somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সব মুক্তিযোদ্ধারই মূল্যায়ন চাই

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ রাত ৮:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

Click This Link
বাঙালি জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জণ স্বাধীনতা। ১৯৭১ সালে অনেক রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এ অর্জণে মুক্তিযোদ্ধারাই ছিলেন মূল কারিগর। নিজেদের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তির লক্ষ্যে অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধারা সেদিন পাকিস্তানি আর্মির বিরুদ্ধে দলে দলে অস্ত্র ধরেছিলেন। দেশমাতৃকার ডাকে তাঁরা এতটাই বিভোর ছিলেন যে অনায়াসে উপেক্ষা করেছেন প্রিয়জনদের শত বাধা। এসব কথা আমরা সবাই জানি। এ জাতীয় কথা আমাদের চারপাশে উচ্চারিত হয় নিয়মিতই। নেতানেত্রীরা তাদের বক্তৃতায় মুক্তিযোদ্ধাদের কথা বলতে বলতে মুখে ফেনা তুলে ফেলেন। জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ এসব সন্তানদের নিয়ে লেখা হয়েছে অনেক গল্প, কবিতা, উপন্যাস, চলচ্চিত্র, প্রবন্ধ এবং গান। ‘তোমাদের এই ঋণ কোনোদিন শোধ হবে না...’ ইত্যাদি ইত্যাদি। এতসব কথাবার্তার প্রেক্ষিতে মুক্তিযোদ্ধারা সবসময় জাতির একটি বিশেষ মর্যাদা পাবেন এমনটা ভাবাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমাদের হোঁচট খেতে হয় তখনি যখন আমরা স্বাধীনতার ৩৮ বছর পরও পত্রিকার পাতায় বৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধাদের ভিক্ষুক, রিক্সাচালক কিংবা ফেরিওয়ালা হিসেবে আবিস্কার করি। আমাদের কথার সাথে কাজ যে কতটা বিরোধাত্মক তা বুঝতে আমাদের আর বাকি থাকে না। আর তাই সোনালি স্বপ্নের খোঁজে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করা মুক্তিযোদ্ধাদের চোখেমুখে আজ আশাভঙ্গের হতাশা। জীবনযুদ্ধে পরাজিত মানুষগুলোর চোখ থেকে অনেক আগেই হারিয়ে গেছে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরে পাওয়া সেই খুশির ঝিলিক।

মুক্তিযোদ্ধাদের একটি বড় অংশ উপেক্ষিত হলেও আরেকটি অংশের জন্য সরকার কিছু সুবিধা প্রদানের ব্যবস্থা রেখেছে। আরো স্পষ্ট করে বললে শিক্ষিত মুক্তিযোদ্ধা এবং তাঁদের শিক্ষিত সন্তানদের জন্য। এসব সুবিধার মধ্যে চাকুরির বয়সসীমা ও কোটাব্যবস্থা অন্যতম। কোটাব্যবস্থার আকার নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও এ কথা ঠিক যে, জাতি এর মাধ্যমে কিছুটা হলেও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর সুযোগ পাচ্ছে। আশার কথা হলো এবার মুক্তিযোদ্ধাদের চাকরির বয়সসীমা ৫৭ থেকে বাড়িয়ে ৫৯ করতে যাচ্ছে সরকার। (সূত্র: সমকাল, ২৩ আগস্ট, ২০০৯) বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই সরকারি চাকরির সবার বয়সসীমা বাড়াতে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবনা তৈরি করে সংস্থাপন মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর প্রশাসন বিষয়ক উপদেষ্টা এইচটি ইমামের কাছে পেশ করেছিলেন। তবে কৌশলগত কারণে সরকার এখন শুধু মুক্তিযোদ্ধাদের চাকরির বয়সসীমা বাড়াতে পারে বলে উক্ত রিপোর্টে বলা হয়। প্রধানমন্ত্রীর সংস্থাপন মন্ত্রণালয় ও প্রশাসন বিষয়ক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম বলেছেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরির বয়সসীমা বাড়ানোর ব্যাপারে সরকারের একটি নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে। তবে অন্যদের বয়স বাড়ানোর বিষয়টি আরও পরীক্ষা-নীরিক্ষা করার প্রয়োজন রয়েছে।’

