somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মায়ের সাথে অফিস

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১২:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অফিস ! অফিস মানেই জ্বি স্যার, জ্বি স্যার। ৯টা ৫টা কাগজ-কলম, ফাইল-পত্র, কম্পিউটার-ইমেল কত কি। এই অফিস জীবনে ঘর সংসার বলে কিছু নেই। অফিস মানে অফিস, শুধুই নিয়ম আর নিয়ম। এখানে স্থান নেই আবেগ অনুভূতির। আবেগ অনুভূতি সব সকাল ৯টার আগে বিকেল ৫টার পর। ব্যক্তিগত কোন কিছু অফিস টাইমে নয় এটাই রীতিনীতি। তাই অনেক চাকুরীজীবি মা’দের চিন্তা এত ব্যস্ততার মাঝে কখন বাচ্চা নিবেন। আর সন্তান নিলেও সন্তানকে কি করে এই অফিস জীবনে সময় দিবেন। কে থাকবে সন্তানের পাশে? যৌথ পরিবারগুলোতে এই সমস্যা কম হলেও বর্তমান একক পরিবারগুলোতে এই সমস্যা ব্যাপক। তাই কর্মজীবি মায়েরা সন্তান নিতে আগ্রহ থাকার পরও সন্তান নিতে বিলম্ব করেন। কর্মজীবিদের কেউ কেউ চাকুরী ছাড়েন। কেউবা সন্তান জন্ম হবার পর পর ছুটেন ডে কেয়ার সেন্টার খোঁজে।


কর্মজীবনের এই ব্যস্ততায় মায়ের সাথে সন্তানের দূরুত্ব তৈরি হচ্ছে। এই দূরুত্ব কমিয়ে আনতে বা সমস্যার সমাধানে চলমান অফিসিয়াল নিয়মের বাইরে একটা নিয়ম শুরু করেছে ওর্য়াক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট। কর্মক্ষেত্রে মায়ের সাথে সন্তান।
হ্যাঁ। অফিসে মায়ের সাথে শিশু শুনে যতই অবাক হন না কেন আপনি। গত এক যুগের বেশি সময় প্রতিষ্ঠানটি তাদের কর্মীদের জন্য এই নিয়ম অনুসরণ করছে। ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই নারী কর্মীরা মাতৃকালীন ছুটি পেয়ে থাকেন ছয় মাস। আর ২০০৫ সাল থেকে পুরুষকর্মীরাও ১৫দিন পিতৃকালীন ছুটি পেয়ে থাকেন।

ধানমন্ডি, রায়েরবাজার কার্যলয়ে ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের পরিচালক গাউস পিয়ারী বলেন, নিশ্চয় জীবিকা নিবাহের প্রয়োজনে আমরা অনেকেই এখানে কাজ করছি। এই অফিসের কর্মীগুলো সবাই মানুষ। তাই আমরা তাদের মানবিক দিকগুলোকে বেশি প্রাধান্য দিতে চেষ্টা করেছি। নিয়ম পাল্টিয়েছি মানুষের প্রয়োজনে। প্রথমে নানা প্রতিবন্ধকতা ছিল। কিন্তু আমাদের লক্ষ্য ছিল কি করে সন্তান তার অভিভাবকের কাছে বেশি সময় পেতে পারে। এটাই আমাদের মূখ্য বিষয় ছিল। তাই আমরা সফল হয়েছি। আমাদের সন্তানরা তাদের মায়ের সাথে বেশি সময় কাটাতে পারে। যা শিশুদের সুস্থ বিকাশে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

দেখনু প্রতি মানুষের সবচেয়ে মূল্যবান সময় দিনে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টার সময় টা। প্রতিটি অফিস কর্মী তার জীবনের এই মূলবান সময়টা ব্যয় করছে অফিসের জন্য। তাই অফিসের দায়িত্ব থাকে কর্মীর জন্য সবোচ্চ কিছু দেবার। এই আর এই ভাবনা থেকেই আমরা এই সুযোগ তৈরি করি। আমরা চাই সন্তান যেন তার অভিভাবকদের সঙ্গ পায়।


