অমেরিকার শিকাগো শহর। ১৯০১ সালের ৫ ই ডিসেম্বর। শিকাগো শহরে সেদিন ভীষন ঠান্ডা। এই ঠান্ডার মধ্যে অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহন করল এক শিশু, বাবা মায়ের পঞ্চম সন্তান, বাবার নাম ইলিয়াস। পেশায় ছুতার মিস্ত্রী পঞ্চম সন্তানের আবির্ভাবের পর অভাবের জ্বালায় শহর ছেড়ে গ্রামের দিকে চলে যান। শিশুটির নাম রাখা হয় ওয়াল্ট। গ্রাম্য পরিবেশে ওয়াল্টের খেলার সঙ্গী ছিল ইদূর, বিড়াল, কুকুর, হাস মুরগী, এদিকে গ্রামে এসে এক খামারের কাজ করতে করতে ইলিয়াস অসুস্থ্য হয়ে পরেন। গ্রাম ছেড়ে কানসাস শহরের কাছে এসে বাসা বাধলেন ইলিয়াস।
শহরে এসে সংবাদ পত্রের এজেন্ট হয়ে বসলেন ইলিয়াস আর ছেলে ওয়াল্ট হলেন হকার, এভাবে মিলে বাপ ছেলে সাত বৎসর কাজ করলেন। কিছু টাকা পয়সা হাতে আসতে শহরের এক কোনায় পার্টনারশিপে জেলি তৈরীর কাজ এ হাত দিলেন ইলিয়াস আর ছেলে ওয়াল্ট গেলেন স্কুলে। ষোল বৎসর বয়সে স্কুলে ভর্তি হলেও স্কুলের পড়ায় একদম মন ছিল না ওয়াল্টের। তবে আকার হাত ছিল জন্মগত ভাবে। স্কুল ম্যাগাজিনের আর্ট এডিটর হয়ে দারুন সুন্দর ম্যাগাজিন প্রকাশ করে সুনাম কুড়ালেন সকলের। কিন্ত ম্যাগাজিন নিয়ে তো আর স্কুল না। পড়াশুনা, হোম টাস্ক, পরীক্ষা এইসব করতে করতে গায়ে জ্বর আসে ওয়াল্টের তাই বছর খানেকের মধ্যে স্কুলের পাট চুকালেন ওয়াল্ট। ইলিয়াস তার জেলির কারখানায় কাজ করতে বললেই বেকে বসেন ওয়াল্ট। ওয়াল্টের প্রবল ইচ্ছা কোন স্টুডিওতে শিল্পি হিসাবে কাজ করবে। আর এজন্য ই কানশাস শহরে একটি ছোট খাট ষ্টুডিও তে কাজ জুটিয়ে নেন ওয়াল্ট। ওখানে পরিচয় হয় কার্টুন শিল্পী ডয়েফর্মের সাথে।
ষ্টুডিওর কাজ ছেড়ে নিজেই একটি ষ্টুডিও দেন ওয়াল্ট কিন্ত তা একেবারে চললনা, ওয়াল্ট ঝুকি নিয়ে কানশাস ছেড়ে চলে আসেন ক্যালির্ফোনিয়া। ওখানেই বিখ্যাত উইনির্ভাসাল ষ্টুডিওর সাথে যোগাযোগ করেন, হলিঊদের বহু সিনেমার কাজ পেত ইউনির্ভাসাল ষ্টুডিও এবং ছোট ছোট সংস্থার কাছ থেকে কাজ করিয়ে নিত। এরকম একটা ছোট খাট কাজের অর্ডার পেল ওয়াল্ট। ব্যাস নিজের নামে একটা সংস্থা খুলে কাজে নেমে পড়লেন বন্ধু ডয়েফর্ম ও যোগ দিল। এভাবে টুক টাক কাজের বরাত পেয়ে সংস্থা টিকে একটু একটু বড় করতে লাগলেন। ১৯২৭ সনে ওয়াল্টের জীবন একেবারে পালটে গেল। ১৯২৭ সালের আগে পর্যন্ত নির্বাক চলচিত্রর যুগ। ১৯২৭ এ শুরু হল সবাক চলচিত্র। চারদিকে তোড়জোড়। ওয়াল্ট ও একটা কার্টুন ফিল্ম তৈরীর প্লান করতে লাগল। শুরু হল ইতিহাস।
