somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কেমন পুলিশ চাই!

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ২:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সে অনেক বছর আগের কথা | আমার এক বড় ভাই দায়িত্ব পেলেন পুলিশের নানা অনিয়ম নিয়ে নিউজ করার। যেহেতু তিনি টেলিভিশনে কাজ করেন তাই তার ফুটেজ লাগবে। ঢাকায় কোথায় কোথায় পুলিশ টাকা খায়, অকর্ম করে তার বিশাল ফর্দ নিলেন।

সপ্তাহখানিকের মধ্যে কিছু ফুটেজ নিয়ে প্রায় তৃপ্তির ঢেকুর তার। একদিন সকালে তিনি আমাকে বললেন আজ ট্রাফিক পুলিশকে ধরব। সারাদিন রাস্তায় ঘুরে ঘুরে ট্রাফিক পুলিশের দুইটাকা পাঁচ টাকা মুঠো বন্দির ছবি নিলেন। খুবই তৃপ্ত ঢেকুর তার।

দুপুর প্রায় তখন শেষ হয় হয়। ৩২ নাম্বার থেকে আমরা যাচ্ছি নিউ মার্কেটের দিকে। রাস্তায় এক মোড়ে পুলিশ মাত্র একটু ছায়ায় গিয়ে দাড়াল। এই সুযোগে রিকসা-গাড়ি মিলে যানজট লাগিয়ে দিল।

ওমনি ক্যামেরা তাক। পুলিশ ব্যাটা বিশ্রাম নেয়, রাস্তায় যানজট। ভাল ফুটেজ, ভাল ভাল। ফুটেজ নেওয়া শেষ।

একবার তো পুলিশের বক্তব্য নেওয়া দরকার। তাই এগিয়ে গেল ক্যামেরা-সাংবাদিক, আমি পিছু পিছু।

পুলিশ ব্যাটা যানজট লাগিয়ে তখন ভাত খাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে রাস্তার ধারে। কত বড় সাহস। মানুষ যানজটে ভোগে সে ভাত খায়?

ক্যামেরা তাক করে প্রশ্ন একটাই আপনি এখানে আর রাস্তায় যানজট?
পুলিশের অনুরোধ ভাই, ভাই, ভাই । কিন্তু কোন ছাড় নাই ক্যামেরা তাক তাক। সাংবাদিক প্রশ্ন ছুড়ছেন একটার পর একটা। ভাই, ভাই বলে তিনি সাংবাদিকে সামলাতে চাইলেন।কিন্তু আজ কোন ছাড় নেই।

হুট করে পুলিশ ব্যাটা ঘুরে দাড়ালেন। তারপর সে ভাতের পাত্রটার ঢাকনা সরিয়ে ডাকলেন এদিকে আসেন। আমি কাজ ফাঁকি দিয়ে বিশ্রাম নিচ্ছি, তার নিউজ করেন।

কিন্তু এই ভাতের নিউজ করবেন না? দিনে ১৪ ঘন্টার বেশি ডিউটি করি? ডিউটি শেষে কোথায় গিয়ে ঘুমাই সেই বিছানার নিউজ করবেন না?

আমি এগিয়ে গিয়ে দেখি পুলিশ ব্যাটা যে ভাত খাবার প্রস্তুতি নিয়েছে। তা অনেক আগেই গরমে খাবার অযোগ্য হয়ে গেছে।

যান যান নিউজ করেন। বলে তিনি পানি দিয়ে ধুয়ে সে ভাত ডাল দিয়ে খাচ্ছেন।

ক্যামেরা চলছে। ভয়ানক ক্লান্ত, ক্ষুদার্ত সেই পুলিশের কাছে তখন ক্যামেরা কিছুই নয়।চলুক ক্যামেরা, চলুক।

পৃথিবীর ভয়ানকতম অপরাধের সাক্ষী হয়ে আমার সেই সাংবাদিক বড় ভাই, বন্ধু নিউজ করলেন।

ধারাবাহিক প্রতিবেদন। পুলিশের নানা দূভোগ নিয়ে সংবাদ।

ঢাকার রাস্তায় ডিউটিরত পুলিশ কি খায়? কত ঘন্টা ডিউটি করে? পুলিশ ব্যারেকে তাদের ঘুমানোর জায়গা কেমন? শত শত অভিযোগ। এত এত অভিযোগের মাঝে হারিয়ে গেল দুই টাকা পাঁচ টাকা চাঁদা তুলার ফুটেজ।

এই সংবাদ সংগ্রহের সময় একজন পুলিশ বলেছিলেন। একদিন যদি এই রংচটা খসখসে পোশাকটা পড়ে তীব্র রোদ আর শব্দের মাঝে শাহবাগে ঘন্টা তিন ডিউটি করলে আপনাদের পুলিশ সম্পর্কে ধারনা পাল্টে যাবে।

আমি গরমে অস্থির পাতলা পাঞ্জাবি পড়া। পুলিশের পোশাকটায় হাত দিয়ে দেখার সাহস পাইনি। শুধু বুঝতে পেরেছিলাম এই রকম কাপড় দিয়ে বানানো শার্ট পড়ে মানুষ ফ্যানের নিচেও বসে থাকতে পারবে না।

টেলিভিশনে সংবাদ প্রচার হল। অনেক পুলিশ ধন্যবাদ দিল বড় ভাইকে এই রকম একটা মানবিক সংবাদ প্রকাশের জন্য। যে পুলিশ কর্তারা তাকে সহযোগিতা করল তাদের ধন্যবাদ দিলেন তিনি। মাঝখানে খানিকটা ধন্যবাদ আমাকে দিলেন। বলেছিলেন সাংবাদিক হলে ভাল হত।

না আমি সাংবাদিক হতে পারিনি, আমার সে যোগত্যা হয়নি।

আাজ অনেক বছর পর আমি জানি না। ঢাকায় রাস্তায় ডিউটিরত পুলিশের নীল গাড়িগুলো আজও গরমের দিন ঘেমে কাদাকাদা হয়ে যাওয়া ভাতই বিলি করে কিনা?

পুলিশের পোষাকের কাপড়গুলো আগের থেকে আরো কিছুটা আরামদায়ক হয়েছে কিনা?

এখনো কি পুলিশগুলো ১২/১৩/১৪ ঘন্টা ডিউটি করে?

ডিউটি শেষে ব্যারেটে গিয়ে তারা একটা পরিপাটি বিছানা পায় তো। ক্লান্তি দূর করতে সুখের নিদ্রায় যাবে বলে?

যদি আমার এই সবগুলো প্রশ্নের উত্তর না হয়। তবে বলি এতটা অমানবিক পরিবেশে পুলিশকে রেখে একটা মানবিক পুলিশ প্রত্যাশা করা অন্যায়।

পোষাক খুলে ফেলার পর ঘরে ফেরা সেই পুলিশটা আমাদের কারো বাবা, বন্ধু, ভাই, বান্ধবী,বোন,বউ, স্বামী কিংবা নিকট আত্মীয়। প্রত্যাশা করি শুধুই পুলিশের জন্য নয়, পুলিশ নামক মানুষগুলোর নানা সমস্যার সমাধানের জন্য বছরে দু একটা মানবিক সংবাদ প্রকাশ পাবে।

মানবিক পুলিশ প্রত্যাশী আমরা, একদিন পুলিশের জন্য একটা মানবিক কর্মক্ষেত্র তৈরি করব।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ২:৫৭
১৪টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×