এই শহরে শাহবাগের বইয়ের দোকানগুলো টিকে থাকার লড়াইয়ে হেরে গিয়ে যখন রঙিন পোষাকের দোকান হয় । তখন কারো কারো বুকে নাকি চিনচিন ব্যাথা হয়। এই রকম চিনচিন ব্যাথাওয়ালা একটা মানুষকে আমি চিনি। মানুষটা শুধু বাঁচতে চায় না। চায় জীবন উপভোগ করতে । শুধুই জীবন উপভোগের লোভে, সে ঢাকা শহর ছেড়ে গ্রামে চলে গেল।
চিনচিন বুকে ব্যাথাওয়ালা মানুষটা আমাকে চিঠি লিখেছে।
প্রিয় শোভন,
ঢাকা আমার ভাল লাগে না।শুধুই পোষাক আর খাবারের দোকান এই শহরের মোড়ে মোড়ে। এটা অসুস্থতার লক্ষণ। যে শহরের বইয়ের দোকান তুলে খাবারের দোকান পোষাকের দোকান স্থান করে নেয়। সে শহরের মানুষগুলোর বিবেক মুমূর্ষ । সুযোগ থাকলেই শহরটা ছেড়ে দে।
ভালবাসাসহ
চিনচিন ব্যাথাওয়ালা বন্ধু
আমি শহর ছাড়তে পারছি না এখনো। আমি রাস্তায় হাটতে হাটতে মাঝে মাঝে প্রদীপ বালার হে রাষ্ট্রযন্ত্র কবিতা জাবর কাটি। আর পুলিশের এনকাউন্টারে মরে যাওয়া ১৯ বছরের কোডামাগুন্ডলাকে খুঁজি। কোডামাগুন্ডলা কে আমি জানি না। তবে জানি দুনিয়ার কোন শহর রাষ্ট্র কোডামাগুন্ডলার নিরাপদ আশ্রয়স্থল নয়। কারণ রাষ্ট্র বিবেক ধারন করত চায় না।
হে রাষ্ট্রযন্ত্র শুনতে পাচ্ছ? – প্রদীপ বালা
(ছত্তিশগড়ে মাওবাদী সন্দেহে পুলিশের ভুয়ো এনকাউন্টারে মৃত ১৯ বছরের বিবেক কোডামাগুন্ডলা – ১৫ই জুন ২০১৫ খবরে প্রকাশিত)
......
..............................................
......
এই অসুখের শহরে
আমার কোন বৃষ্টি ভেজা বিবেক নেই
.......
.......
ঊনিশ বছরের বিবেক লাল রঙ হতে চেয়েছিল
শরীরের ভেতরের ধমনীতে যে বিশুদ্ধ লাল রঙ থাকে
সেইরকম
কিন্তু আমার স্বদেশের কোন ধমনী নেই
তাই তার কোন বিশুদ্ধ লাল রঙও নেই
বিবেককে ধারণ করার জায়গাও নেই!
আছে শুধু শকুনের খোঁয়াড়
আর সাঁজোয়া ভবনের বেশ্যার দালালেরা
হে রাষ্ট্রযন্ত্র শুনতে পাচ্ছ,
ঊনিশ বছরের বিবেক তোমার ধমনী হতে চেয়েছিল
তুমি তার বাড়িতে বেশ্যার দালাল পাঠালে
এনকাউন্টারের আগে তার শরীরের সমস্ত
হাড় মেরে ভেঙে দিলে
তারপর শবাসনে শুয়ে পড়লে!
ঊনিশ বছরের এক বিবেককে এত ভয়?
বিবেক তোমার জন্য কেউ হাঁটছে
বৃষ্টির জল, ছাঁট, কাদা উপেক্ষা করে হাঁটছে
অসুখের স্বদেশ, চোখ রাঙানি, সাঁজোয়া ভবন
কর্পোরেট সমাজ
উপেক্ষা করে হাঁটছে
তাদের কাঁধে রাইফেল, বুলেটে বুলেটে লাল রঙ
তোমার জন্য তুলে রাখা একটি বোমায়
আবার বারুদ ঠাসা হচ্ছে
যেকোন মুহুর্তে তা ফাটতে পারে…
হে রাষ্ট্রযন্ত্র তুমি কি দেখতে পাচ্ছ?
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মার্চ, ২০১৮ দুপুর ১:৫১