somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

Tyler Durden এর চোখ দিয়ে দুনিয়াটাকে দেখার প্রচেষ্টা

০৬ ই নভেম্বর, ২০১২ রাত ৯:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফাইট ক্লাব হয়তো অনেকের কাছে শুধুই একটা মুভি কিংবা বই। কিন্তু আমার কাছে ফাইট ক্লাব মুভি/বই থেকেও অনেক বেশি কিছু।
আমার জন্য ফাইট ক্লাব হচ্ছে একটা জীবনদর্শন। একটা মুভমেন্ট। আত্মিক শৃংখল থেকে মুক্তির এক স্বার্থক দিকনির্দেশনা।
কিভাবে?
এই মুভির কিছু ডায়লগ আরও গভীরভাবে ব্যাখ্যা করলে হয়তো বোঝা যাবে।



“With insomnia you're never really awake, you're never really asleep.”

ইনসমনিয়াক মানুষ মাত্রেরই এই কথার সত্যতা বুঝতে পারার কথা।
ইনসমনিয়ার চূড়ান্ত পর্যায়ে একজন মানুষের বোধ-বুদ্ধি এতটাই লোপ পায় যে সে আর জাগরণ এবং নিদ্রার মধ্যে পার্থক্য করতে পারে না। মাদকাসক্ত মানুষদের মত সবসময় ঘোর লাগা একটা অবস্থার মধ্যে সে বেঁচে থাকে।


"When people think you're dying, they really, really listen to you instead of just waiting for their turn to speak."

মনে করার চেষ্টা করে দেখুন তো, শেষ কবে আপনি কারও কথা সত্যিই মনোযোগ দিয়ে শুনার চেষ্টা করেছিলেন, নিজের কথাটা বলার চেষ্টা না করে?
যদি মনে করতে না পারেন, তাহলে এখন থেকে অন্তত চেষ্টা করা শুরু করুন অন্যের কথা শুনার। আর এটাও মাথায় রাখবেন যে আপনি কারও কথা শুনে তার উপর কোন অনুগ্রহ করছেন না। কারণ, আপনি একজন মানুষের কথা শুনছেন বলেই সেই মানুষটা বা অন্য কেউ আবার আপনার কথাও শুনছে।


"This is your life, and it's ending one minute at a time."

আমাদের জীবন থেকে প্রতিমুহূর্তে আমাদের মূল্যবান সময়গুলা চলে যাচ্ছে।
আপনি যখন এই লেখাটি পড়ছেন, এমনকি তখনও আপনার জীবন থেকে মূল্যবান কিছু সময় চলে যাচ্ছে।
কখনও চিন্তা করে দেখেছেন কি, আপনি আপনার সময়গুলা ঠিকমত কাজে লাগাতে পারছেন কি না? যা আপনি আসলেই করতে চান, তাই করছেন, নাকি যা সমাজ আপনাকে দিয়ে করাতে চায়, তা করছেন?
চিন্তা করে দেখুন। এবং একটু জলদিই করুন। Cause you're running out of time, my friend.


“I'm Jack's Cold Sweat/ I'm Jack's Raging Bile Duct/ I'm Jack's Broken Heart/ I'm Jack's Wasted Life/ I'm Jack's Inflamed Sense of Rejection/ I'm Jack's Complete Lack of Surprise/ I'm Jack's Smirking Revenge.”

বেশ ইন্টারেস্টিং একটা ব্যাপার। বিভিন্ন সিচুয়েশনে আমাদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বা অনুভূতির রিঅ্যাকশনগুলা যদি ভাষায় প্রকাশ করা যেত, তাহলে কেমন হত?



"Advertising has us chasing cars and clothes, working jobs we hate so we can buy shit we don't need."

বর্তমানে অবস্থাটা এখন এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে বিজ্ঞাপনে দেখানো ভাল কোন একটা প্রোডাক্ট আমাদের না থাকলে আমরা নিজেদের অপরিপূর্ণ মনে করা শুরু করি। এটা চিন্তা করে দেখি না যে আমাদের সেই প্রোডাক্টটার আসলেই কোন প্রয়োজন আছে কিনা।


"The things you own end up owning you."