মিডিয়া জগতে অ্যানিমেশন ও গ্রাফিক্সে এক নতুনমাত্রা যোগ করে ওয়াল্ট ডিজনি। ওয়াল্টার ইলিয়াস ডিজনির হাত ধরে যাত্রা শুরু করা এ কম্পানিটির বর্তমান লোগো ওয়াল্ট ডিজনি লেখাটির পাশাপাশি একটি দুর্গ ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। কম্পানির প্রতিনিধিত্ব হিসেবে লোগোতে ওয়াল্ট ডিজনি লেখাটি ব্যবহার করে কম্পানি। অন্যদিকে গ্রাফিক্স ও অ্যানিমেশনের সম্পূর্ণ নতুন একটি দিগন্ত উন্মোচনের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয় দুর্গটি। ওয়াল্ট ডিজনির বর্তমান লোগোটির ব্যবহার শুরু হয় ২০০০ সালে। পরে ২০০৬ সালে লোগোতে কিছু উজ্জ্বল তারার ছবি জুড়ে দেওয়া হয়। মূলত কম্পানির স্বপ্নের প্রতিফলন ফুটিয়ে তুলতেই লোগোতে কয়েকটি পড়ন্ত তারার ছবিও ব্যবহৃত হয়েছে।
মিকি মাউস
আজকের যে মিকি মাউস, শুরুতে কিন্তু তার নাম ‘মিকি মাউস’ ছিলোনা। প্রথমে মিষ্টি সে ইঁদুরটির নাম ছিলো ‘মর্টিমার’। কিন্তু পরে ডিজনি ভেবে দেখলেন, ইঁদুরটির জন্য এই নামটি ঠিক যেন খাপ খাচ্ছে না। তখন ডিজনির স্ত্রী লিলিয়ান নামটা বদলে দিয়েছিলেন। ইঁদুরটির নাম পাল্টে রাখলেন ‘মিকি মাউস’। শুরুতে মিকে মাঊস মোটেই জনপ্রিয়তা পায়নি, পরে মিকির মুখে কথা বসানোর পর মিকির সাফল্য শুরু
স্নো হোয়াইট আর সাত বামন
স্নো হোয়াইট আর সাত বামনের গল্পও ছোট কালে অনেক শুনেছি। হ্যাঁ, এই কার্টুনটিও ডিজনিরই সৃষ্টি। মিকি মাউস তো বিশাল জনপ্রিয়তা পেল। এবার ডিজনি ঠিক করলেন, লম্বা সময়ের পরিকল্পনা করে একটি কার্টুন তৈরি করা যাক। ১৯৩৪ সাল থেকে ১৯৩৭ সাল পর্যন্ত চললো এই কার্টুন তৈরির কাজ। ১৯৩৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে মুক্তি পেল স্নো হোয়াইট আর সাত বামন। আর যথারীতি, ব্যাপক সাফল্যও লাভ করলো।
এর বাইরেও কিন্ত বেশ কিছু অসাধারন কার্টুনের স্রষ্টা কিন্ত ওয়াল্ট পপাই দ্য সেইলরম্যান, সিন্ডারেলা, বাগস বানি, পিনোকিও, পিটারপ্যান, উইনি অ্যান্ড দ্য পুহ, ডোনাল্ড ডাক, প্লুটো, গুফি, ডালমোশিয়ান’স, স্লিপিং প্রিন্সেস- এগুলো সবই ওয়াল্ট ডিজনির সৃষ্টি।
তিনি একাই ৫৭৬টি কার্টুন-চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেছেন; আর পরিচালনা করেছেন মোটমাট ১১১টি। শুধু তাই নয়, তিনি নিজেও অভিনয় করেছেন ৯টিতে।শুধুমাত্র অস্কারই পেয়েছেন ২২ বার! এটা কিন্তু একটা রেকর্ডই। আর অস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন ৫৯ বার! অস্কার ছাড়াও, অন্যান্য নামীদামী পুরস্কার পেয়েছেন আরও ৪১টি।
১৯৬৬ সালের ১৫ই ডিসেম্বর এই দুনিয়া থেকে পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নেয় এই মাহান মানুষটি
সুত্রঃ
Click This Link
Click This Link
Click This Link
Click This Link
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মার্চ, ২০১৩ ভোর ৬:৩৮