somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নতুন রাস্তা নির্মাণ কী যানজট সমস্যা সমাধান কতটুকু ভূমিকা রাখে

১৩ ই অক্টোবর, ২০০৮ রাত ৮:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

উপরে ছবিগুলো দুটি শহরে যেখানে অধিক রাস্তা তৈরি করেও যানজট সমস্যা সমাধান হয়নি।

ঢাকা শহরের যানজট নিরসন করার জন্য আরো নতুর নতুন করে রাস্তা নির্মাণ করার চিন্তা করা হচ্ছে। সেটিও আসলে কোন ভাল সমাধান নয়। কারণ রাস্তা বৃদ্ধি করা হলে তার সাথে সাথে গাড়িও বৃদ্ধি পাবে। যখন রাস্তা প্রসারিত করা হয় তখন রাস্তার আশেপাশের অনেক বাড়ি-দোকান ভাঙ্গা প্রয়োজন হয় এবং এগুলি অন্যত্র স্থানান্তরিত করা প্রয়োজন হয়ে পড়ে। যে কারণে যাতায়াতের দূরত্ব বৃদ্ধি পায়। তখন বাড়ি এবং দোকান নির্মাণের জন্য অর্থ বিনিয়োগ প্রয়োজন হয়ে পাড়ে। অর্থ বিনিয়োগ প্রয়োজন হয় দূরে চলে যাওয়া বাড়ি বা দোকানগুলোর সাথে যোগাযোগ তৈরি এবং তার জন্য গাড়ি ক্রয় করার পেছনে। এ সমস্ত গাড়ি রাস্তায় আবার যানজট বৃদ্ধি করে। অর্থাৎ এ চক্র কোন সময় নিঃশেষ হয় না। আমরা যে শুধু এটা বলছি তা নয়, অধিকাংশ শহরের অভিজ্ঞতা থেকে তা প্রতীয়মান হয়েছে।

আমেরিকার মধ্যে লসএঞ্জেল্স সবচেয়ে বেশি গাড়ি নির্ভর শহর এবং এখানেই দেশের সবচেয়ে বেশি যানজট লেগে থাকে। লসএঞ্জেল্স এ যে সমস্ত যাত্রীরা গাড়িতে নিয়মিত যাতায়াত করে তাদের প্রায় প্রত্যেকেরই বছরে প্রায় ৯৩ কর্মঘন্টা যানজটে নষ্ট হয়। আমেরিকার দুটি গ্ররুত্বপূর্ণ শহর লসএঞ্জেল্স এবং হিস্টনে ৭০% জায়গা গাড়ি চলাচল এবং পার্কিং এর জন্য ব্যয় হচ্ছে। অর্থাৎ এখানকার মাত্র ৩০% জায়গা মানুষ অন্য কাজে ব্যবহার করতে পারছে। এখন প্রশ্ন হলো ইতোমধ্যে ঢাকা শহরের কি পরিমান জায়গা আমরা গাড়ির জন্য ব্যয় করেছি এবং আরো কতো জায়গা গাড়ির জন্য বরাদ্ধ দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হতে চায়?

ব্যাংকক শহরে প্রতিদিন যানজটে গাড়ি দাড়িয়ে থাকার জন্য ১.৪ মিলিয়ন সমমূল্যের তেল অপচয় হচ্ছে। এ ছাড়াও আরো বেশি আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে ব্যবসায়ীদের ঠিকমত মালামাল দিতে না পারার জন্য এবং চাকুরিজীবিরা কর্মক্ষেত্রে সময় মত পৌঁছে তার নির্ধারিত কাজ করতে না পারার কারণে। ব্যাংকক শহরে রিকসা নিষেধ করা হয়েছে ১৯৬০ সালে এবং বলা যায় রাস্তায় কোন প্রকার অযান্ত্রিক যানবাহন নেই। তারপরও এখানে যানজটের কারণে মানুষের ৪৪ কর্মদিবস নষ্ট হয়।

এই দিনগুলি নষ্ট না হলে দেশের সামগ্রিক জাতীয় আয় (জিএমপি) আরো ১০ ভাগ বৃদ্ধি পেত। এরপর ব্যাংকক শহরের নতুন রাস্তা তৈরি করার জন্য প্রচুর অর্থ ব্যয় করা হচ্ছেরাস্তায় সবচেয়ে বেশি জায়গা দখল করে প্রাইভেট গাড়ি। যদিও এই গাড়িতে কম যাত্রী যাতায়াত করে। ১৯৮০ সালে কাছাকাছি সময়ে ব্যাংকক শহরের রাস্তা সমূহে ৭০% জায়গা দখল করেছে গাড়ি। কিন্তু সেখানে মাত্র ২৮ ভাগ যাত্রী গাড়িতে যাতায়াত করতে পেরেছে। ১৯৮০ সালে ম্যানিলা শহরের রাস্তাগুলোতে চলাচলকারী গাড়ি সমূহের মধ্যে ৭০-৯০ ভাগ ছিল প্রাইভেট গাড়ি এবং তাতে মাত্র ২৮-৪০ ভাগ যাত্রী যাতায়াত করতে পেরেছে। দিল্লী ১৯৭২ সালে প্রায় ম্যালিনা শহরের মত অবস্থায় ছিল। এই তিনটি শহরের কমপক্ষে ৬৩% ভাগ যাত্রী পাবলিক বাসে যাতায়াত করেছে। সেখানে বাস রাস্তায় জায়গা দখল করেছে মাত্র ১২-১৯ ভাগ।

