আমাদের ছোট শহরে বছরে একবার দুবার আগুন লাগত প্রায়ই। আমরা দল বেধে যেতাম আগুন নিভাতে। এলাকার বড় ভাইদের যন্ত্রণায় আমরা সুযোগ পেতাম কম।
আমাদের এলাকায় ছোট লঞ্চ, ট্রলার ডুবার ঘটনাও দেখেছি। শত শত মানুষ গিয়েছে উদ্ধারে। কত তাড়াতাড়ি লাশগুলো দাফন হবে তা নিয়ে ব্যস্ত সবাই।
প্রায়ই কালবৈশাখী ঝড় হত। শত শত বাড়ি ঘর ভেঙ্গে পড়ত। এলাকার কিছু বড় ভাই ঘর মেরামতের জন্য বাড়ি বাড়ি থেকে সাহায্য নিতেন। নতুুন ঘর উঠত।
কারো শিশু জন্ম হলে পুরো এলাকায় জেনে যেতাম আমরা সবাই। পড়ার মোড়ের দাড়ালে জেনে যেতাম কার বাড়িতে কবে বিয়ে। খাবার পরিবেশনের জন্য কোন ভাড়াটে লোকদের দরকার হত না। এলাকার বড় ভাইরাই ভরসা।
বাসায় কেউ অসুস্থ। একটা চিৎকার দিতে পারলেই হল। পাড়ার মোড় পর্যন্ত সেই চিৎকারের শব্দ না পৌছালেও। আসে পাশের একজন না একজন ছুটে আসতো।
বাকি কাজ বড় ভাইদের। ডাক্তার আনা, রিকসা ডাকা সবই তাদের দায়িত্ব কর্তব্য। কত রোগী দেখেছি হাসপাতালে চলে গেছে নিকট আত্মীয় ছাড়াই। শুধুমাত্র বড় ভাইদের সহয়তায়।
কত কত গর্ভবতীর পাশে দাড়িয়েছে পড়া মোড়ের বড় ভাইদের দেওয়া রক্ত দিয়ে।
আমার সেই ছোট ছোট সরু রাস্তার শহর, সারি সারি টিনের ঘর, লুঙ্গি পড়া বড় ভাই থেকেও এ শহর উন্নত।
পাড়ার মোড়ে বড় ভাই হবার বসয় এখন আমার। আমি এলাকার বড় ভাই না। আমি সেলফোন ইন্টারনেট নিয়ে ঘরে থাকি। ঘরে বসে আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সামাজিকতার চর্চ্চা করি।
আগুন লাগার সাথে সাথে কিভাবে লাগল, কারা লাগাল, সররকার ধুয়ে ফেলি। লঞ্চ ডুবলে আমি যাই না। নতুন শিশুর জন্মের খবর পাই না। পাড়ায় কার বিয়ে, কার মৃত্যু কোন খবর জানার আগ্রহ নেই আমার।
আমার সব আগ্রহ সামাজিক হওয়া নিয়ে। আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই ব্যস্ত। হাসি, কান্না, ভালবাসা একটা ইমো চাপ দিয়ে আমি আমার দায়িত্ব পালন করি।
আমার লাইক, শেয়ারের যুগে জন্ম,মৃত্যু, ঝড়, আগুন, সুখ-দুঃখে ছুটা আমার লুঙ্গি পড়া বড় ভাইদের শূণ্যতা অনুভব করি।
আমার মত ফেবুবাসী না হয়ে।হয়ত আমার বড় ভাইরা এখন নেপাল ছুটে যেত, সারি সারি লাশ যত্ন করে নিয়ে আসত। আন্তরিকতা নিয়ে কাঠমুন্ডু হাসপাতালের বারান্দাগুলোতে তারা পায়চারি করত।
কোন প্রকার সকারী ত্রান, এনজিওর উপর ভরসা না করে মিরপুরের মোল্লা বস্তিতে আজকেই কিছু ঘর ওঠে যেত।
বয়স আমার পাড়ার মোড়ের বড় ভাই হবার। আমি পাড়ার মোড়ের বড় ভাই না হয়ে ফেবু’র বড় ভাই হয়ে গেলাম। তাই সমস্যার সমাধান হয় না। শুধুই বিরোধ বাড়ে।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৩:৫৬