর (তৃতীয় পর্ব)

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১২:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



প্রথম পর্ব
দ্বিতীয় পর্ব

১২.

তৃণা প্রায় আধাঘন্টা যাবৎ দাঁড়িয়ে আছে ঢাকা ভার্সিটির সেন্ট্রাল লাইব্রেরীর সামনে। সাজ্জাদের কোন দেখা পাওয়া যায়নি তখনো। তৃণা দুইটা মিসকল দিল সাজ্জাদকে। ঠিক তখন-ই সে দেখল সাজ্জাদ এলোমেলো পায়ে হাঁটতে হাঁটতে তৃণার দিকে আসছে। সাজ্জাদের পেছনে স্কার্ফ পরা একটা বাচ্চা মেয়ে। মেয়েটা পাটকাঠির মত চিকন।

“মিস হরিণী! তোর নাক তো দেখি আরো থ্যাবড়ে গ্যাছে। হাহাহা।“

তৃণা সাজ্জাদের কথাকে তেমন পাত্তা দিলনা। পাটকাঠির মত চিকন মেয়েটার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বলল, “তুমি তো তিতলী, তাই না?”

“জ্বী আপু।“

তিতলীর খুব অস্বস্তি লাগছে। সাজ্জাদ ভাই তাকে বলেছে, “আজকে তোমাকে আমার এক বন্ধুর সাথে দেখা করতে নিয়ে যাব। পারলে তিনটার দিকে একবার এসো টিএসসিতে।“ তিতলী কোনভাবে ক্লাস শেষ করেই ছুটে এসেছে সাজ্জাদ ভাইয়ের বন্ধুর সাথে দেখা করতে। কিন্তু সাজ্জাদের বন্ধুটা যে মেয়েবন্ধু তিতলী জানতনা।

“তুমি মনে হয় আমাকে চিনোনা। আমি তৃণা। সাজ্জাদের ইয়ারমেট। সাজ্জাদ আমার খুব ভাল ফ্রেন্ড।“

“আপু, সাজ্জাদ ভাই আসলেই আমাকে আপনার কথা কখনো বলেনি। এমনকি আজকেও বলেনি। আমার খুব লজ্জা লাগছে যে আমি আপনার সম্পর্কে কিছুই জানিনা।“

“হাহাহা। সমস্যা নাই, সাজ্জাদ এরকম-ই! চল তিতলী, আমরা কোথাও বসি। এখানে মনে হয় ভাল খিচুরী পাওয়া যায়। সাজ্জাদ, আজকে আমাকে আর তিতলীকে খিচুরী খাওয়াও।“

তৃণা আপু কি সাজ্জাদ ভাইয়ের গার্লফ্রেন্ড না শুধু ফ্রেন্ড? তিতলীর কেমন যেন অস্থির লাগছে। এক মুহুর্ত এখানে তৃণার পাশে বসে থাকতে ইচ্ছা করছেনা। মাথার মধ্যে হাজারো হাবিজাবি চিন্তা। তিতলী মনে মনে তৃনাকে বলল, “তোর খিচুরী খাওয়ার শখ হইসে তুই টাকা দিয়ে কিনে খা। সাজ্জাদ ভাই আর আমাকে এসবের মধ্যে টানিস ক্যান? বেটি ফাউল!”

সাজ্জাদ দুইটা খিচুরীর প্লেট হাতে নিয়ে এসে বলল, “তৃণা তুই কিছুক্ষণ তিতলীর সাথে গল্প কর। আমি একটু হল থেকে ঘুরে আসি। আবিরের কাছে কিছু টাকা পাই। বেটাকে আজকে ধরতে না পারলে ইহজীবনে আর টাকা ফেরত পাবনা।“

“সাজ্জাদ ভাই, আমি বাসায় চলে যাই?”

তৃণা তিতলীর হাত ধরে বলল, “কেন তিতলী? বস কিছুক্ষণ। তোমাকে দেখতে ভাল লাগছে। তুমি বাসায় যাবে কিভাবে?”

“আপু গাড়িতে যাব। আমাকে তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতে হবে।“

“তিতলী, বস তৃণার সাথে দশ মিনিট। আমি এক্ষুণি ফিরে আসছি। আমি তোমার সাথে যাব। আমাকে ফার্মগেটের দিকে ড্রপ দিয়ে দিও।“

তিতলী সাজ্জাদের চলে যাওয়ার পথের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। এই কালো ভূতের মত বেটির পাশে কতক্ষণ বসে থাকতে হবে কে জানে?

