চট করে একটা জিনিস ভাবলাম।
যে ভদ্রলোক আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন, তার কাজ কী?
তার কাজ হলো, অফিসে অফিসে গিয়ে অর্ডার ডেলিভারী করা। এবং টাকা কালেক্ট করা।
যে অফিসে ভদ্রলোক টাকা কালেক্ট করতে যান। সেখানে কমন একটা ঘটনা নিশ্চয়ই ঘটে। জিজ্ঞাসা করা হয়
- আপনার নাম?
- ওমক
তার পর ঐ কোম্পানীতে ফোন দিয়ে বলা হয়
- ওমক নামের একজন লোক আসছেন, তার কাছে কি টাকাটা দিবো?
- হ্যাঁ দেন।
কিন্তু যতক্ষণ এই ক্রসচেকিং এ লোকটা পাশ না করছে ততক্ষণ লোকটার মনের অবস্থা কী হয়? নিশ্চয়ই লোকটা নিজেকে খুব ছোট মনে করে। নিশ্চয়ই লোকটা মনেমনে ভাবে, আহারে কত বড় বড় স্যারদের সাথে কাজ করছি, যারা আমাকে চিনেও না, বিশ্বাস ও করে না।
তাই, আমি শুরু করলাম এই ভাবে। হাসি দিয়ে হাত বাড়ালাম। নিজের নাম আগে বল্লাম
- ভাই, আমার নাম অরুণ, আপনি?
ভদ্রলোক তার নাম বল্লেন, আজিম।
আমি এই ফাঁকে স্কাইপে জিজ্ঞাসা করে নিলাম, যে ভদ্রলোক টাকা নিতে আসবেন, তার নাম কী। অতএব খুব গোপনেই ক্রসচেক হয়ে গেলো।
ভদ্রলোক দেখি হাপাচ্ছে। বুঝলাম, লিফ্ট এখনো ঠিক হয়নি। বল্লাম,
- আজিম ভাই, এক কাপ চা খাওয়ানোর অনুমতি যদি দিতেন।
ভদ্রলোক এত বড় কথার মানেটা একটু দেরীতে বুঝলেন। বুঝার সাথে সাথে হাসি দিয়ে বিগলিত হয়ে না করলেন। আমি দাবি নিয়ে বল্লাম,
- আরে ভাই বসেন তো। লিফ্ট নষ্ট, একটু রেষ্ট নিতে নিতে চা খান।
ভদ্রলোক আমার সামনে বসে চা খাচ্ছেন। এই ফাঁকে টুকটাক গল্প করলাম। আপনার কয় ভাই কয় বোন টাইপ গল্প। শুনলাম, ভদ্রলোকের ছোট ভাইয়ের রেষ্টুরেন্ট এর ব্যবসা আছে। চা খাওয়া শেষ ভদ্রলোক দাঁড়ালেন।
আমাকে অবাক করে দিয়ে ভদ্রলোক বল্লেন
- স্যার এত বছর ধরে চাকরী করি। কত কত অফিসে যাই। এমন আদর, এমন সম্মান কেউ করে নাই।
আমি এই কথার কোন উত্তর খোঁজে পেলাম না। চেয়ার থেকে উঠে গিয়ে ভদ্রলোককে জড়িয়ে ধরলাম। বুকে বুক লাগানো একটা বিশাল যাদু। এই যাদুটাই তাকে দেখালাম। ভদ্রলোক বড় একটা মন করে, খুশি হয়ে আমার রুম থেকে বের হয়ে যাচ্ছেন। আনন্দে আমার চোখ ছলছর করে উঠলো।
আমি মোশারফ করিমের মত ফিল করলাম, আমার এত আবেগ ক্যারে?