somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিমানবাহী জাহাজের ইতিহাস ও বর্তমান হিসাব

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ক্রুইজার ইউ এস এস ব্রিমিংহাম এর ডেক থেকে প্রথম উড্ডয়ন করে একটি প্লেন আর সাথে সাথে ইতিহাসে ঢূকে যায় প্রথম কোন প্লেন কোন জাহাজ থেকে ঊড্ডয়নের। আর প্রথম ল্যান্ডিংয়ের ঘটনা ঘটে ১৯১১ সালে। সেপ্টেম্বর ১৯১৪ সালে জাপানী রাজকীয় নৌবহর থেকে জার্মান নৌবহরের ওপর প্রথম বিমান বাহী জাহাজ থেকে আক্রমন চালনা করা হয়, জাহাজের নাম 'ওয়াকামিয়া'। সময় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। এটি চারটি মরিস ফারম্যান সী প্লেন বহন করত।

১৯১৮ সালে পৃথিবীর প্রথম সত্যিকারের বিমানবাহী জাহাজের জন্ম হয় যা থেকে প্লেনের উড্ডয়ন অবতরন সবই সম্ভব হত। এর নাম ‘এইচ এম এস আর্গুস’ এটি একটি ব্রিটিশ জাহাজ। গত শতাব্দীর বিশ এর দশকে তরতর করে বিমান বাহী জাহাজের অগ্রগতি সাধিত হতে লাগল ‘হোসো’ (১৯২২) ‘এইচ এম এস হার্মিস’ ((১৯২৪) ‘বিয়ার্ন’ ( ১৯২৭)। এই সময়ের জাহাজ গুলোকে কিন্তু বিমানবাহী হিসাবে ডিজাইন করা হয়নি এ গুলোর সবই ছিল হয় ব্যাটল ক্রুইজার, কার্গো শিপ না হয় ব্যাটল শিপ। এ গুলোকে একটু মডিফাই করে বিমানবাহী জাহাজে রূপান্তর করা হয়।

১৯২২ সালে ওয়াশিংটন ন্যাভাল ট্রিটি অনুসারে ইউ এস আর ইউ কে ১৩৫০০০ টনের বিমানবাহী জাহাজের অনুমোদন দেয়। এরপরেই আর্ভিবূত হয় লেক্সিংটন ক্লাশ ন্যাভাল ক্যারিয়ার (১৯২৭)। ১৯২০ সালের পর বিভিন্ন দেশের নেভী বিমানবাহী রনপোত নির্মানের আদেশ দেয় যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্বে ইউ এস, ইউ কে আর জাপানের নৌবাহিনীর মূল শক্তি হিসাবে কাজ করে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্বের সময় বিভিন্ন টাইপের বিমান বাহী জাহাজের আবির্ভাব ঘটে, এস্কর্ট বিমানবাহী জাহাজ যেমন ‘ইউ এস এস বোগী’। এরপরেই আসে লাইট এয়ার ক্রাফট ক্যারিয়ার। আসলে লাইট এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার আর এস্কর্ট বিমানবাহী জাহাজের মধ্যে খুব একটা পার্থক্য ছিলনা। তবে লাইট এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার এর আয়তন আর স্পীড কিছুটা বেশি ছিল। এ পর্যায়ে আমরা ‘ইউ এস এস ইন্ডিপেন্ডেন্ট’ এর নাম মনে করতে পারি। ইউ কে এ পর্যায়ে এসে লাইট ফ্লিট ক্যারিয়ার তৈরী করে। ১৯৮০ সাল পর্যন্ত লাইট ফ্লিট ক্যারিয়ারই ছিল সব চেয়ে আধুনিক।

আগের কালের ব্যাটল শিপ যে ভুমিকা রাখত বর্তমানের ক্যাপিটাল শিপ একই ভূমিকা রাখে।এই সুপার ক্যারিয়ার গুলো ৭৫০০০ টনের বেশী বহন ক্ষমতা সম্পন্ন আর নিউক্লিয়ার পাওয়ার চালিত। ‘ইউ এস এস টরা’ (Tawara) ‘এইচ এম এস ওসেন’ এয়ার ক্রাফট ক্যারিয়ার হলেও এগুলো আসলে হেলিকপ্টার ক্যারিয়ার কিন্তু একই সাথে ছোট যুদ্ধ বিমান বহনেও সক্ষম।

