আমাদের বাদ্যযন্ত্রগুলা কিন্তু কথা বলতে পারে। অবাক হচ্ছেন ? উহু… অবাক হবার কিচ্ছু নেই। তবে এই যন্ত্রগুলির ভাষা আমাদের থেকে আলাদা, বর্নমালা আলাদা…আলাদা তার ব্যাকরন। আপনি যেই ওয়েষ্টার্ন মিউজিক নিয়ে কথা বলুন কিংবা শাস্ত্রীয় সংগীত- মৌলিক ব্যাকরন ঐ এক জায়গা থেকেই শুরু হয়। আমরা যেমন আমাদের ভাষাকে লিখিত ভাবে প্রকাশ করবার জন্য বর্ণমালা ব্যাবহার করি, তেমন মিউজিকের ক্ষেত্রেও একধরনের বর্ণমালা আছে। মিউজিকের এক একটি বর্ণকে Note বলা হয়। এরকম মোটামুটি ১২ টি নোট মিউজিকে আছে, তবে মৌলিক ভাবে বলা যায় সাতটির কথা। সেগুলো পর্যায়ক্রমেঃ সা, রে, গা, মা, পা, ধা, নি । আপনার প্রশ্ন আসতে পারে, আজ লন্ডনে বসে যে ছেলেটা মিউজিক শিখছে সে ও কি সা, রে, গা … এগুলো ব্যাবহার করে ? উত্তর হবে না । এই প্রথাটি শুধু আমাদের এই উপমহাদেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। সাতটি মৌলিক নোটকে ওরা যেভাবে বলেঃ do, re, mi, fa, sol, la, ti । আবার এই সাতটি নোটকে সাংকেতিক ভাবে লেখা হয়ঃ C, D, E, F, G, A, B । তবে এই সাংকেতিক রূপটিই ওয়েস্টার্ন যন্ত্রগুলো শেখানো ক্ষেত্রে ব্যাপক ভাবে ব্যাবহৃত হয়। আচ্ছা এবার একটু গভীরে যাওয়া যাক । আমরা কম্পাংকের ব্যাপারে সবাই জানি, যেহেতু নোটগুলো শব্দ উৎপত্ত করে তাই কম্পাংক এর সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। আমি যখন C নোট টি কোন বাদ্রযন্ত্রে বাজাবেন একটি শ্রুতিমধুর শব্দ উৎপন্ন হবে। এবার যখন D নোট টি বাজাবেন সেটা C এর তুলনায় বেশি তীক্ষন হবে অর্থাৎ কম্পাংক বেশি হবে। এভাবে পর্যায়ক্রমে কম্পাংক ও তীক্ষ্ণতা বাড়তেই থাকবে। অর্থাৎ সবচে কম তীক্ষ্ণতা বা কম্পাংকের নোট হল C (উপমহাদেশীয় শাস্ত্র মতে “সা”) এবং সবচে বেশি তীক্ষ্ণতা বা কম্পাংকের নোট হল B (উপমহাদেশীয় শাস্ত্রমতে “নি”)। এভাবে C থেকে B পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে বাজিয়ে যাওয়াকে বলে Ascending Order এ বাজানো এবং এর উল্টোটাকে বলে Descending Order এ বাজানো।
আরেকটু গভীরে যাওয়া যাক, আমি আগে লিখেছিলাম মিউজিকের ১২ টি নোটের কথা। কিন্তু দেখতে পাচ্ছি মাত্র সাতটি। বাকি গুলো কই ? যখন আমরা পরপর দুটি নোট বাজাই তখন তখন তাকে বলা হয় Full Step । যেমনঃ কেউ যখন C নোট টির পরে D নোটটি বাজায় তখন একটা ফুল স্টেপ সম্পন্ন করল কারন এদুটি হল পর্যায়ক্রমিক নোট। কিন্তু মিউজিকে Half Step বলেও একটি কনসেপ্ট আছে। পর্যায়ক্রমিক দুটি মৌলিক নোটের মাঝামাঝি নোটটি বাজানোকে বলা হয় হাফ স্টেপ এবং মাঝের ঐ নোটটিকে বলা হয় প্রথম নোটটির Sharp Note । একে প্রকাশ করা হয় “#” চিহ্ন দ্বারা। ধরুন, আপনাকে জিজ্ঞাসা করা করা হল ১ এবং ২ এর মাঝের সংখ্যাটি কত ? আপনি বলবেন ১.৫ । ঠিক তেমন আপনাকে যদি এখন জিজ্ঞাসা করা হয় C এবং D এর মাঝের নোটটি কি ? আপনি ঠিক তেমন ভাবে বলবেন C# (উচ্চারনঃ সি শার্প ) । ঠিক তেমন ভাবে D এবং E এর মাঝের নোটটির নাম D# (ডি শার্প), F এবং G এর মাঝের নোটটির নাম F# (এফ শার্প) ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু একটা কথা আজীবন মনে রাখতে হবে যে E এবং B নোটের কোন শার্প নোট নাই। তাছাড়া অন্য নোট গুলার শার্প নোট আছে। এবার কতগুলো নোট দাঁড়ায় গুনে দেখিঃ
C -> C# -> D -> D# -> E -> F -> F# -> G -> G# -> A -> A# -> B
এখানে লক্ষণীয় দুটি ব্যাপার আছে। প্রথমত, খেয়াল করে দেখুন নোট মোট বারোটি। দ্বিতীয়ত, E এবং B এর কোন শার্প নোট নাই অর্থাৎ নোট দুটির নামের পাশে কোন # চিহ্ন নাই। এই গেল মিউজিকের নোট গুলোকে চেনার একটা উপায়। মিউজিশিয়ানরা বিভিন্ন গানে বিভিন্ন স্কেল, তাল, লয় ইত্যাদির সাথে সামঞ্জস্য রেখে এই নোটগুলোর থেকেই গ্রামটিক্যালি বেছে বেছে বাজিয়ে শ্রুতি মধুর সুর তৈরী করেন। পরবর্তীতে ইনশাল্লাহ গিটারের কিছু লেসনের মৌলিক দিক গুলো নিয়ে আলোচনা করব; যতটুকু আমার জ্ঞানে কুলোয় আর কি !!!
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৮:৪২