নাজনীন কবির বাড়ি পঞ্চগড়। পড়াশোনার জন্য ঢাকায় আসা। তারপর চাকুরী আর বিয়ে পর স্থায়ীভাবে ঢাকায় বসবাস শুরু। ঢাকায় তার আপন বলতে শুধুই কয়েকজন বন্ধুবান্ধব আর সহপাঠি। কিন্তু তার গর্ভকালীন সময়ে তার পাশে এসে দাড়ায় তার ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের সমকর্মীরা । তার অফিস তার মাতৃকালী সময়ের অধিকাংশ নিয়ম শিথিল করা হয় তার জন্য। তার প্রথম সন্তান আহনাম হাছান খান নাফির জন্মের ৫বছর কেটেছে মায়ের সাথে নিয়মিত অফিসে আসা যাওয়ার মাঝে। নাজনীনের অফিসের সহকর্মীরা তার সন্তানের মামা, খালা। আপন মামা খালা থেকে তাদের অবস্থান নাফির কাছে কম নয়। বিভিন্ন উৎসবে যেখানে মামা-খালাদের সাথে বছরে একবার দুবার দেখা মিলে সেখানে মায়ের অফিসের মামা-খালারা প্রতিদিনের নাফির সঙ্গী। অফিস থেকেই নাফির স্কুলে যাবার প্রস্তুতি পাঠ শুরু।


শারমিন আক্তর রিনি প্রকল্প কর্মকর্তা, কাজ করছেন ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টে ২০১২ সালে । বিয়ের পর পর যখন সন্তান নেওয়া নিয়ে তার তেমন চিন্তা করতে হয়নি। মাতৃকালী সময় বিশেষ সুযোগ উপভোগের পাশাপাশি তিনি মাতৃকালী সময় নানা সুবিধার জন্য। একক পরিবারে থেকেও সন্তানের লালন পালনে তার তেমন বেগ পেতে হয়নি। তার সন্তান অরবি নিয়মিত মায়ের সাথে অফিসে আসে। অফিসের সবাই অরবিকে মানিয়ে নিয়েছে আর অরবি জন্মের পর থেকে দেখা এই মামা,খালা, ভাইয়াদের সাথেই পার করছে জীবনের অন্যন সময়। রিনি জানান অনেকেই ভাবে যে অফিসে সন্তান মানে মা’দের কাজে ঝামেলা। বিষয়টি এমন নয়। অফিসে আমার সন্তান থাকায় আমি আরো বেশি নিশ্চিন্তে কাজ করতে পারি।

মারুফ হোসাইন, প্রোগ্রাম ম্যানেজার কাজ করছেন ২০০৫ সাল থেকে । নানা ধরণের সামাজিক ও সাংস্কৃতি কর্মকান্ডের সাথে জড়িত। কিন্তু এই পরিচয় ছাপিয়ে তার পরিচয় তিনি একজন পিতা। তিনি তার সন্তান জন্মের সময় পিতৃকালীন ছুটি পেয়েছিলেন। এই ছুটি তাকে মা ও নবজাতকের নিবিড় পরিচর্যায় বিশেষ ভূমিকা পাল করেছে।

বিশেষ অনুষ্ঠানগুলোতে অফিসের কর্মীদের পরিবার সদ্যসের আমন্ত্রণ জানানো হয়। তাছাড়া প্রতিমাসে শেষ বৃহস্পতিবার বিকেলে আয়োজন করা হয় ফ্যামিলি ডে। ঐদিন সকল বর্তমান ও সাবেক কর্মীদের শিশুরা একসাথে মিলিত হয়। আয়োজন হয় নানা ধরনের খেলাধূলা ও সাংস্কৃতি অনুষ্ঠানের। বর্তমানে সারা পৃথিবীতে ছোট বড় প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মীর শিশুদের জন্য ডে কেয়ার সেন্টার তৈরি করছে। শিশুর সুস্থ বিকাশের বিশেষ সময়ের মা- বাবার সান্নিধ্যের বিকল্প নেই। ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট “ মায়ের সাথে অফিস” পদক্ষেপটি অন্যদের জন্যও দৃষ্টান্ত হতে পারে।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১২:০৭
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

দুলে উঠে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৫৬

দুলে উঠে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

মন খুশিতে দুলে দুলে ‍উঠে
যখনই শুনতে পাই ঈদ শীঘ্রই
আসছে সুখকর করতে দিন, মুহূর্ত
তা প্রায় সবাকে করে আনন্দিত!
নতুন রঙিন পোশাক আনে কিনে
তখন ঐশী বাণী সবাই শুনে।
যদি কারো মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তরে নিয়ে এ ভাবনা

লিখেছেন মৌন পাঠক, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩০

তরে নিয়ে এ ভাবনা,
এর শুরু ঠিক আজ না

সেই কৈশোরে পা দেয়ার দিন
যখন পুরো দুনিয়া রঙীন
দিকে দিকে ফোটে ফুল বসন্ত বিহীন
চেনা সব মানুষগুলো, হয়ে ওঠে অচিন
জীবনের আবর্তে, জীবন নবীন

তোকে দেখেছিলাম,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×