অনেক অনেক দূরের কোন এক গ্রাম থেকে হুট করেই ঢাকায় গার্মেন্টস এ কাজ করতে আসা ছেলে মেয়েগুলোর জন্য ঢাকা যেন বিদেশ ! দারিদ্র্য এতটাই কোণঠাসা করেছিল যে তাদের জানার সুযোগ ছিল না যে কারখানায় ওরা কাজ করতে যাচ্ছে সেটা তৈরি হয়েছিলো অন্যের কেডে নেয়া জমি এবং আস্ত এক জলাশয় এর ওপর , ওরা কাজ করছিলো । দিন-রাত , রাত-দিন , কেউ কেউ ভাবছিল এইবার , হ্যাঁ, এইবার বুঝি সুদিন আইব । বাপের করা সমস্ত ঋণ শোধ হয়ে যাবে, ছোট বোন আর ভাই টা যাবে স্কুল এ , আর মাকে একটা নতুন শাডী দেয়া যাবে ? হ্যাঁ এইত আর ২ ঘন্টা বেশি ওভারটাইম এ চালিয়ে নেয়া যাবে শাডীর টাকা , রুবি ভাবছিল ওর বাচ্চা দুটোর কথা , স্বামী ছেডে গেছে তো কি হয়েছে , সে ঠিকি তার মেয়ে দুটোকে মানুষ করবে, মেয়ে জন্ম দেয়ার অপরাধে বেকার স্বামী ভেগেছে , সে দেখিয়ে দেবে মেয়েরাও পারে , হটাত করেই কাঁপতে থাকে সবাই , ব্যাপার কি! চিন্তায় ছেদ পড়ে সবার । কেউ একজন উঠে দাঁড়ায় ঘটনা বোঝার জন্যে , সে মুহূর্তেই ভূপাতিত হয় , তাহলে ভবনটা হেলে পড়ছে একদিকে !! দারিদ্র্যের চাবুকে জর্জরিত মানুষগুলো তখন ও বুঝতে পারেনি - একদিন ইতিহাস হয়ে যাবে ওরা , শ্রমিক হত্যার ইতিহাসে জায়গা হবে অনেকগুলো করুণ ছবি , রক্তাক্ত মুখ, ওদের একখানা রঙ্গিন ছবি হাতে কান্না ভেজা চোখের -ওদেরই কোন স্বজন এর ছবি আসবে বড় পত্রিকার প্রথম পাতায় , রানা প্লাজার শ্রমিক হত্যার দেড় বছরেও বিচারে, তদন্তে , ক্ষতিপূরণে কোনরকম অগ্রগতি নেই , আপনাকে , আমাকে অভিনন্দন - এইসব শ্রমিক দের পক্ষে একটি কথাও না বলার জন্য , অভিনন্দন এইসব গরিবের পুতের জন্য রাস্তায় না নামার জন্য, এরা মরলে আপনার আর আমার কি আসে-যায় ! আসুন একটু আফসোস করে দায়িত্ব শেষ করি , চাইলে আফসোস এর মুহূর্তে একটি সেলফি তোলা যায় - আইডিয়া মন্দ না !! ( ছবি- টাইমস সাময়িকীর শীর্ষস্থান এ থাকা ছবি - তাসলিমা আখতার এর তোলা, রানা প্লাজার উদ্ধার কার্যক্রমের দিনগুলোতে )
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৪ দুপুর ১:০৩