''সাম্যবাদী'' একটি পোষ্ট দিয়েছেন
''বিশ্ব মানবতার মুক্তির জন্য সমাজতন্ত্রই একমাত্র পথ ।''
Click This Link
ওনার মতাদর্শে আমার প্রশ্ন নেই । আছে শ্রদ্ধা, তবু দ্বিমত আছে কিছুটা ওনার বিশ্লেষন আর সিদ্ধান্তে ।
=> মুক্তির প্রশ্ন যদি হয় মানবতার, তবে দ্বিমত করবনা । মানবতার প্রশ্নে সমাজতন্ত্রের অবস্থানটা ইউনিকই ।
তবে, মুক্তির প্রশ্ন যদি হয় ব্যাক্তিসত্তার তবে পুজিবাদ আর সমাজবাদ দুটোই সেখানে পরম সমাধানে ব্যর্থ । সমাজবাদের ব্যর্থতা সেখানে গ্রোস, পুজিবাদেরটা তেলা মাথায় তেল দেয়া ।
বিশ্বব্যাপী সমাজতন্ত্র পিছিয়ে পড়েছে ব্যাক্তিসত্তার এই শৃংখল ভাংগার গানে । শোষীত-বন্চিত মানুষ বিপন্ন মানবতার মুক্তিতে খুশী বটে, কিন্তু
পেটের চাহিদা মিটে গেলেই কিংবা মৌলিক চাহিদা মিটে গেলেই সে আপন সত্তার অস্তিত্ব টের পেয়ে যায়, টের পায় সেই সত্তার শৃংখল ।
কার্ল মার্ক্স দেখিয়েছেন আদিম-সাম্যবাদী-গোষ্ঠীবদ্ধ মানুষ কিভাবে ''আমরা'' থেকে ''আমি'', ''আমাদের'' থেকে ''আমার'' সত্তায়
ভাবতে শেখে আর সে ভাবনা কিভাবে তাকে সম্পত্তির অধিকারে আগ্রহী করে তোলে, করে তোলে লোভী, আগ্রাসী । ট্রাজেডী হলো, সমাজতান্ত্রিক সমাজে ব্যক্তির মৌল চাহিদা মিটে গেলে সে এই সংকীর্ন সত্তার কথা মার্ক্সের প্রত্যাশা মত ভুলে যাওয়ার বদলে ভিন্ন আংগিকে তা ফিল করতে শুরু করে । মানুষের তো চাওয়ার শেষ নেই, তার এটা চাই সেটা চাই, অভাব না হলেও সুপারিয়রিটি দেখানো চাই, সামাজিক স্তরায়নের উপরের স্তরে যাওয়া চাই, ইত্যাদি ইত্যাদি । ফলে মানুষের মনে অনিবার্য আসে শৃংখল ভাংগার গান ।
আপনি যদি অর্থনীতি পড়ে থাকেন, তবে দেখবেন গভীরে গেলে, সমাজতন্ত্রের রীতি-নীতি অর্থনীতির ''বন্টন'' প্রক্রিয়ার সংগে যুক্ত । সেখানে মুখ্যত: আলোচনা কিভাবে সম্পদের সুস্ঠু বন্টন হবে, সমতা নিশ্চিত করা হবে । work according to your ability and earn according to your work. অর্থ্যাত এ পর্যায়ে প্রত্যেকে কেবল সেই পরিমান পাবে যে পরিমান কাজ সে করবে । (রাষ্ট্র এখানে বিকলাংগ বা পংগু, বৃদ্ধ বা শিশুর বিষয়ে, যারা কর্মে অক্ষম, কিছুটা উদাসীন )। এটার সম্পুর্নতা আসে সাম্যবাদে যেখানে নীতি হল: work according to your ability and earn according to your necessity. সেখানে বিকলাংগ বা পংগু, বৃদ্ধ বা শিশু, সবাই প্রয়োজন অনুযায়ী অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান-চিকিতসা-শিক্ষা জাতীয় মৌল চাহিদার নিশ্চয়তা পাবে ।