“তৃণা আপু!”

“হু, বল তিতলী?”

“আপনার সাথে সাজ্জাদ ভাইয়ের ফ্রেন্ডশীপ হল কিভাবে?”

তৃণা হাসল। হাসতে হাসতেই বলল, “সে এক লম্বা কাহিনী। আমি সেই কাহিনীকে বলি শার্ট কাহিনী!”

“আপু, বলেন না প্লীজ!”

“আমি আর সাজ্জাদ এক সাথে ভার্সিটি ভর্তির কোচিং করতাম। প্রায় চার-পাঁচ বছর আগের কথা বলছি কিন্তু! একদিন সাজ্জাদ ক্লাসে এসে লজ্জিত ভঙ্গিতে ব্যাচের মেয়েদের দিকে তাকিয়ে বলল, আপনাদের কারো কাছে সুই-সুতা আছে? আমি একটু আগে রিকশা থেকে পড়ে গেছিলাম। রিকশার চাকায় বেঁধে শার্টের সবগুলো বোতাম ছিঁড়ে গেছে। হাহাহা।“

“তখন আপনি সুই সুতো বের করে দিলেন?”

“উহুঁ। সুই-সুতো কোথায় পাব? আমি দেখলাম, ব্যাচের কেউ কোন কথা বলেনা। ছেলেরা হিহি করে হাসছে। তখন আমি বললাম, আপনি বরং অফিসরুম থেকে কয়েকটা পিন নিয়ে আসেন। তারপর পিন দিয়ে বোতাম আঁটকিয়ে ফেলেন।“

“আপনার অনেক বুদ্ধি আপু।“

“হু। তারপর কি হল শোন। সাজ্জাদ পিন নিয়ে আসল। তারপর আমার কাছেই এসে বলল, পিন দিয়ে বোতাম কিভাবে লাগাতে হয় জানিনা। আপনি লাগিয়ে দেন। পুরো ক্লাসে হাসাহাসি শুরু হল। আমি তো লজ্জায় শেষ। এই ছেলে যে এরকম একটা কান্ড করবে কে জানত? সাজ্জাদ নিজেও পুরো ক্লাস কাঁপিয়ে হাসছে। আমি সাজ্জাদের দিকে তাকিয়ে কঠোর গলায় বললাম,...”

কথা শেষ করার আগেই তৃণা হাসতে হাসতে লুটিয়ে পড়ল তিতলীর গায়ে। শার্ট কাহিনী বলার এই পর্যায়ে সে কখনোই হাসি থামাতে পারেনা। মাঝে মাঝে অতীত বড় সুখময় মনে হয়!

তিতলী তৃণার হাসিতে গড়িয়ে পড়া দেখে হাসিহাসি মুখ করে বসে থাকলেও মনে মনে বলল, “ঐ কালো পেত্নী, তুই কি জানিস তোর হাসি মহিলা হায়েনাদের চেয়েও খারাপ?”

তৃণার হাসি শেষ হওয়ার আগেই সাজ্জাদ ফিরে আসল। সে তিতলীর দিকে তাকিয়ে হাস্যোজ্বল মুখে বলল, “তৃণা এত হাসে কেন? আমাদের শার্ট কাহিনী বলছিল মনে হয়?”

“আমাদের” শব্দটা খট করে তিতলীর কানে বাঁধল। সে মৃদু গলায় বলল, “বাসায় যাব সাজ্জাদ ভাই, দেরী হয়ে যাচ্ছে।“

১৩.

আজকে রাসেল নীতুর সাথে দেখা করতে চেয়েছে। ফেসবুকের এতদিনের সম্পর্কটা বাস্তবে রূপ নিতে যাচ্ছে। নীতুর মনে একই সাথে ভয় এবং আনন্দ। তার ক্ষুদ্র জীবনের এই আনন্দময় ঘটনাটা কাউকে বলতে পারলে নীতুর ভাল লাগত। কিন্তু তার বন্ধুদেরকেও রাসেলের কথা কখনো সেভাবে বলা হয়নি। শুধু সেঁজুতিকে একদিন হালকাভাবে বলেছিল ফেসবুকে এক ছেলের সাথে সম্পর্কের কথা। নীতু আজকে খুব মিস করছে তৃণা আপাকে। তৃণা আপা এক মাস হল জাহাঙ্গীরনগরে চলে গেছে। নাহলে আপাকে পুরো ব্যাপারটা খুলে বলা যেত।