যদি আমরা চিন্তা করি ঢাকা শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থা খুব খারাপ অবস্থায় আছে তাহলে অযান্ত্রিক যানমুক্ত শহরগুলি কি অবস্থায় আছে তা দেখতে হবে। লন্ডন শহরে ১৯৮৭-৮৮ সালের সন্ধ্যাকালিন সময়ে গড়ে গতিবেগ ছিল ১১.৬ এমপিএইচ, জাকার্তায় মাত্র ৯.৩ এমপিএইচ। বর্তমানে সেখানকার বাস্তব অবস্থা আরো বেশি ভিন্ন । সেখানে সাইকেলে গাড়ির চেয়ে দ্রুত যাওয়া যায়।

যদি প্রাইভেট গাড়ি অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়তে থাকে তাহলে সরকার যত বেশি রাস্তা তৈরির জন্য অর্থ ব্যয় করুক না কেন রাস্তার সংকট কখনো দুর হবে না। দুঃখজনক বিষয় হলো প্রাইভেট গাড়ি যখন বাড়তে থাকে তখন আরো কম সংখ্যক মানুষ যাতায়াত করতে পারে। লন্ডনে ১৯৫৬ সালে ব্যস্ততম সময়ে ৪,০৪,০০০ মানুষ হাইওয়েতে যাতায়াত করতে পেরেছে। তার ৪০ বছর পরে অর্থাৎ ১৯৯৬ সালে হাইওয়েতে মাত্র ২,৫১,০০০ মানুষ যাতায়াত করতে পেরেছে সেখানকার রাস্তায় গাড়ি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে। কারণ আগে পাবলিক বাস বেশি থাকায় বেশি মানুষ গাড়িতে যাতায়াত করতে পারতো। বর্তমানে সেখানে প্রাইভেট গাড়ি বৃদ্ধি পাওয়ায় কম মানুষ যাতায়াত করতে পারছে।

প্রাইভেট গাড়ি যে শুধুমাত্র যাতায়াত করার জন্য জায়গা দখল করছে তা নয় পার্কিং এর জন্যও প্রচুর জায়গা নেয়। আমেরিকার একটি পরিসংখ্যান রয়েছে যে একটি গাড়ির পার্কিং এর জন্য ৮টি স্থান প্রয়োজন হয়। যেমন বাসা, বাজার, কর্মস্থল, স্কুল হোটেল দোকানসহ বিভিন্ন জায়গায়। যখন একটি গাড়ি বাড়িতে না থাকে তখন সেই গাড়িটি হয় রাস্তায় চলাচল করছে না হয় অন্য কোথাও পার্কিং করা আছে। অথবা যাত্রী নামিয়ে দিয়ে ফাঁকা গাড়ি নিয়ে শুধুমাত্র চালক নিজে রাস্তার জায়গা দখল করে বাসায় ফিরছে। যখন একটি গাড়ি রাস্তায় চলাচল করছে বা এক জায়গায় পার্কিং করছে তখন ওই জায়গা অন্য কেউ ব্যবহার করতে পারছে না। অর্থাৎ এই জায়গা শুধু একজন যাত্রী ব্যবহার করছে। রিকসা রাস্তায় আরো কম জায়গা দখল করে, এক জায়গায় বেশিক্ষণ অপেক্ষা করে না এবং সাধারণত খালি অবস্থায় কম যাতায়াত করে।

শহরে যদি রাস্তা বৃদ্ধি পায় তাহলে ট্রাফিক অবস্থা আরো খারাপ হয়। কারণ রাস্তা বেশি থাকলে মানুষ আরো বেশি দুরে যায় এবং আরো মানুষ গাড়ি কেনে। এটি আমরা ব্যাংকক লসএঞ্জেলস, জাকার্তা, লন্ডনসহ আরো অনেক গাড়ি নির্ভর শহরগুলো অভিজ্ঞতা বিশ্লেষণ করলে বুঝতে পারি।

আমরা যখন গাড়ির জন্য বেশি জায়গা এবং অর্থ ব্যয় করি তখন গাছ, পার্ক এবং বিকল্প পরিবহণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ এবং জায়গা থাকে না। আসলে ঢাকা শহরকে আমরা কেমন দেখতে চায়? শহরের কোথাও কোথাও গাছ, পার্ক থাকবে সেটা না গাড়ির জন্য পার্কিং?

ঢাকার যাতায়াত ব্যবস্থা : বর্তমান পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ বই থেকে সংগৃহিত
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে অক্টোবর, ২০০৮ রাত ৮:২৪
৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×