বেলকনীতে রাখা ফুলের টবে প্যারোডিয়া ক্যাকটাস বুনেছিলাম।' প্যারোডিয়া' হচ্ছে ক্যাকটাসের এমন একটি জাত যার গা চিরে বেরিয়ে এসে ফুল দ্যাখে সূর্যের আলো। আমার বুক চিরে হৃদয়ের যে অংশ বেরিয়ে আসে তাকে ফুল হিসেবে ধরে নিলে 'আমি’ নামক ফুলের গায়েও সূর্য তার আলো ফেলে যায়। ভিনদেশী বান্ধবী শার্লট আমায় একটি "জড় বস্তু" বলে ডাকে। ছোট্টবেলার বন্ধু সবুজ কথায় কথায় "ননসেন্স' শব্দটি আমার উপর প্রয়োগ করে । কিন্তু ওরা জানেনা যে আমি নীরবে রবি শঙ্কর , বিথোভেন, চপিন, মোজার্ট শুনি। ওরা জানেনা, আমার অস্বচ্ছ আলমারিতে লুকিয়ে আছে অজস্র পঠিত কবিতা, গল্প, উপন্যাস। ওরা জানেনা যে কাঁধে বস্তা বয়ে নিয়ে বেড়ানো টোকাই বাচ্চাগুলোকে দেখলে ঘরের কোণায় আমি বুকের চিনচিন ব্যাথার যন্ত্রণায় কাতরাই। এ বিশেষ বৈশিষ্ট্যগুলো আমায় অবশ্যই একজন কোমল হৃদয়ের ব্যক্তি হিসেবে প্রমাণ করার জন্য যথেষ্ট নয় । কিন্তু আমার সেন্স কিংবা আমার জীবনের ধাঁচটা একটু অন্যরকম। তা যেমন আমি ব্যাখ্যা করতে পছন্দ কিংবা স্বাছন্দ্যবোধ করিনা ঠিক একই ভাবে আমি চাইনা নিজেকে অন্যভাবে প্রকাশ করতে গিয়ে সবার কাছে যেন আলোচনার পাত্র হই। আমি একজন ইন্ট্রোভার্ট । তবে আমি জড় কিংবা ননসেন্স নই। পার্টিতে খাবার ফুরিয়ে গেলেও বড়জোর না খেয়ে চুপটি থেকে বাড়িতে ফেরত আসি। বইয়ের শেষ লাইনটা কিছু নতুন চিন্তার জন্ম দিলেও তা নিয়ে কারো সাথে আলোচনা করা নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দে থাকি কিংবা কলিগ সায়েম , রিয়াজদের কথায় মনে মনে স্পষ্ট ভুল ধরতে পেরেও চেঁচিয়ে উঠে বলতে পারিনা যে 'ভুলভাল বকা বন্ধ কর'। তাই বলে আমায় ওরা জড় বা ননসেন্স ধরণের শব্দ দ্বারা সংজ্ঞায়িত করতে পারে না। এ ভারী অন্যায়। যদি একবার ওদের বোঝাতে পারতাম! কানের কুঠুরি বরাবর একটা হ্যান্ডমাইক ধরে বলতে পারতাম 'হতচ্ছাড়ার দল!! আমায় অমন নামে আর ডাকবি না'- তারপরও কি আমি শান্তি পেতাম? জানি না। জানি ওরা আমার চারদেয়ালের ভেতরের যন্ত্রণা কোন দিনও বুঝবেনা। অবশ্য আমার বলার প্রয়োজনও নেই।
(চলবে..)
(ছবি সোর্স ঃ ইন্টারনেট)
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুন, ২০১৭ ভোর ৪:১৩