যে কারণেই নেয়া হোক না কেন সরকারের এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাতেই হয়। সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বয়স বাড়ানোর বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাপারে কারো প্রশ্ন থাকার কথা নয়। তবে একটি বিষয়ে প্রশ্ন রয়েই গেল। সরকারি চাকুরিজীবী মুক্তিযোদ্ধাদের কথা বলা হলেও বেসরকারি চাকুরিজীবী মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে এখনো কিছু বলা হয় নি। বেসরকারি বলতে এখানে সরকারি এমপিওভুক্ত স্কুল-কলেজের কথা বলা হচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানে বয়সসীমা ছাড়াও সরকারি বিভিন্ন নিয়মকানুন অনুসরণ করা হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের বয়সসীমা বাড়ানো প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‘মুক্তিযোদ্ধারা যেহেতু চাকরিতে ঢুকেছেন ৩২ বছরে, তাই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তাদের অবসরে যাওয়ার বয়স বাড়তেই পারে’। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, যে যুক্তিতে সরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মুক্তিযোদ্ধাদের বয়সসীমা বাড়ানো হচ্ছে, সেই একই যুক্তিতে এমপিওভুক্ত এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মুক্তিযোদ্ধাদের বয়সসীমাও কেন বাড়ানো হবে না? মুক্তিযোদ্ধারা যেহেতু বিশেষ মর্যাদা পাওয়ার দাবি রাখে তবে সেখানেও কেন বৈষম্য করা হবে? সকল নাগরিককে সমানভাবে দেখার যে বিধান আমাদের সংবিধানে রয়েছে তা যে সব ক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না সেকথা আমরা সবাই জানি। বিভিন্ন দলে, ধর্মে, জাতিতে বিভক্ত থাকার দুর্নাম আমাদের রয়েছে। এ বিভক্তিকেই আমাদের উন্নতির প্রধানতম অন্তরায় ধরা হয়। এখন মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষেত্রেও কি একই আচরণের ধারবাহিকতা ধরে রাখতে হবে? যারা কিনা জীবন বাজি রেখে দেশ স্বাধীন করেছিলেন সকল প্রকার বিভক্তি-বৈষম্য থেকে মুক্তির আশায়!

এমনিতে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে শুধু চাকুরিজীবীরাই সরকারি কিছু সুবিধা পেয়ে থাকেন। অন্যরা মুক্তিযোদ্ধা ভাতার নামে যা পান তা দিয়ে বর্তমান বাজারে যে কী হয় সেকথা না বললেও চলে। এখন চাকুরিজীবী এসব মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝেও যদি সরকারি-বেসরকারি এভাবে বিভক্তি সৃষ্টি করা হয়, তবে সেটা আমাদের জন্য বড় ধরণের অকৃতজ্ঞতার পরিচয়ই হবে। সরকারকে মনে রাখতে হবে মুক্তিযোদ্ধা মানে মুক্তিযোদ্ধাই। তাঁরা সকল দল-মত-ধর্ম-শ্রেণীর উর্দ্ধে। তাই তাদের ব্যাপারে নেয়া কোনো সিদ্ধান্তের সুফল যাতে সবাই ভোগ করতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। মন্ত্রী ও উপদেষ্টার বক্তব্য থেকে স্পষ্ট যে সরকার সহসাই বয়সসীমা বাড়ানোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। আমরা জানি প্রতি মাসেই সরকারি-বেসরকারি সব ধরণের প্রতিষ্ঠান থেকেই কিছু কিছু মুক্তিযোদ্ধা অবসরে যাচ্ছেন। এখন দেখা যাবে সরকারি সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার কিছু দিন আগে হতাশায় পুড়তে পুড়তে কিছু মুক্তিযোদ্ধা অবসরে চলে যাবেন। এ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য সিদ্ধান্তটি অন্তত জুলাই মাস থেকে কার্যকর করা যেতে পারে।

স্বপ্নভঙ্গের হতাশা নিয়ে অনেক মুক্তিযোদ্ধাই বর্তমানে এমপিওভুক্ত স্কুল-কলেজে শিক্ষকতা করে কোনোমতে জীবিকা নির্বাহ করছেন। চাকরি থেকে অবসর নেয়ার পর কী হবে তা নিয়ে তাদের মাঝে রয়েছে চরম অনিশ্চয়তা। এখন যদি তাঁরা দেখেন শুধু বেসরকারি চাকুরে হওয়ার কারণে তাঁরা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, তখন তাদের হতাশার মাত্রাটা কোথায় গিয়ে পৌঁছাবে তা সহজেই বুঝা যায়। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের মধ্যে এভাবে বিভেদ সৃষ্টি না করে সরকার তাঁদের চোখে মুখে আবারো বীর সেনানীর দীপ্তি নিয়ে আসার চেষ্টা করবে আমরা সে আশাই করি। তাঁদের মাঝে যাতে অন্তত এই বিশ্বাসটা তৈরি হয় যে, ‘যাক, জাতি শেষ পর্যন্ত আমাদের মূল্যায়ন করেছে’।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ রাত ৮:৪৭
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×