# কিশোরগঞ্জে মমতাজকে নিষিদ্ধ করেছে একটি ইসলামী গোষ্ঠী।
# বিমানবন্দরে ‘খাঁচার ভিতর অচিন পাখি’ নামক ভাস্কর্য গুড়িয়ে দিয়েছে অপর এক মৌলবাদী গোষ্ঠী।
# ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘অপরাজেয় বাংলা’সহ সকল ভাস্কর্য ভেঙ্গে ফেলার হুমকি দিয়েছে আমিনী।
# ‘পলাতক’ মুজাহিদের সাথে বৈঠক করেছে প্রধান উপদেষ্টা।
# ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কক্ষে ভাংচুর চালিয়েছে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা।
তারিখগুলো উল্লেখ না করতে পারলেও ঘটনাগুলো খুবই সাম্প্রতিক কালের। মিডিয়া মারফত ঘটনাগুলো আমরা সবাই কম-বেশি জানি। এগুলোর একটির সাথে অন্যটির কি কোন মিল নেই? নাকি সবই একই সুতোয় বাঁধা? এগুলো কিসের আলামত? এ কেমন দেশ আমার? কোথায় ছুটে চলেছি আমরা? প্রশ্নগুলো মাথার মধ্যে ঘুরেফিরেই চলে আসছে।
গত জোট সরকারের আমলে জঙ্গিবাদের উত্থান দেখে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে কেঁপে কেঁপে এক স্যারকে প্রশ্ন করেছিলাম- ‘স্যার, বাংলাদেশে ইসলামী বিপ্লব কি অবশ্যম্ভাবী?’ স্যার উড়িয়ে দিয়েছিলেন এ ভয়কে। ধমক দিয়ে বলেছিলেন, ‘ইসলামী বিপ্লব তো আপনের হলের সামনের পেঁয়াজু আর ছোলা যে গেলেন, কিনলেন আর খাইলেন। আমাদের দেশে তা কোন সময়েই সম্ভব না।’ সেদিন আশ্বস্ত হয়েছিলাম স্যারের কথায়। নিশ্চিন্ত মনে জঙ্গীদের উদ্দেশে বলেছিলাম ‘যা তোরা যা পারস কর গিয়া। আমরা কখনো পিছনে যাব না। মানুষ তা কখনো করতে পারে না। মানুষ সবসময় সামনেই যায়।’ কিন্তু আজ এসময় এসে আর এতটা নিশ্চিন্ত থাকতে পারছি না। বিশ্বাসের জোরটা যেন ক্রমেই আলগা হয়ে যাচ্ছে। উপরের এ ঘটনাগুলোর সাথে আরো কিছু ঘটনা যখন মিলিয়ে দেখি তখন আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। এ কেমন রাষ্ট্র আমার? এ কেমন নেতা আমার? উত্তর পাইনা।
শুধু আমাদের দেশেই নয়। ভারতেও যখন মৌলবাদী দল বিজেপি কিংবা শিবসেনা’র হুংকার শুনি তখনো একই ভাবে আতংকিত হয়ে পড়ি। গণহত্যার অভিযোগ থাকার পরও যখন নরেন্দ্র মোদিকে নির্বাচিত হতে দেখি তখন কেঁপে উঠতে বাধ্য হই। তবে কি বিশ্বজুড়েই মৌলবাদীরা ক্রমে আধিপত্যশীল হয়ে ওঠবে? প্রশ্নটা চলে আসে অজান্তেই।
তবে সবচে বেশি আতংকিত হতে বাধ্য হই নিজের দেশে মৌলবাদীদের ক্রমে শক্তিশালী হওয়া দেখে। নিজেদের ‘মডারেট মুসলিম কান্ট্রি’ বলে পরিচয় দিয়ে বাহবা নিচ্ছি। আর করছি ঠিক উল্টোটি! পঁচাত্তরে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যুগের উল্টো দিকে আমাদের যে যাত্রা শুরু হয়েছে তা থামেনি আজও। জিয়ার পর এরশাদ প্রত্যেকেই মেতে উঠেছিলেন মৌলবাদ তোষণে। পরবর্তীতে আমাদের নেতারা (?) এর ধারাবহিকতা তো অব্যাহত রাখেনই একে দেন নতুন মাত্রা। জিয়াও যা করেন নি তা করেছেন খালেদা। সরাসরি জোট বেঁধেছেন স্বাধীনতা বিরোধীদের সাথে। থেমে থাকেন নি অপর নেত্রী হাসিনাও। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ধূলায় লুটিয়ে তিনিও ক্ষমতায় যাওয়ার সিড়ি হিসেবে মৌলবাদীদের ব্যবহার করার জন্য ব্যস্ত হয়ে পরেন। আমাদের এসব মহান (?) নেতাদের কৃতকর্মের ফলাফল হিসেবেই যদি আমরা আজ উপরের ঘটনাগুলোকে দেখি তাহলে কি খুব অযৌক্তিক হবে?
আর যদি তাই হয় তবে আমাদের এ স্বাধীনতার কি খুব বেশি মূল্য থাকে? আমাদেরকে কি নচিকেতার মতো গলা মিলিয়ে গাইতেই হবে-‘আজও রাত্রির নিস্তব্ধতা / চিড়ে দিয়ে বলে মেকি স্বাধীনতা / সব ঝুট হ্যায় ঝুট হ্যায়...’?
হুমায়ুন আজাদ বলেছিলেন, ‘সবকিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে’। আজ যখন সব কিছু সত্যি সত্যিই নষ্টদের অধিকারে চলে যাচ্ছে তখন স্যার থাকলে কী বলতেন? কেউ কি বলবেন?
স্যার আপনে কই? আমরা এহন কী করমু?... আমরাও কী আপনের কতামতো নষ্টদের অধিকারে যামু? কেডা দেব এর উত্তর? কার কাছে যামু? কইয়া যান।... আপনে হুনতাছেন না? গলা ফাডাইয়া চিক্কার দিতাছি আপনে হুনতাছেন না?... রাও করেন না কেরে?...