আপেলকে একদিন বললাম
- চলো, গুণীসঙ্গে একটা রাত কাটাই।
আপেল তখন আমারে অনেক পছন্দ করে। খুশি হয়েই বললো
- চলেন।
বয়সে বড় এই বন্ধুকে আমি "তুমি" করে বলি, আমাকে "আপনি" বলে ও। সন্ধার সময় গিয়ে পোঁছলাম মহসিন হাবিব ভাইয়ের বাসায়। গল্প শুরু হইলো রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে। ঝড়া পাতা'গো ঝড়া পাতা আমি তোমারই দলে, আমার প্রাণের পরে চলে গেলো কে... এইসব গান আগে তিনি গেয়ে শুনালেন। তারপর গানগুলো কবে লেখা, কোথায় বসে লেখা, সব ইতিহাস এমন সুন্দর করে বলতে লাগলেন! মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনছিতো শুনছিই। গান বুঝি সামনাসামনি শুনতে এত সুন্দর! এত সুন্দর পরিবেশ কি স্বর্গেও সম্ভব? আর ব্যাখ্যার কথা কী বলবো! যেন কল্পনায় কবিকে দেখছি, এমন সুন্দর ব্যাখ্যা।
রত গভীর হলো, ঠাকুরের কবিতার মানবতার ব্যাখ্যা গল্পকে টেনে নিয়ে গেলো ধর্মে। শুরু হলো ধর্মের উৎপত্তি নিয়ে গল্প। মার্ক টোয়েন যে এত জ্ঞানী কথা এত রসালো ভাবে বলে গেছেন তা কোনদিন খেয়াল করি নাই। মহসিন ভাই একে একে চোখের সব পর্দা সরিয়ে দিতে লাগলেন। যখন ভোর হলো, আমার অন্ধত্ব ঘুঁচে গেলো। আমি দিব্য লোকে যেন সব দেখতে লাগলাম। আমি যে কথা বলতে গেলাম, এ কথা বলার আগেই মহসিন ভাই একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বললেন
- জানেন অরুণ, ভালোবাসা ছাড়া আর আছে কী! ভালোবাসতে জানলে আর এতকিছু জানতে হয় না।
তখন সকালের আলো পড়েছে জানালায়। আপেল'কে নিয়ে বের হইলাম। আপেল বললো
- সর্বনাশ অরুণ ভাই! এই লুকের কাছে আর আসা যাইবো না, হে একটা লুকই!
আমি বললাম
- হুমম আপেল, এই লোকের কাছে আর আসার দরকার নাই। মানুষ হবার মন্ত্র একবার যে শিখে যায়, তার বারবার আর মন্ত্রপাঠ করতে হয় না।