যে কোন কিছু স্বত্ত্বাধিকার করার সাথে সাথে আসে সেই স্বত্ত্বটা ধরে রাখার একটা প্রবণতা। এবং একসময় সেই স্বত্ত্বটা ধরে রাখার জন্য মানুষ নিজের সত্ত্বাকেও বিসর্জন দিতে দ্বিধাবোধ করে না। ফলশ্রুতিতে সে পরিণত হয় নিজেরই কেনা বস্তুসামগ্রীর এক দাসে।


“It's only after we've lost everything that we are free to do anything.”

কথায় আছে না, 'নেংটার নাই বাটপারের ভয়', ব্যাপারটা আসলেই তাই।
যার কিছু আছে, তার সেই জিনিসটা হারানোর ভয়ও আছে। আর যার কিছুই নাই, তার হারানোরও কোন ভয় নাই। সেই সত্যিকার অর্থে মুক্ত, স্বাধীন।
আগেই বলেছি, কোন কিছু স্বত্ত্বাধিকার করার সাথে সাথে সেই সত্ত্বটা ধরে রাখার জন্য এক ধরনের দায়বদ্ধতাও তৈরি হয়। যেটা স্বাধীনভাবে কোন কিছু করার সময় আপনার পায়ে বেড়ির মত হয়ে থাকবে।
শুধুমাত্র সব চাওয়া, পাওয়া, অর্জন, দায়বদ্ধতার ঊর্ধে যেতে পারলেই সত্যিকার অর্থে বেঁচে থাকার, মুক্তির স্বাদ পাওয়া সম্ভব।



"I say never be complete. I say stop being perfect. I say let's evolve. Let the chips fall where they may."

মানুষ যত পারফেকশন অথবা কমপ্লিটনেসের কাছাকাছি যায়, তত সে কেয়ার করা শুরু করে নিজের সেই 'পারফেক্ট ইমেজ'টা ধরে রাখার জন্য। ততই সে চিন্তা করতে থাকে মানুষ তাকে নিয়ে কি ভাবছে/বলছে, তা নিয়ে। কিন্তু কি দরকার সেই ইমেজ ধরে রাখার যেটার জন্য আপনাকে নিজের ইচ্ছা, সুখগুলাকে বিসর্জন দিতে হচ্ছে? বা কি হবে পারফেক্ট হয়ে?
ধরে নিন আপনি পারফেক্ট হয়েও গেলেন এবং লাইফে আপনার যা যা অর্জন করার ছিল, করেও ফেললেন। কিন্তু তারপর কি? সুখী হওয়ার বদলে আপনি দেখবেন আপনাকে এক অসীম শূন্যতা গ্রাস করে ফেলবে এবং একটা সময় আপনার কাছে জীবনের সব কিছু অর্থহীন মনে হওয়া শুরু হবে।
কাজেই থাকুক না কিছু অপূর্ণতা। হোক না যা হচ্ছে। ভাবুক না যার যা ভাবার।
কারণ দিনশেষে সত্যিকারের সুখ জিনিসটা ভেতর থেকে আসে। জীবনে আপনার বস্তুগত কোন অর্জন থেকে না।


“Tomorrow will be the most beautiful day of Raymond K. Hessle's life. His breakfast will taste better than any meal you and I have ever had.”

এমন একটা অবস্থায় নিজেকে চিন্তা করুন, যখন আপনি এমন একটা জব করছেন যেটা আপনার মোটেও পছন্দ না। হয়তো শুধুমাত্র জীবিকার তাগিদে পড়াশোনা, কিংবা আপনার পছন্দের কাজ/মানুষটাকে ছেড়ে আপনাকে সেই পেশায় আসতে হয়েছে। প্রতিনিয়ত ভাগ্যের প্রতি, নিজের প্রতি, নিজের জীবনের প্রতি আপনার মধ্যে এক ধরনের আক্ষেপ/অসন্তোষ কাজ করে। তারপর কোন একদিন আপনি এমন এক পরিস্থিতির মুখোমুখি হলেন যখন আপনার মনে হবে যে এই আক্ষেপ নিয়েই পৃথিবী থেকে আপনাকে চিরতরে বিদায় নিতে হবে। কিন্তু কোন একভাবে আপনি সেই পরিস্থিতি থেকে বেঁচে গেলেন, এবং জীবনের প্রতি নিজের আক্ষেপ দূর করার, নিজের অপূর্ণ ইচ্ছাগুলাকে পূরণ করার একটা সুযোগও পেয়ে গেলেন।
I can assure you, এর পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে আপনার নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে ভাগ্যবান এবং সুখী মানুষ বলেই মনে হবে।


