somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মূর্ছা্‌

২৫ শে মে, ২০১৭ রাত ১:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




আটাশে এসে চাকরী আর স্বাভাবিক জীবন ছাপিয়ে নিজেকে দার্শনিক হিসেবে উপস্থাপন করার প্রবণতা এসে গেলো মেরাজের। সবাই বলে ওর নাকি বিয়ে করা প্রয়োজন। আড্ডার টেবিলে বসেও চুপচাপ থাকতে ভালো লাগে তার। তারপর হঠাতই বলে ওঠে “আচ্ছা মানুষের জীবনে এই একটা চায়ের কাপের ভূমিকা কি?” । 'শালা যা ইন্টারনেটে ঘাইট্যা বাইর কর গিয়া। এইখানে কি তোর চায়ের কাপ মার্কা দার্শনিক কথা শুনবার আইসি ?”- এমন কড়া কথাও ওর ভাবনাকে এতটুকুও বিচলিত করতে পারে না। তারপর কিছু না বলেই হাঁটতে ধরে।
ক'দিন ধরে অফিসে যাওয়াও ছেড়ে দিয়েছে। সহযোদ্ধারা বলে ‘ভালো হয়েছে। একটা বিরক্তিকর চরিত্রে পরিণত হয়েছিল সে। নিশ্চিত প্যাথেড্রিন নাহলে অন্য কোন সিডেটিভ নেয়া শুরু করেছে। এসব বিষয় ভাইরাল। মানে মানে বিদায় নিয়েছে। দ্যাটস আ গুড নিউজ’

হ্যা সত্যিই। মেরাজ ইদানিং যা নিচ্ছে তা প্যাথেড্রিন বা অন্য কোন কড়া সিডেটিভের থেকে কম নয়।
একাকীত্ব নামের সিডেটিভ। মোবাইলের সাথে ব্লুটুথ স্পিকার কানেক্ট করে নিজের রেকর্ড করা কথাগুলো নিজেই শোনে। ‘ক্লাস ওয়ান্‌ - ফার্স্ট। রূপালী রোবট। ক্লাস ৪- ফার্স্ট। বেগুনী সাইকেল। ক্লাস ৯। ফার্স্ট- ১৯ ইঞ্চির মনিটর সহ পেন্টিয়াম ফোর প্রোসেসরের ডেস্কটপ কম্পিউটার। অনার্স, মাস্টার্স- ম্যাকবুক এবং মোটর বাইক। গত সাতদিনের ঠিক আগের সকালে আসা অবধারিত ভোরটা চোখের সামনের পর্দা হটিয়ে দিলো ।আমি এখন ব্যাথা পাইনা। বিষ পিঁপড়ের কামড়ে বেরিয়ে আসা সাময়িক লালচে টিউমার আর যন্ত্রণা দেয় না। কমোডের ফ্লাশের সাথে যেন বেরিয়ে গেল হাজার টনের জমানো সব বোঝা। এরপর থেকে মেরুদন্ডের গোঁড়ায় যুক্ত হলো একটা বিশাল প্রশ্নবোধক চিহ্ন। চোখ মুজলে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র লাখো কণা দেখি, চোখ খুললে চুন খসে পড়া সাদা দেয়াল মাথায় হাত বুলায়। শুভ সকাল।

ডাক্তার বলে স্বাভাবিক। কিন্তু?

মা ফোন করে বলে বাবা তোর ‘কি’ হয়েছে ?

চায়ের স্টলের দোকানদার বলে ‘মেরাজ ভাই হঠাত এমন হইয়া গেলেন কেন আপনি?’

সবই যেন শুনছে । সবই যেন বুঝতে পারছে। কিন্তু ব্যবহার বদলে গেছে। সবই হচ্ছে । কিন্তু কেন হচ্ছে? না হলে কি হতো? মেয়েদের বিয়ে দিতে অনেক টাকা লাগে। তাই নিজের মেয়েকেই গলা ঘুটে মেরে দিলেন জনৈক পিতা। এমন খবরে মেরাজের প্রশ্ন জাগে। যদি এই প্রথা না থাকতো তবে কি মেয়েটাকে মরতে হতো?? টাকা দেয়া কি বাধ্যতামূলক ছিলো?
আরো অনেক প্রশ্ন মাথায় ক্ষণে ক্ষণে উঁকি দেয় মেরাজের।
একদিন খুব ভোরে ঘুম ভেঙ্গে আয়ানার সামনে এসে দাড়ালো মেরাজ। দাড়ি প্রায় বুকের কাঁছাকাছি এসে ঠেকেছে। চুল নাকের ডগায়।
ধারালো ব্লেড হাতে নিয়ে নিজের পড়নের গেঞ্জিটা কেটে টুকরো টুকরো করে ফেললো সে। এতে গায়ের বেশ কিছু জায়গা কেটে রক্তপাত হলেও তা যেন তার বোধের অবগত হলোনা। দরজা খোলা রেখেই সমুদ্রে মেশা নদীর গহীন বিচরণে গেল। যে জায়গা ছেড়ে এসেছে মেরাজ সেখানে আর ফিরে যেতে চায় না সে। তাই ডুব দিয়েই থেকে গেলো অনেকক্ষণ। কতক্ষণ? সময় গোল্লায় যাক। ভালো লাগছে। খুব ভালো লাগছে।
তারপর হঠাতই চোখ খুলে নিজেকে আবিষ্কার করলো সেই পুরনো খাটের উপর । কিন্তু আজ সকালে দেয়াল আর ‘শুভ সকাল’ জানালো না।
উফফ বিষ পিঁপড়ে।


সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মে, ২০১৭ রাত ১:৪৮
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×