নীতু বাসা থেকে বের হয়েছে কলেজ ড্রেস পরে। তার ব্যাগে মেজ খালার দেওয়া নতুন সালোয়ার-কামিজটা। এই কামিজটা পরলে তাকে খুব মানায়। কমলার মধ্যে হালকা গোলাপির ফুটি দেওয়া। কলেজের টিফিন ব্রেকে নীতু চট করে কলেজ ড্রেসটা বদলে ফেলল। তারপর সবার অলক্ষ্যে বের হয়ে গেল কলেজের পাঁচিল টপকে। রাসেল তাকে আসতে বলেছে বেইলী রোডের একটা স্ন্যাকসের দোকানে। সেখান থেকে পুরোনো ঢাকা। লালবাগে হালকা ঘোরাফেরা। এই হচ্ছে প্রথম দেখা করার দিনের প্ল্যান।

কলেজ থেকে বের হয়ে নীতু দাঁড়িয়ে ছিল রিকশার অপেক্ষায়। হঠাৎ চোখে পড়ল আট-নয় বছরের একটা বাচ্চা ছেলে পাইপ আইসক্রীম খাচ্ছে। নীতুর তীব্র ইচ্ছা করল একটা সবুজ রঙের পাইপ আইসক্রীম খাওয়ার। কিন্তু হাতে বেশি সময় নেই। বড় কোন উপলক্ষ্যে যাওয়ার আগে ছোট ছোট ইচ্ছাগুলো মেরে ফেলতে হয়। নীতু চড়ে বসল একটা রিকশায়। রিকশা আইসক্রীমওয়ালাকে পেছনে ফেলে আসল। তবু নীতুর কানে বাজছে আইসক্রীম ওয়ালার টুংটাং ঘন্টি, “আইসক্রীম! আইসক্রীম!”

আহা! একটা সবুজ পাইপ আইসক্রীম!

১৪.

সাজ্জাদ কয়েকদিন ধরে বেশ চিন্তিত। রাতের ঘুম মোটামুটি হারাম হয়ে গেছে। চিন্তার বিষয় অবশ্য-ই তিতলীর আম্মা হামিদা বেগম। জামান স্যার মারা যাওয়ার পর সাজ্জাদ দু’একবার তিতলীদের বাসায় গিয়েছে। যতবার-ই গিয়েছে ততবার-ই তিতলীর আম্মা ঠান্ডা গলায় হাই, হ্যালো টাইপ কথা বলে উঠে চলে গেছেন। তিতলীর নানা মারাত্মক প্রভাবশালী। সরকারী আমলা টাইপ কেউ হবেন। তিতলীর আম্মা সরাসরি রাজনীতির সাথে জড়িত। সাজ্জাদ প্রভাবশালী এবং ধনীদের প্রচন্ড ভয় পায়। সেই প্রভাবশালী তিতলীর আম্মা সাজ্জাদকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন কিছুদিন আগে। সাজ্জাদ ভেবেছিল উনি হয়ত তিতলীর সাথে তার মেলামেশা বিশেষ পছন্দ করেন না, সেই কথাই বলবেন। কিন্তু সাজ্জাদকে অবাক করে দিয়ে হামিদা বেগম সাজ্জাদকে বলেছেন, উনি সাজ্জাদের সাথে তিতলীর বিয়ে দিতে চান। বাকিটা সাজ্জাদের ইচ্ছার উপর। হামিদা বেগম কথা শুরু-ই করেছিলেন সাজ্জাদের সবচে’ দূর্বল জায়গার সূত্র ধরে।

“সাজ্জাদ, তোমার জামান স্যার তো মাঝে মাঝে তোমাকে হাতখরচের টাকা দিতেন মনে হয়?”

“জ্বী, ম্যাডাম। দিতেন।“

“আমি যতদূর জানি তুমি স্যারের খুব প্রিয় ছাত্র ছিলে। আমিও তোমাকে খুব পছন্দ করি। তোমাকে কয়েকটা জরুরী কথা বলার জন্য ঢেকেছি। ভনিতা না করেই বলি, আমি তোমার সাথে তিতলীর বিয়ে দিতে চাই। তোমার কি মত?”