অন্যদিকে পুজিবাদের অর্থনৈতিক দর্শন ''উৎপাদন'' প্রক্রিয়ার সংগে যুক্ত । সেখানে বন্টনটা অটোমেটিক ধরে নেয়া হয়, অনেকটা ট্রিকল ডাউন থিয়োরির মত, যেখানে টাকা একটা সুনির্দিষ্ট চক্র ঘুরে সবার হাতে পৌছায় । তবে ডারউইনিজম এখানে চালিকাশক্তি: সারভাইবল অব দ্য ফিটেষ্ট, যোগ্যতরই টিকিয়া থাকিবে । পুজিবাদী কাঠামোয় তাই করপোরেট পুঁজি গড়ে ওঠে দ্রুত, দফায় দফায় হাত-পা গজায় ধনকুবেরদের । গড়ে ওঠে বাজার দখলের খেলা, প্রযুক্তি, বিগ্গাপন আর নিত্য নতুন ইনোভেশানের তীব্র প্রতিযোগীতা ।
সমাজতন্ত্রে করপোরেট পুজির আপদ নেই । ছল-চাতুরীর বিগ্গাপন নেই, নেই ইনোভেশান (বানিজ্যিক অর্থে) । ভোক্তারা তাই প্রতারিত হয়না, বিগ্গাপনের বাহুল্য মুল্য আদায়ের শিকার হয়না, ভোক্তার রিয়াল পার্চেজিং পাওয়ার তাই বেশী থাকে ।
অন্যদিকে মুনাফা অর্জনে পিছিয়ে থাকে সমাজতান্ত্রিক দেশের সরকারী বা বেসরকারী কোম্পানী । প্রযুক্তির পেছনে তাই কাড়ি কাড়ি অর্থ বিনিয়োগ করতে পারেনা যেমনটা মাইক্রোসফটরা পারে । পন্যের উৎকর্ষে তাই পিছিয়ে পড়ে অল্প কিছুদিনের ব্যবধানেই । বিশ্ববাজারে ক্রমশ: কমপটিটিভনেস হারিয়ে ফেলে । আর এর নিয়ন্ত্রিত বাজারের ভোক্তারা উচ্চমুল্যে ক্রয় করে বিশ্বাজারের পিছিয়ে পড়া দেশীয় পন্য । বাজার ক্রমশ: বিদেশীদের জন্য উন্মুক্ত হয়ে যেতে থাকে, নতুবা চোরাচালান অবশ্যাম্ভাবী হয়ে পড়ে । আভ্যন্তরীন বাজার উন্মুক্ত হয়ে গেলে সমাজতান্ত্রীক দেশের এসকল সরকারী-বেসরকারী কোম্পানী আকস্মিকভাবে বাইরের বড় বড় পুজিবাদী কর্পোরেট পুজির সংগে পেরে উঠতে হিমসিম খেয়ে বসে, ফলে দিতে হয় সরকারী ভর্তুকী নতুবা কোম্পানী দেউলিয়া । অন্যদিকে সরকারী ভর্তুকী দিতে গিয়ে সরকার দেউলিয়া, বেড়ে যায় ঋনের বোঝা, কিংবা পরোক্ষ কর ।
আল্টিমেল্টলী যা দেখা যায় তা হলো একটি বিশেষ অবস্থায় আসার পর
সমাজতন্ত্রের মানবিক-অর্থনৈতিক বন্টন নীতি যুগের সংগে খাপ খেয়ে উঠতে অপারগ হয়, পুজিবাদী ব্যবস্থা টিকে যায় । এটা একটি অর্থনৈতিক বিশ্লেষনে । অর্থ্যাৎ সাংস্কৃতিক বা রাজনৈতিক, সামরিক বা ধর্মীয় অন্যান্য কারনাদি যুক্ত হয়ে তা একেক সময়, একেক দেশে একেক রকম হতে পারে, হয়েও থাকে । যতদিন পৃথিবীতে মানুষ ব্যক্তিকেন্দ্রীক, ততদিনই পুজিবাদের জয় অনিবার্য । আর সম্ভবত: মানুষ জন্ম জন্মান্তরে, অন দ্য এভারেজ, ব্যক্তিকেন্দ্রীকই ।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ ভোর ৫:৫৬