"Listen up, maggots. You are not special. You are not a beautiful or unique snowflake. You're the same decaying organic matter as everything else."

নিষ্ঠুর বাস্তবতা।
আমরা কমবেশি সবাই-ই বিশ্বাস করি অথবা বিশ্বাস করতে চাই যে আমাদের প্রত্যেকের মধ্যে আলাদা আলাদাভাবে কিছু না কিছু হলেও বিশেষত্ব আছে। কিন্তু বাস্তবতা আসলে ভিন্ন।
আমরা কেউই স্পেশাল না। দিনশেষে সবাই আমরা সমান। সবাই আমরা মাটির সাথে মিশে যাব। প্রত্যেকে আমরা নির্দিষ্ট কিছু কাজ করতে পৃথিবীতে এসেছি। যেই কাজগুলা করে আমরা এখান থেকে চলেও যাব। এর মধ্যে কেউ নিজেদের কাজে সফল হবে, কেউ ব্যর্থ হবে।
কিন্তু যেটাই হোক, এসব কোন কিছুর মধ্যেই কোন চমৎকারিত্ব নেই। কোন স্পেশালিটি নেই। এই বাস্তবতাটা আমরা যত জলদি বুঝতে পারব, ততই আমাদের জন্য মঙ্গল।



"You're not your job. You're not how much money you have in the bank. You're not the car you drive. You're not the contents of your wallet.
You're not your fucking khakis.
You're the all-singing, all-dancing crap of the world."


আমরা এমন একটা সময়ে বাস করছি, যখন আমাদের মূল্যায়ন হয় আমরা কি কি জাগতিক বস্তুসামগ্রী অধিকার করি, তার উপর। শৈশব থেকে বার্ধক্য পর্যন্ত আমরা আমাদের অস্তিত্ব প্রমাণ করার চেষ্টা করি নিজেদের অধিকৃত সব সস্তা, ক্ষয়শীল এবং আপাত অর্থহীন বস্তুসামগ্রীর মাধ্যমে।
বন্ধুবান্ধব এবং আশেপাশের মানুষদের কাছে আমাদের গ্রহণযোগ্যতা এখন নির্ভর করে কার কাছে আইফোনের লেটেস্ট ভার্সনটা আছে, কার নিজের ডিএসএলআর ক্যামেরা আছে, কিংবা কার ফেসবুক পোস্টে কতগুলা লাইক পড়ছে, তার উপর।
এতে করে আমাদের লাভটা হচ্ছে কি?
কিছুই না।
দিনশেষে আমরা হারাচ্ছি আমাদের ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য এবং হয়ে পড়ছি সমাজের এই সামগ্রিক সিস্টেমের একজন বোধবুদ্ধিহীন দাস।



শেষ কথাঃ
ফাইট ক্লাবের প্রথম দুইটা রুলই ছিল ফাইট ক্লাব নিয়ে কোন কথা না বলা। But after watching Fight Club, you can't expect from anyone to follow any 'rules'!
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই নভেম্বর, ২০১২ রাত ১২:২৭
১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমিও যাবো একটু দূরে !!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২২

আমিও যাবো একটু দূরে
যদিও নই ভবঘুরে
তবুও যাবো
একটু খানি অবসরে।
ব্যস্ততা মোর থাকবে ঠিকই
বদলাবে শুধু কর্ম প্রকৃতি
প্রয়োজনে করতে হয়
স্রষ্টা প্রেমে মগ্ন থেকে
তবেই যদি মুক্তি মেলে
সফলতা তো সবাই চায়
সফল হবার একই উপায়।
রসুলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×