somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভাষায় ভাসা

২৩ শে অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ১১:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সারা দিন রাত হিন্দি গান শুনি - দেখাহে পেহলি বার...। অর্থ কিছুই বুঝিনা। বাংলার সাথে হে হু লাগালেই যে হিন্দ হয় তা খেয়াল করেও দেখার বুদ্ধি নাই। সিদ্ধান্ত নিলাম হিন্দি শিখবো। ওস্তাদ খোঁজা শুরু করলাম।

এখনের বাচ্চারা ডরিমন দেখে মনের অজান্তেই হিন্দিটা শিখে ফেলে। অন্য একটা ভাষা শিখবে এই ভেবে শিখে না। ন্যাচেরালিই শিখে। কিন্তু আমাদের সময় বিষয়টা এত সহজ ছিলো না। খোঁজে খোঁজে ওস্তাদ পাওয়া গেলো। ওস্তাদের নাম মোস্তফা, পেশায় রেডিও, টুইনওয়ান মিস্ত্রী।

পড়ি ক্লাশ সিক্সে। বাজারে যাওয়া নিষেধ। কী করি? বুদ্ধি একটা বের হলো। স্কুল থেকে ফেরার পথে বাজার হয়ে বাড়ী ফিরি। মাঝে ওস্তাদের কাছে তালিম নেই। ওস্তাদ মহা ব্যস্ত। তার যে শুধু রেডিও সারতে হয় তা না। সাথে গঞ্জিকাও সেবন করতে হয়। আরো অনেক আছে এমন। ফাঁকে তিনি আমাকে মাঝে মধ্যে দুই এক মিনিট সময় দেন। এই দুই এক মিনিট সময়ের জন্য তার অনেক ছোট ছোট কাজ করে দিতে হয়। যেমন, স্পিকারের লাইন কেটে গেছে; ভাতিজা তুমি ঝালাইটা করো আমি একটু আসতেছি। উনি গেলেন গঞ্জিকা সেবনে, আমি বসে বসে কাজ করছি। আবার একটু ভয়ও আছে, কেউ দেখে ফেল্লে বিপদ, বাসায় বলে দিবে।

ওস্তাদের তালিম শুরু হলো এই ভাবে -
- ভাতিজা তুমি হইলা তুম, আমি হইলাম হাম।
- মানে আপনে হইলেন হাম, আর আমি হইলাম তুম?
- হ এই তো ঠিক ধরছো।

প্রথম দিনের লেকচার এতটুকুই - তুম, হাম। আরেক দিন শিখাচ্ছেন
- ভাতিজা আচ্ছা মানে হইলো ভালো। ধরো তোমারে আমি শিখাইতেছি, এইটা ভালো একটা কাজ না?
- হুম কাকু
- তো ভালো কাজ করাইলাম মানে আমি নিজেও ভালো?
- জ্বি অবশ্যই।
- তো হিন্দিতে আমারে ভালো বলো।
আমি ভাবলাম ভালো মানে তো আচ্ছা, আবার উনাকে তো বলতে হবে হাম। বল্লাম
-হাম আচ্ছা।
মোস্তফা কাকু খুব খুশি হলেন, আমার পিঠ চাপড়ায়ে বল্লেন-
- এই তো ভাতিজা হিন্দি প্রায় শিক্খ্যা ফালাইছো। এখন শুধু হাম, তুম, আচ্ছা বলতে থাকো।

প্রাথমিক জ্ঞান তো হয়ে গেছে হিন্দির। অতএব এখন গানের অর্থ বের করা যায়। ১৯৯২ সাল, সাজন সিনেমা তখন মহা হিট। গেলাম মোস্তফা কাকুর কাছে। কাকু, জিয়ে তো জিয়ে কেয়সে... এই গানের অর্থটা বুঝায়ে দেন। মোস্তফা কাকু আমার হাতে একটা রেডিও সার্কিট ধরায়ে দিয়ে বল্লেন, ভাতিজা তুমি এর গ্যাং এ কি সমস্যা দেখো, আমি আসতেছি। তিনি গেলেন গঞ্জিকা সেবনে। অনেক্ষণ পর ফিরলেন। আবার জিজ্ঞাসা করলাম, কাকু এই গানের মানে কী? উনি বল্লেন,
ভাতিজা এই গানের প্রথমে যেইটা বলে, জিয়ে তো জিয়ে... এর কোন মানে নাই। মানে হইলো তোমার পরের একটা লাইনে। জিনা নেহি হে তেরে বিনা..। এর মানে হইলো, তুমি ছাড়া আর কারো সাথে জিনা করবো না। এরপর তিনি জিনা কী জিনিস এই বিষয়ে একটা লেকচার দিলেন। আমি কান গরম করে বাসায় ফিরলাম।

ছোট মানুষ, লজ্জা পেয়ে গেলাম। এই ওস্তাদের কাছে তালিম এইখানেই শেষ। শৈশবের এই লজ্জাটা আজও কাটাতে পারলাম না।
-০-
ভাষা নিয়ে আমার সহজ একটা কথা আছে। ভাষা ছাড়া ভেসে থাকতে হয়। কোন দেশ, জাতি সম্পর্কে জানতে হলে, তাদের সাথে গভীর ভাবে মিশতে গেলে তার ভাষাটা জানতে হবে। শিল্প, সাহিত্য, মানুষের আচার ব্যবহার এইসবের অমৃতে ডুব দিতে গেলে ভাষাটা জানতে হবে। যে শিশুরা ডরিমন দেখছে, দেখুক। পাশাপাশি তাদেরকে টম এ্যান্ড জেরীও দেখান। অন্য ভাষাগুলোতে কিছু পেলে তা ও শেখান। আর বাংলাটা নিজেরা শুদ্ধ ভাবে বাসায় বলুন। পড়াশুনা অনেক তিতা জিনিস। পড়াশুনা করে ভাষা যতটুকু শেখা যায় এতে ভেসে থাকা যায়, ডুব দেওযা যায় না। ভাষা শিখে তাতে ডুব দিতে গেলে মজা নিয়ে তা শিখতে হয়। তো শিশুদেরকে টিউটর রেখে পড়াশুনা করিয়ে ভাষা শিখানোর চাইতে মজা করে কার্টুন দেখিয়ে ভাষা শিখানোটাইতো মনে হয় বেটার, নাকি?
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ১১:০৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×