বিমানবাহী জাহাজ যুদ্ধ বিমান দিয়ে আক্রমনে সক্ষম হলেও এর নিজের প্রতিরক্ষা কিন্তু খুব একটা ভাল না যার কার প্রতি এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারের সাথে সাপোর্টিং যুদ্ধ জাহাজ হিসাবে সাবমেরিন, ডেষ্ট্রয়ার, ফ্রিগেট ইত্যাদি থাকে। এদের এক সাথে ক্যারিয়ার ব্যাটল গ্রুপ বলা হয়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে নেভাল ট্রিটি দ্বারা এয়ার ক্রাফট ক্যারিয়ারের আকার আকৃতি সীমাবদ্ধ ছিল কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ্বের পর এর আকার আকৃতিগত সীমাবদ্ধতা উঠে গেছে, বর্তমানে ইউ এস এ নিমিৎজ ক্লাশের বিমানবাহী রনপোত ব্যাবহার করে। যেগুলো আকারে সব ৭৫০০০ টনের ওপরে, নিউক্লিয়ার শক্তি চালিত আর কম বেশী প্রায় সব জাহাজে ৯০ টির মত বিমান থাকে। চলুন দেখি কার হাতে কয়টা বিমানবাহী জাহাজ আছে।

ব্রাজিল (১)

NAe São Paulo (A12): ৩২০০০ টনের এই ক্যারয়ার টি ফ্রান্সের ছিল নাম ছিল FS Foch পরে ২০০০ সালে ব্রাজিল এটি কিনে নেয়। এটি ১৯৬০ সালে তৈরী হয়। NAe São Paulo (A12) তে ৬৪ জন অফিসারসহ ১২৭৪ জন নাবিক আছে। এই জাহাজে ৮১ টা ঊড্ডয়নক্ষম বিমান ও হেলিকপ্টার আছে।
চায়না (১)

Liaoning: ৫৭০০০ টনের সোভিয়েত কুৎনেসভ ক্লাশ ক্যারিয়ার নাম ছিল Varyag পরে চীন কিনে নিয়ে এর নাম দেয় Liaoning। এটির কমিশন হয় ২৫ শে সেপ্টেম্বর। এটি এখনও যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত না। নভেম্বর ২৫, ২০১২ এটা থেকে পরীক্ষা মূলক ভাবে Shenyang J-15 যুদ্ধ বিমান উড্ডয়ন করে। এটা পূর্ন যুদ্ধ যাত্রা করতে ২০১৬ সাল লাগবে। এখন ও যেহেতু পরীক্ষামূলক যাত্রায় আছে তাই এর বিমান বহর সন্মন্ধ্যে ঠিকমত জানা যায় নাই তবে এতে ৩০ টি বিমান ও ২৪ টি হেলিকপ্টার থাকতে পারবে।
ফ্রান্স (১)

Charles de Gaulle (R 91) ৪২০০০ টনের নিউক্লিয়ার চালিত এই বিমানবাহী জাহাজ ২০০১ সালে ফরাসী নেভীতে কমিশনড লাভ করে। ২৮-৪০টা বিমান ও হেলিকপ্টারের সমন্বয়ে এটা গঠিত।আফগানিস্তানে আক্রমনের সময় Charles de Gaulle বড় ভূমিকা রাখে।
ভারত (১)

INS Viraat ২৮৭০০ টনের এক্স ব্রিটিশ ক্যারিয়ার ‘এইচ এম এস হারমিস’ ভারত ১৯৮৬ সালে কিনে নেয়। এটি সাগরে ভাসে ১৯৫৩ সালে। ভারত সরকার একে কমিশন দেয় ১৯৮৭ সালে। জাহাজে নাবিক আছে ১২০৭ জন আর এয়ার ক্রু আছে ১৪৩ জন। এতে ৩০ টি বিমান ও হেলিকপ্টার আছে। যার মধ্যে British Aerospace Sea Harrier FRS51, Westland Sea King Mk 42B-C, HAL Chetak, HAL Dhruv। ২০১৯ সালে এটি ডিকমিশন করা হবে।
ইতালী (২)

