somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রোম্যান্টিক কাস্টমার :|

২৮ শে অক্টোবর, ২০১১ রাত ৩:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২০০৬ সালের এপ্রিল মাস । অফিসে কাজ করছি খুবই ব্যস্ত । এমন সময় একটা ছোকড়া মতো ছেলে এসে বলল " ম্যাডাম একটা একাউন্ট ওপেন করবো ।" দেখলাম সে আগেই সব প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস জেনে সাথে করেই এনেছে । একটু ভালোই লাগলো - এমন স্মার্ট কাস্টমার পেয়ে । যাহোক একাউন্ট ওপেন করে দিলাম - আর বললাম এটিএম কার্ড আর চেকবই সময় মতো বাসার এড্রেস এ চলে যাবে । শুধু পিন নম্বরটা ব্রাঞ্চে এসে কালেক্ট করা লাগবে ।

কয়েকদিন পর সেই কাস্টমারটা আবার এসেছে । বললাম - কিছু হেল্প লাগবে আপনার ? সে বলল - তার লোন লাগবে । আমি বললাম - ৬ মাস একাউন্ট মেনটেইন করেন - তারপর দেখবো দেয়া যায় কিনা । কয়দিন পর আবার এসে বলল " আমার ডলার লাগবে " । কারণ দেখিয়ে বললাম কেন তাঁকে আমরা ডলার দিতে পারছিনা । এভাবে বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে , নানান অজুহাতে সে আমার কাছে আসা শুরু করলো । একদিন খুব বৃষ্টির দিনে অফিসে হঠাৎ এসে বলল " আমার সাথে কফি খেতে যাবেন?" আমার তো মাথায় বাজ ! আমার ডেস্কে থাকা অন্য কাস্টমার ফিক করে হেসে ফেললো । যাহোক সেদিনের মতো বিদায় করলাম । এভাবে কিছুদিন গেলো ।

একদিন সিকিউরিটি গার্ড এসে বলল " আপা আপনার ভিজিটর এসেছে" আমি বললাম - আমার কাছে পাঠিয়ে দিতে । গার্ড বলল " উনি ভেতরে আসবেননা । আপনাকে বাইরে ডাকছেন " । একটু বিরক্ত হয়ে বাইরে এসে দেখি সেই ছোকড়া কাস্টমার পেছনে দুইহাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে । দেখে মনে হচ্ছে চোরকে হাত বেঁধে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ । তাঁকে দেখেতো আমার মেজাজ গরম । আমি বললাম - কি ব্যাপার আবার কি চান ?
সে হাত দুটো সামনে এনে এক তোড়া ফুল দিয়ে ইংলিশে বলল " আমি জানিনা কিভাবে একজন মেয়েকে প্রপোজ করতে হয় । শুধু জানি - আমি এই ফুলগুলো আপনার জন্য কিনেছি । আপনি কি করবেন সেটা আপনার ব্যাপার" । বলেই পেছন ফিরে হনহন করে হেঁটে চলে গেল । একবারও পেছনফিরে তাকালো না । আমিতো পুরা বেকুবের মতো দাঁড়িয়ে আছি । কাস্টমাররা ব্যংকে আসা যাওয়ার পথে আমাকে দেখছে । গার্ডরা সব আমার দিকে তাকিয়ে মজা নিচ্ছে ।

এভাবে চলতে চলতে - কয়েকমাস কেটে গেলো । এই কয়মাসে সেই কাস্টমারটা আমাকে বিভিন্নভাবে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে কয়লা বানিয়ে ছেড়েছে । সেইসব কথা আরেকদিন বলবো ।

তবে খুবই নাটকীয় ভাবে ২০০৬ সালের অক্টোবর মাসের ঠিক এইদিনে সেই ছোকড়া কাস্টমারটার সাথে আমার বিয়ে হয়ে গেলো । আজ আমাদের বিয়ের ৫ বছর হলো :D

ছোট করে শুধু একটা কথাই বলবো - এই ছেলেটার কাছ থেকে আমি অনেক অনেককিছু পেয়েছি , অনেক কিছু শিখেছি। তবে সবচেয়ে বেশী যেটা পেয়েছি তা হলো স্বাধীনতা । আর যেটা নতুন করে শিখেছি তা হলো বিপদ্গ্রস্থ মানুষকে সামর্থ্য অনুযায়ী সাহায্য করা । যতদিন বেঁচে থাকি - আমি যেন আমার ছেলে আর এই ছেলের বাবা'র হাত ধরে চলতে পারি ।
১৫০টি মন্তব্য ১৫০টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদী নামের এই ছেলেটিকে কি আমরা সহযোগীতা করতে পারি?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:০৪


আজ সন্ধ্যায় ইফতার শেষ করে অফিসের কাজ নিয়ে বসেছি। হঠাৎ করেই গিন্নি আমার রুমে এসে একটি ভিডিও দেখালো। খুলনার একটি পরিবার, ভ্যান চালক বাবা তার সন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে হিমশিম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভালোবাসা নয় খাবার চাই ------

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:০৬


ভালোবাসা নয় স্নেহ নয় আদর নয় একটু খাবার চাই । এত ক্ষুধা পেটে যে কাঁদতেও কষ্ট হচ্ছে , ইফতারিতে যে খাবার ফেলে দেবে তাই ই দাও , ওতেই হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় ইউনিভার্সিটি শেষ করার পর, ৮০ ভাগই চাকুরী পায় না।

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৭



জাতীয় ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ালেখা শেষ করে, ২/৩ বছর গড়াগড়ি দিয়ে শতকরা ২০/৩০ ভাগ চাকুরী পেয়ে থাকেন; এরা পরিচিত লোকদের মাধ্যমে কিংবা ঘুষ দিয়ে চাকুরী পেয়ে থাকেন। এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×