এ শহরে এক সময় বাবু ভাই ছিলেন আমাদের। কতটা যন্ত্রণা তাকে দিয়েছি তার কোন হিসাব নেই। তারা স্বামী-স্ত্রী দুজনেই যন্ত্রণায় অস্থির তারপরও অভিযোগ নেই। রাজাবাজার তার বাসার দারোয়ান থেকে পাশের বাড়ির প্রতিটা মানুষই অবাক হত। এই লোক এত যন্ত্রণা সহ্য করে কি করে? বাবু ভাই বর্তমান এই পৃথিবী নামক গ্রহের একমাত্র অভিযোগহীন মানুষ।
আমরা সব কয়টা অকৃতজ্ঞের মত বাবু ভাইকে ভুলে গেছি। মে মাসে শুনেছিলাম বাবু ভাই আর ভাবী বাড়ি চলে গেছে। বাবু ভাই তার শহরে ফলের দোকান দিয়েছে। শুধুই দেশি ফল বিক্রি করেন।
কি আজব ? এত কিছু থাকতে কেন দেশি ফলের দোকান? আর কেমনই বা দোকান?
সপ্তাহ কয়েক আগে দেশে এসে এ্যানি জানায় বাবু ভাইকে দেখতে যাবে।সারাদিন ঘুরাঘুরি আর আড্ডাবাজি করে সন্ধ্যায় তিনজন গেলাম বাবু ভাইয়ের দোকান দেখতে।
বাবু ভাইয়ের দোকান ফুটপাতের ভ্যানে। আসে পাশের সবাই বাবু ভাইকে চিনে। শহরের অনেক তার কাছে ফল কিনে নেয়। বিশেষ করে গর্ভবতী মহিলাদের স্বামীরা তার বড় ক্রেতা।
বিষাক্ত রাসায়ানিকমুক্ত ফল বিক্রি করেন। ফল বিক্রির সাথে সাথে তিনি ক্রেতাদের জানান, আপনার বাড়ির গাছে যদি কোন ফল থাকে। তবে দিয়ে যাবেন। ভাল দাম পাবেন। শহরের অনেকই তার ভ্যানে ফল দিয়ে যায় বিক্রির জন্য।
এদেশে যে এখনো কত ফল বিদ্যমান আছে, তা বাবু ভাইয়ের দোকানে না গেলে বুঝতে পারবেন না।
বাবু ভাই ব্যবসা কেমন চলে?
খারাপ না, বিকেল ৩টার পর আসি। রাত ১০ টা পর্যন্ত ব্যবসা। ঢাকার আয় থেকে খুব একটা কম না। কিছু অপ্রয়োজনীয় চাহিদা বাদ দিতে হয়েছে দুজনের। তারপর এক কথায় ভাল আছি এখানে।
সবচেয়ে বড় কথা জীবন উপভোগ করছি। কত কত স্বামী নিশ্চিন্তে আমার ফল নিয়ে যায় গর্ভবতী স্ত্রীর জন্য। কত মধ্যবিত্তের মানুষজন কাগজে মুড়িয়ে আমাকে ফল বিক্রির জন্য দিয়ে যায়।
আমার মনে হয় না ফল বিক্রি করি। মনে হয় দায়িত্ব পালন করছি।
জীবন বাবু ভাইয়ের মত হয় না। অপ্রয়োজনীয় চাহিদার কাছে আমরা তিনজনই হার মেনে বসে আছি। তাই ভোর রাতের ট্রেনে ঢাকার পথে রওনা দেই।
বাবু ভাই ভালবাসা রইল, ভাল থাকেন।
ঢাকা শহরেও অনেকগুলো বাবু ভাইয়ের দরকার।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ১০:৩৬