সাজ্জাদ এসির মধ্যেও কুলকুল করে ঘামতে শুরু করেছিল। তারপর ভীত গলায় বলেছিল, “ম্যাডাম, আমার বাড়ির অবস্থা খুব খারাপ। মা কোনভাবে সংসার চালায়। আমি তো মাত্র পাশ করলাম। আমার ভাইবোন, মায়ের প্রতি আমার একটা দায়িত্ব আছে। আমি বাড়ির বড় ছেলে। বুঝতেই পারছেন।“

“সাজ্জাদ আমি তোমার বাড়ির অবস্থার খোঁজ নিয়েছি। আমি অবশ্য-ই তোমার মায়ের সাথে কথা বলব। তার আগে তোমাকে কয়েকটা বিষয় বলি। তিতলী এই বছর নর্থ সাউথে জেনেটিকস-এ ভর্তি হয়েছে। কিন্তু আমি চাই তিতলী আমেরিকা গিয়ে পড়াশোনা করুক। সেখানে তিতলীর ফুপু আছেন। উনি সব দেখবেন। আমেরিকা যাওয়ার আগেই আমি তিতলীর বিয়ে দিতে চাই।“

“ম্যাডাম খুব-ই ভাল কথা। এমন একটা ছেলের সাথে ওর বিয়ে দেন, যে আমেরিকা যেতে পারবে। আমি তো আমেরিকা যেতে পারবনা।“

“সাজ্জাদ কথা শেষ করতে দাও বাবা। তুমি প্রচন্ড ব্রাইট একটা ছেলে। জামান সারাক্ষণ তোমার কথা বলত। আমি শুনেছি তোমার রেজাল্ট ও খুব ভাল। তুমি আমেরিকাতে স্কলারশীপের জন্য অ্যাপ্লাই কর। তোমার রেজাল্ট অনুযায়ী স্কলারশীপের তুমি পাবে। প্লেন ভাড়া এবং আমেরিকা যাওয়ার বাদবাকি খরচ আমার। আমি চাই একটা ভাল ছেলের সাথে তিতলীর বিয়ে হোক। তাছাড়া আমার ধারণা তিতলীও তোমাকে পছন্দ করে। বাকিটুকু তোমার উপর, তুমি ভেবে দেখ। তুমি নিশ্চয় জীবনে অনেক বড় হতে চাও, কি? চাওনা?“

“ম্যাডাম, আমি ভেবে দেখি। বাড়ির মানুষজনের সাথে কথা বলি। আজকে আমি আসি, ম্যাডাম। স্লামালিকুম।“

সাজ্জাদ এই ঘটনার পর থেকে প্রচন্ড মানসিক চাপের মধ্যে পড়ে গেছে। তিতলীর সাথে লজ্জায় কথাই বলতে পারেনি। এদিকে তৃণাকে ফোন করে এসব ব্যাপার বলা ঠিক হবে কিনা সেটাও বুঝতে পারছেনা। মাকেও কিছু বলতে পারেনি এখনো। তার চেয়ে বড় সমস্যা সাজ্জাদ এখন বেশিরভাগ সময় তিতলীর কথা ভাবে। সে মনে হয় তিতলীর প্রেমে পড়ে গেছে।

একই সাথে দুজন মানুষকে কি ভালোবাসা সম্ভব? তৃণা ছাড়া এক মূহুর্ত সাজ্জাদ চলতে পারবে কিনা সে নিজেও জানেনা। অথচ ইদানীং ঘুম ঘোরেও চোখে ভাসে ফুটফুটে পবিত্র একটা মুখ। মুখটা অতি অবশ্যই তিতলীর।

১৫.

নীতু আধাঘন্টা যাবৎ একা একা বসে আছে পুরোনো ঢাকার একটা মেসের রুমে। রাসেল তাকে এখানে বসিয়ে দিয়ে গেছে। বলেছে, “একটু বস। তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।“ রাসেলকে দেখে নীতু মোটামুটি মুগ্ধ। ওর কথাবার্তা, আচরণে মনে হচ্ছে নীতু যেন তার আজীবনের চেনা। কতদিন ফেসবুকে মোবাইলের ওপাশের মায়াময় ছেলেটার কথা ভেবে নীতু গভীর রাতে চোখের জল মুছেছে। আর সেই ছেলেটা আজকে তার সামনে। রাসেলের প্রতি গভীর ভালোবাসায় নীতুর চোখে জল এল। নীতু চোখের পানি মুছতে যাবে—ঠিক এই মুহূর্তে রাসেল এসে ঘরে ঢুকল। ধীর পায়ে এগিয়ে এসে নীতুর পাশে বসল। তারপর তীব্র আবেগে নীতুর হাত চেপে ধরল। নীতু হাত সরিয়ে নিতে গিয়েও সরিয়ে নিলনা। মাথা নিচু করে বসে রইল।

“আমাকে তোমার কেমন লেগেছে, নীতু?”

