বাংলার দূর্গাপুজোর প্রথম প্রচলন হয়েছিল সম্ভবত রাজা গনেশের আমলে। সেটা মোটামুটি পঞ্চদশ শতকের মাঝামাঝি। মুসলমান রাজাদের প্রভাবে হিন্দু রাজারা প্রায় ছন্নছাড়া। একমাত্র রাজা গনেশের স্বধর্মপ্রীতি ছিল মারাত্নক।তৎকালীন পন্ডিতরা বুদ্বি দিলেন অশ্বমেধযজ্ঞ তুল্য দূর্গাপুজো করতে।, একই সঙ্গে সম্ভবত তার নির্দেশে তার সভাকবি কৃত্তিবাস ওঝা বাংলা রামায়নে দূর্গাপুজোর বর্ননা দিলেন। অর্থাৎ বাঙ্গালী জানল অকাল বোধনতত্ত্ব।
সুলতানি শাষন প্রবর্তনের সময় থেকে শাক্ত বা মাতৃপূজোর শুরু হলেও অনেকের মতে বৈষ্ণব ভাবধারা থেকেই শক্তি ভাবনার উৎপত্তি। আর বৈষ্ণব সাধনার ক্ষেত্রভূমিতো নদিয়া। বর্মন, পাল, সেন যুগে বিশেষ করে বল্লাল সেন ও লক্ষন সেনের সময় বৈষ্ণব ধর্মের অনুষঙ্গী হিসাবে শক্তিধারার উদ্ভাস। ঐতিহাসিকদের ধারনা বাংলায় বৈষ্ণব ধর্মের প্রচলন সেই সময় থেকেই।। পাল যুগের মহিষাসুরমর্দিনীর একটি মূর্তি সেই সাক্ষ্যকে বহন করে। সেযুগে নদীয়া ছিল বৈষ্ণব সাধনার খাসতালুক, সেখানেই সম্ভবত রচিত হয়েছিল রঘুনন্দনের দূর্ঘা উৎসব বিবেক ও দূর্গাভক্তিতরিঙ্গিনী, তিথিতত্ত্ব্, শুলপানি আচার্যের দূর্গা উৎসব বিবেক ইত্যাদি দূর্গাপূজা কেন্দ্রিক বই, রচয়িতা মৈথিলা কবি বিদ্যাপতি।
দুর্গাপূজোকে সর্বজনীন করে তোলার ক্ষেত্রে সিংহ ভাগ কৃতিত্ত্ব অবশ্য কংশ নারায়নের প্রাপ্য। তাকে আবার টেক্কা দেবার জন্য রাজসাহিব এক সমৃদ্বশালী জমিদার রাজা জগৎনারায়ন ৯ লক্ষ্য টাকা ব্যয়ে বাসন্তী পুজা করে ছিলেন। যাই হোক বিশিষ্ট পন্ডিত রমেশ শাস্ত্রীর পরামর্শ মেনে রাজকীয় ভাবে দূর্গাপুজা করে ই তিহাস রচনা করেন কংশ নারায়ন। সেটা সম্ভবত ১৬০৬ সালে অথবা ১৬১০ সালে। তার প্রায় ১০০ বছর পরে বাংলার বুকে বারোয়ারী পুজা হল হুগলীর গুপ্তপাড়ায়। শ্রীচৈতন্যদেবের সময় ঐতিহাসিক ঘটনা হল দূর্গা পুজোর প্রচলন তার আগে ছোটখাট ভাবে এই পূজো হলেও কংশ নারায়ন ( দ্বিতীয় বল্লাল সেন নামে পরিচিত ছিলেন) একমাত্র ধর্ম জাগরনের ভাবনায় উদ্রেক হয়ে এই পুজো শুরু করেন।
তাহেরপুর রাজ পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন বিজয় লস্কর নামে এক বারেন্দ্র ব্রাক্ষ্মন। দিল্লীর সুলতান তাকে বঙ্গের পশ্চিমদ্বার রক্ষার দ্বায়িত্ব দিয়েছিলেন। একই সঙ্গে তিনি সিঙ্ঘ উপাধি লাভ করেন।তারই পুত্র উদয়নারায়ন ছিলেন রাজা গনেশের শ্যালক। এই উদয়ের পুত্র হরনারায়ন এবং কংশনারায়ন। বাংলার প্রথম দূর্গাপুজো করতে সে সময় ব্যায় হয়েছিল প্রায় সারে ৮ লক্ষ টাকা।
ইংরেজ সময় যে সব রাজা বাবু সংস্কৃতিতে গা ভাসিয়ে ছিলেন তার মধ্যে নদিয়ার মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র এবং শোভাবাজারের রাজা নবকৃষ্ণ দেব। আষাড় মাসের উলটোরথের দিন থেকে পুজোর প্রস্তুতি সংস্কৃতি এই সময় থেকেই চালু হয়। বিমলচন্দ্র ঘোষের “দূর্গাপুজা একাল থেকে সেকাল” বই থেকেই জানা যায় নবকৃষ্ণ প্রথম দুর্গাপূজো উপলক্ষ্যে নটি নাচের আয়োজন করেন।
পরবর্তীকালে ১৭৫৭ সালে শোভাবাজারের তালুকদার রাজা নবকৃষ্ণদেব নবাব সিরাজঊদ্দৌলার পরাজয়ে উল্লাসিত হয়ে দূর্গাপুজো করে ছিলেন। গবেষক বিনয় ঘোষের মতে, এই দুই রাজা ছাড়া, আন্দুলের রাজা রামচন্দ্র রায়, ভূ কৈলাশের দেওয়ান গোকুল চন্দ্র ঘোষাল, দেওয়ান গঙ্গা গোবিন্দ সিংহ প্রমুখের পারিবারিক ফিষ্ট এ পরিনত হয়েছিল।
সূত্রঃ বিমলচন্দ্র ঘোষের “দূর্গাপুজা একাল থেকে সেকাল”
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মার্চ, ২০১৩ ভোর ৬:৪২