রাতের হ্যানয়
রাতে সিটি সেন্টারে মানুষজন
হ্যানয় শহরে সিক্লো- এখন শুধু পর্যটকদের জন্য
হ্যানয় শহরে মসজিদ
এখানে বিকেল বেলা ও সন্ধার সময় অনেকে হাঁটাহাঁটি করে কিংবা একটু সময় কাটায়। পার্কের একপাশে একজন সিক্লো চালক তার বাহন নিয়ে পর্যটকদের জন্য অপেক্ষা করছিল। তার এই সিক্লোতে করে আস্তে আস্তে শহরের নানা জায়গায় পর্যটকদের ঘুরিয়ে আনে। সিক্লো চালক গেঞ্জি ও প্যান্ট পরা, বেশ স্মার্ট, মনের সুখে সিগারেট টানছে আর পাশ দিয়ে যাওয়া পথচারীদেরকে তার বাহনে চড়ার অনুরোধ করছে।
তাকে পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে গেলাম। রাস্তার মাঝে মোড়ের মধ্যে বেশ বড় দুর্গের মত গোলাকার ঘর, ভেতরে কি আছে বুঝলাম না। এর পাশ দিয়ে সামনে এগিয়ে চললাম। সামনেই একটা বেশ ব্যস্ত বাণিজ্যিক এলাকা। পাইকারি জিনিসপত্রের বাজার, অনেক মানুষ কেনাকাটা করছে। এখানে একটু জোরে কথাবার্তা শুনতে পেলাম, সাধারনত শহরে উত্তেজনা, চিৎকার চেঁচামেচি তেমন একটা শোনা যায় না।
বেশ গরম এই বিকেলেও , হাঁটতে হাঁটতে ঘেমে গিয়েছি, পানি কেনার জন্য একটা ছোট দকানের সামনে দাঁড়ালাম। বুড়ো বুড়ী দোকান চালায়, তাদের চেহারায় আভিজাত্যের ছাপ, এক বোতল পানি চাইলাম, অরধেক দামে এখানে পানি পেলাম। হোটেলের কাছের দোকানগুলোতে দাম দ্বিগুণ। পানির বোতল নিয়ে এগিয়ে চলছি, সামনে দেখি আরবি লিখা একটা বোর্ড। একটু ভাল করে খেয়াল করতেই একটা মসজিদ দেখলাম। হ্যানয় শহরে বেশ কিছু মুসলমান আছে, তাদের মসজিদ আছে, হালকা আজানের ব্যবস্থাও আছে। আজানের শব্দ শুনতে পেলাম, তবে ঢাকা শহরের মত সুললিত আজান এখানে কোথায় পাবো।
হাঁটতে হাঁটতে একটা মোড়ের কাছে চলে এলাম, এখানে হঠাৎ করে দুই তিনটা মোটরসাইকেল আমাদের সামনে ব্রেক করে দাঁড়ালো। চালক ছেলে মেয়ে উভয়েই আছে। তারা আমাদেরকে তাদের পেছনে উঠতে বলল, একটু অবাক হলাম, ব্যাপার কি? পরে জানলাম এখানে এই বাইকের পেছনে বসিয়ে পুরো শহর দেখিয়ে আনে এসব বাইকে আসীন গাইড। পর্যটকরা কম খরচে এ ধরনের বাইকে করে হ্যানয় শহর সম্পর্কে একটা ধারনা পায়। এদের ব্যাপারে খোঁজ নেইনি আগে তাই এই অ্যাডভেনচারে গেলাম না।