নীতু লজ্জাজড়িত কন্ঠে বলল, “ভাল, খুব ভাল।“

“তাহলে তোমাকে একটু আদর করি?” রাসেল মাথাটা নিয়ে এল নীতুর খুব কাছে। নীতু প্রায় চমকে সরে গেল দূরে।

রাসেলকে মোটেই এখন আর মায়াময় লাগছেনা। মনে হচ্ছে তার চোখ দুটো ধ্বক ধ্বক করে জ্বলছে। নীতু ফ্যাসফ্যাসে গলায় বলল, “আমি মা’র কাছে যাব।“

ঠিক তখন-ই ঘরের ভেজানো দরজা খুলে তিন জন গুন্ডা টাইপ ছেলে ময়লা দাঁত বের করে হাসতে হাসতে ঘরে ঢুকল।

“দোস্ত, এই মাল পেলি কই?”

“ফেসবুকে। ফেসবুকে শালীরা তো শরীর দেওয়ার জন্য বসে থাকে।“

রাসেল হাসছে। কি বীভৎস সে হাসি! নীতু দেখল তিনটা ছেলে তার দিকে এগিয়ে আসছে। একজন টান দিয়ে তার ওড়নাটা ছুড়ে ফেলে দিল মাটিতে। নীতু চোখ বন্ধ করে ফিসফিস করে বলল, “আল্লাহ! আল্লাহ! তোমাদের পায়ে পড়ি, আমাকে মেরে ফেলনা। আমাকে নিয়ে যা ইচ্ছা কর, আমাকে শুধু বাঁচিয়ে রাখ। আল্লাহ!“

ছেলেগুলো নীতুর আকুতি শুনেছিল। নীতুকে তারা বাঁচিয়ে রেখেছিল।

নীতু বাড়ি ফিরে এল ঠিক বিকাল চারটার দিকে। কলেজ থেকে সাধারণত এই সময়েই সে বাসায় ফিরে। গেটের একটা চাবি সবসময় নীতুর কাছে থাকে। নীতু চাবি দিয়ে দরজা খুলে ঘরে ঢুকল। মা ঘুমাচ্ছে, ভাত ঘুম মনে হয়। দাদার ঘরের দরজা ভেজানো। বাবা অফিসে। নীতু ধীর পায়ে নিজের ঘরে গেল। খুব ক্লান্ত লাগছে তার। নিজেকে বড় বেশি অশুচি মনে হচ্ছে। নীতু দীর্ঘ সময় ধরে গোসল করল। তার সারা শরীরে পশুদের আঁচড়ের দাগ। কলেজ ড্রেসের পকেট হাতড়ে নীতু মোবাইলটা বের করল। ওরা নীতুর কাছ থেকে কোন কিছুই নেয়নি, আবার হয়ত সব কিছুই নিয়ে নিয়েছে। রাসেলের নাম্বারে কি মনে করে ফোন করল নীতু। ফোন বন্ধ। নীতু ফেসবুকে লগ-ইন করল। রাসেলের একাউণ্টটা আগের মত-ই আছে। কিন্তু নীতু এখন জানে, এটা একটা ফেইক একাউন্ট। রাসেল নামের মানুষটার আসল নাম ও সে জানেনা। তীব্র কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল নীতু। “আমি তো তোমাকে সত্যি ভালোবেসেছিলাম, রাসেল! অনেক বেশি ভালোবেসেছিলাম!”

ফুলবানু খুব ভোরবেলা কলোনীর চারপাশটা ঝাড়ু দেয়। আজকেও প্রতিদিনের মত ঝাড়ু দিতে এসে সে আমগাছের দিকে তাকিয়ে গগনবিদারী চিৎকার করে উঠল, “মা! ও মাগো!”

নীতুর প্রিয় আমগাছে লবঙ্গের ডালে ঝুলে আছে নীতু। গলায় কমলা-গোলাপী ওড়না। পৃথিবীর সমস্ত ভালোবাসা-মায়াকে ঠেলে ফেলে নীতু চলে গেছে অনেক দূরের কোন খেলাঘরে; শুধু একটা মাত্র ছোট্ট ইচ্ছাকে অপূর্ন রেখে। মারা যাওয়ার দিন সকালে নীতুর আইসক্রীম খেতে ইচ্ছা করেছিল। একটা সবুজ রঙের ঠান্ডা পাইপ আইসক্রীম!

(চলবে)

শেষ পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ৯:৪২
৪২টি মন্তব্য ৪২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×