Giuseppe Garibaldi (551): ১৪০০০ টনের ইটালিয়ান STOVL (short take off and vertical landing aircraft) ক্যারিয়ার। ১৯৮৫ সনে কমিশন লাভ করে। ৬৩০ জন ক্রু আর ১০০ জন বৈমানিক নিয়ে এটি সাগরে আছে। সর্বোচ্চ ১৬ টি AV-8B Harrier IIs অথবা ১৮ টি Agusta helicopters বহনক্ষম সম্পন্ন।
Cavour (550): ২৭০০০ ট নের ইটালিয়ান STOVL (short take off and vertical landing aircraft) ক্যারিয়ার, কমিশন লাভ করে ২০০৮ সালের ২৭ শে মার্চ।. সর্বোচ্চ ২০ টি বিমান বহন ক্ষমতাসম্পন্ন।
রাশিয়া (১)

Admiral Flota Sovetskovo Soyuza Kuznetsov: ৫৫০০০ টন ক্ষমতা ধারন সম্পন্ন ক্যুৎনেসভ ক্লাশ STOBAR (Short take-off but arrested recovery) বিমান বাহী জাহাজ।২৫ শে ডিসেম্বর ১৯৯০ সালে সাগরে নামে কিন্তু অপারেশ নাল হয় ১৯৯৫ সালে। ৪১-৫২টি বিমান বা হেলিকপ্টার বহনে সক্ষম। 14 × Su-33 fighters (current), 28 × MiG-29K fighters, 4 × Sukhoi Su-25UTG/UBP aircraft, 4 × Kamov Ka-27LD32 helicopters, 11 × Kamov Ka-27PLO Helicopters, 2 × Kamov Ka-27S helicopters
ব্রিটেন (১)

HMS Illustrious: ২২০০০ টনের ব্রিটিশ STOVL ক্যারিয়ার। ২০ শে জুন ১৯৮২ সালে কমিশন লাভ করে। ২০১৩ সাল পর্যন্ত এটা সাগরে থাকবে তারপর ডিকমিশন হবে। এটি ২২ টি হেলিকপ্টার ও ২২ টি হ্যারিয়ার ফাইটার বহন করে।
থাইল্যান্ড (১)


HTMS Chakri Naruebet: ১১৪০০ টনের STOVL ক্যারিয়ার।কমিশন লাভ করে ১৯৯৭ সালে। বর্ত মানে বাজেটের অভাবে এটি এক রকম পরিত্যাক্ত হয়ে আছে। থাই রাজার প্রমোদতরী হিসাবে এটি ব্যাবহৃত, আবার কখনো কখনো রিলিফ কাজে অংশ গ্রহন করে।
আমেরিকা (১০+৯)

Nimitz class আমেরিকার হাতে ১০ টি নিমিৎজ ক্লাশ বিমান বাহী জাহাজ আছে, যে গুলো ১০১০০০ টন বহন ক্ষমতা সম্পন্ন। এগুলো দুটি নিউক্লিয়ার রিঅ্যাকটরে চলে। ১৯৭৫ সালে প্রথম নিমিৎজ ক্লাশ জাহাজ কমিশন লাভ করে।

USS Nimitz (CVN-68)
USS Dwight D. Eisenhower (CVN-69)
USS Carl Vinson (CVN-70)
USS Theodore Roosevelt (CVN-71)
USS Abraham Lincoln (CVN-72)
USS George Washington (CVN-73)
USS John C. Stennis (CVN-74)
USS Harry S. Truman (CVN-75)
USS Ronald Reagan (CVN-76)
USS George H.W. Bush (CVN-77)

এ গুলো প্রতিটি ৮৫-৯০ টি বিমান ও হেলিকপ্টার বহনে সক্ষম।

amphibious assault ship আমেরিকার ৯ টি অ্যামফিবিয়স অ্যাসাল্টশিপ অপারেশনাল অবস্থায় আছে। এর প্রতিটি ২০-২৫ টি বিমান বা হেলিকপ্টার থাকে। এর মধ্যে উভচর যান ও থাকে যা পানিতে ও মাটিতে আক্রমনে সক্ষম।
আমি নিজে সাগরে কাজ করি। আমার কর্মক্ষেত্র ড্রিলিং রিগের ছবি এখানে এখানে আর এখানে
রহস্যময় মৎসকন্যা নিয়ে এখানে একটি লেখা পাবেন
সাবমেরিন নিয়ে লেখা পাবেন এখানে
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মার্চ, ২০১৩ সকাল ৮:০০
২২টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×