এই চালকরা পর্যটকদের হ্যানয়ের দর্শনীয় স্থান দেখানোর পাশাপাশি নানান ধরনের মার্কেটে নিয়ে যায় এবং দেশ ও মানুষকে জানতে সাহায্য করে, এটাও একটা নতুন অভিজ্ঞতা। থাইল্যান্ডে এই ধরনের ট্যাক্সি সার্ভিস ছিল, তবে তা ছিল বিপদজনক, কারন চালকরা ওভার স্পীডে চালিয়ে নানা ধরনের দুর্ঘটনার সম্মুখীন হত। সন্ধ্যা হয়ে আসছিল, রাতে একটা ডিনার পার্টিতে যেতে হবে তাই শহরের কিছু অংশ দেখে ফেরার পথ ধরলাম।
ডিনারের পরিবেশ ও পরিবেশনা একটু নতুন ধরনের। প্রতিটা কোর্সের সাথে তারা একজন একজন করে পালাক্রমে সবার সুস্বাস্থ্য কামনা করে এক পেগ খালি করে। আমরা তার বদলে কোমল পানীয় নিয়ে তাদের সুস্বাস্থ্য কামনা করলাম। লেবু দিয়ে সেদ্ধ করা ওয়েস্টার বা ঝিনুক , স্কুইব ও নানান বিচিত্র পদের সামুদ্রিক মাছের আইটেম, কাভিয়ার ও ছিল এই ডিনারে। সবশেষে ভাত যখন পরিবেশিত হল তখন কোন কারী ছিল না সেই সাথে। ডিনারে আগেই ব্রেড বাটার খেয়ে নিয়েছিলাম। এটাও একটা নতুন অভিজ্ঞতা।
রাতের বেলা সিটি সেন্টারের কাছে হোয়ান কিয়েম লেকে গেলাম। এই লেকের চারপাশ দিয়ে রাস্তা চলে গেছে। যে কোন জায়গা থেকে অতি সহজে এই সিটি সেন্টারে আসা যায়। সন্ধ্যার পর অনেক স্থানীয় মানুষ এখানে আসে। এটা তাদের সময় কাটানো এবং বিনোদনের একটা সুন্দর জায়গা। হোয়ান কিয়েম অর্থ ফেরত দেয়া তলোয়ার। এবং এই নামটা এখাণকার একটা প্রচলিত উপকথার ভিত্তিতে এসেছে। এখানকার রাজা লি লয় কে সৃষ্টিকর্তা একটা তলোয়ার দিয়েছিল, সেই তলোয়ার দিয়ে রাজা আক্রমণকারী চীনাদেরকে তার রাজ্য থেকে বিতারিত করেছিলেন। একদিন বোটে করে লেক ভ্রমন করান সময় রাজা একটা বিশাল কচ্ছপ দেখতে পান। সেই কচ্ছপ তলোয়ারটা নিয়ে লেকের গভীর পানিতে ডুব দেয় এবং সৃষ্টিকর্তার কাছে তা ফেরত নিয়ে চলে যায়। এখনো বিশ্বাস করা হয় যে সেই বিশাল কচ্ছপ এই লেকে এখনো আছে।
লেকের দক্ষিণ কোনায় ছোট একটা দ্বীপ এটাকে জেড আইল্যান্ড বলে, এখানে একটা ছোট মন্দির আছে। ১৮ শতকে এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল।এটা তের শতকের বীর ত্রান হুং দাও এর স্মৃতির প্রতি সম্মান দেখিয়ে বানানো হয়েছিল। লেকের পাড় থেকে লাল রঙ করা একটা ব্রিজ মন্দিরকে যুক্ত করেছে। এখানে রাতের বেলা আলোকসজ্জা থাকে। অনেক ভ্রমণকারী এবং স্থানীয়রা এখানে বেড়াতে আসে, ছবি তোলে। এই লেকের চারপাশের ব্যস্ত ট্রাফিক থেকে নিজেকে দুরে রেখে চমৎকার হেঁটে বেড়ানোর রাস্তা আছে এখানে। ভিয়েতনামের স্থানীয় লোকজন ও যুবক যুবতীরা রাতের বেলা তাদের প্রিয়জনদের নিয়ে এখানে এসে কিছুক্ষণ অন্তরঙ্গ সময় কাটায়।