হো চি মিন শহরে আকাশ চুম্বী ভবন তৈরি হচ্ছে দেখলাম। এখন এরকম ভবন বেশি নেই। আগামী বছর গুলোতে হো চি মিন সিটি তে অনেকগুলো আকাশছোঁয়া ভবন দেখা যাবে বোঝা যাচ্ছে। এখন সারা পৃথিবী থেকে দল বেঁধে পর্যটকরা এদেশে আসছে। পর্যটনকে ভিয়েত নামীরা আলাদা ভাবে উন্নয়নের জন্য জোর প্রচেষ্টা না চালালেও পর্যটকদের জন্য সুবিধাজনক ম্যাপ ও নানা ধরনের গাইড বই প্রায় সব হোটেলে আছে। হোটেল গুলো ও পর্যটক দের ঘুরে বেড়ানোর ব্যাপারে নানা ধরনের সহযোগিতা করে। হো চি মিন সিটির রাস্তা গুলোর পরিচ্ছন্নতা দেখার মত। রাস্তায় কাগজের টুকরা , ময়লা, পলিথিন ও অন্যান্য আবর্জনার কোন চিহ্নই নেই। জনগণ তাদের শহর পরিচ্ছন্ন রাখতে যেন সংকল্পবদ্ধ। রাস্তার দুধারে দোকান, দোকানগুলো সাজানো গুছানো। তাদের সাইনবোর্ড গুলো বেশ নতুন ও চকচকে। নিয়মিত রঙ করে তা সুন্দর রাখার প্রচেষ্টা চলছে অবিরত। শহরের মধ্যে কিছু দূরে দূরে বেশ বড় বড় চত্বর। এখানে বড় বড় গাছের সারির পাশাপাশি হাঁটার রাস্তা, বাগান এবং পথিকের বিশ্রামের জন্য পার্ক আছে। এসব পার্কে আলো ছায়ার খেলা দেখা যায়। এখানে এসে পথিক কড়া রোদের হাত থেকে কিছুক্ষণের জন্য নিস্তার পায় এবং একটু বিশ্রাম নিতে পারে।
সায়গন শহরে মসজিদ
হো চি মিন সিটি- (সায়গন শহরের) দৃশ্য
সায়গন শহরের দৃশ্য
হো চি মিন সিটিতে আমাদের সময় শেষ। বিকেল বেলা হো চি মিন সিটি থেকে হ্যানয়ের পথে বিমান যাত্রা। বিকেল চারটায় ফ্লাইট, হ্যানয় যেতে সন্ধ্যা ছয়টা বেজে যাবে। সকালের আবহাওয়া চমৎকার, সুন্দর সূর্যের আলো, নীল আকাশে হালকা শাদা মেঘ সহনীয় উষ্ণতা, আমরা একটু আগে লাঞ্চ সেরে ফেলার জন্য সাড়ে এগারোটার দিকে চেক আউট করে হোটেল থেকে রেস্টুরেন্টের দিকে রওয়ানা হলাম। রাস্তায় বেশ ভিড় , আজকে অফিস আদালত সব খোলা। একটা ভাল মুসলিম রেস্টুরেন্টের সামনে গাড়ি থামালাম। আশেপাশে দেখে বুঝলাম এটা মুসলিম প্রধান এলাকা। খোঁজ নিয়ে জানলাম এই এলাকাতে অনেক ভিয়েতনামী মুসলিম থাকে। হোটেলের সামনে রাস্তের ওপারে বিশাল মসজিদ, বেশ পরিছন্ন এলাকা।
ভিয়েতনামে বেশ কিছু মুসলমান আছে। অনেক স্থানীয় ভিয়েতনামী ইসলাম গ্রহন করেছে, তাছাড়া ভারত, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া থেকে আসা অনেক মুসলমান এখানে স্থায়ী ভাবে বসত গেড়েছে। হোটেলের মালিক ও কর্মচারী সবাই স্থানীয় ভিয়েতনামী মুসলিম। হোটেলের পরিবেশ বেশ পরিচ্ছন্ন। খাবারের মান ভাল , স্বাদও চমৎকার। দুপুরের খাবার খেয়ে তানসননুত বিমান বন্দরের দিকে রওয়ানা হলাম।
হো চি মিন সিটি- (সায়গন শহরের) দৃশ্য
হো চি মিন সিটি- (সায়গন শহরের) পার্ক এলাকা
হোচিমিন সিটি বিমানবন্দরের ভেতরে
তিনটার দিকে এই রোদেলা আকাশ ঘন মেঘে ছেয়ে গিয়ে প্রচণ্ড বৃষ্টি শুরু হল। হোচিমিন সিটির রান ওয়েতে পানি জমে গেছে, আমাদের বিমান এ কারনে হ্যানয় থেকে রওয়ানা হতে পারেনি।বিমানের জন্য অপেক্ষা করে আছি। হ্যানয় শহরে সন্ধ্যা কাটানোর সব পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে। চারটার বিমান শেষ পর্যন্ত নয়টার পর ল্যান্ড করল। দশটায় টেক অফ, হ্যানয় যেতে যেতে রাত বারটা বেজে যাবে। সন্ধ্যায় হ্যানয় ঘুরে দেখা আর সম্ভব হল না। এর মধ্যে বৃষ্টি থেমে গেছে, রানওয়ের পানিও নেমে গেছে, আমরা হোচিমিন সিটির তানসননুত বিমান বন্দরের লাউঞ্জে বসে অলস সময় কাটাচ্ছি। অনেক যাত্রী, সবারই বিমান আসতে দেরি হচ্ছে। এর মাঝে পুরো বিমান বন্দর দুই তিনবার ঘুরে এলাম। ভেতরে বেশ সুন্দর বসার ব্যবস্থা আছে। সুন্দর ভাবে সাজানো ভাল দোকানপাট ও আছে ভেতরে, ডমিস্টিক টার্মিনাল বলে ডিউটি ফ্রি সপ নেই এখানে। অনেক যাত্রী আজকে সব দোকানেই প্রচুর বিক্রি হচ্ছে। এক বোতল পানি কিনলাম, বাহির থেকে পাঁচ গুন বেশি দামে। আমাদেরকে বিমান কত্তৃপক্ষ বিমানের দেরীর কারনে একটা মিল খেতে দিল। যে ক্যান্টিন থেকে খেতে বলল সেখানে অল্প কয়েকটা আইটেম আছে, কি খাব এখানে সব কিছুতেই শুকরের মাংস দেয়া। নিরাপদ থাকার জন্য সবজি ও ভাত নিলাম। মিষ্টিতেও শুকরের পাউডার দেয়া তাই নেয়া হল না। অবশেষে বিমান ল্যান্ড করল আমরা আশার আলো দেখলাম। সত্যি সত্যি হ্যানয় যাচ্ছি , না যেতে পারলে একটা দিন নষ্ট হতো হো চি মিন শহরে।