somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দায় কার?!

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দেশের মানুষ দিন দিন ভদ্র, বিবেকবান ও মানবিক হচ্ছে! শহর, মফস্বলের ডাস্টবিনগুলোর দিকে তাকালেই তা কিছুটা টের পাওয়া যায়। কিভাবে?! -- আগে মানুষ ময়লা-আবর্জনা, উচ্ছিষ্ট খাবার ইত্যাদি ফেলত যত্রতত্র আর এখন অন্তত ডাস্টবিনের ভেতরে না হোক আশেপাশে এমনকি পাশের প্রায় পুরো রাস্তা জুড়েই! নগরবাসীরা অন্তত এই ফ্রি এর যুগে ফ্রি ফ্রি সুগন্ধ(!) আর সামর্থবান মানুষের মানুষের সংখ্যা বাড়ায় ডাস্টবিনে হরেক রকমের, হরেক স্বাদের উচ্ছিষ্ট খাবার একটু বেশি বেশি পরিমানেই পাওয়া যায়। এতে কিছু অবুঝ প্রাণীর, অসচ্ছল প্রাণীর(!) খাবারের অন্তত কিছুটা সংকুলান হয়। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য- কুকুর, বিড়াল, কাক, ইদুঁর বা ছুঁচো এবং ...ছিন্নমূল/ভাসমান মানুষ!!

এদের আর কষ্ট করে শহর জুড়ে চষে বেড়াতে হয় না। মোটামুটি একটা নির্দিষ্ট সময়ে আসলেই হয়। অনেক সময় এদের তৃপ্তিভরে মিলেমিশে আহার করার দৃশ্যও চোখে পড়ে আর অনুভূতির ভোঁতা দিকগুলো হঠাৎ হঠাৎ শানিত হয়ে উঠে, নাড়া দেয়। ভেতর থেকে কেউ যেন বিবেকের উপর হাতুড়িপেটা করে রক্তাক্ত করে! আবার ক্ষুধার্ত কালেভদ্রে নাকি অপরের খাওয়া দেখলেও শান্তি পায়। তাই মাঝে মাঝে কিছুটা শান্তিও (!) মেলে নিজের পেটেই যখন ক্ষুধার আগুন জ্বলে।

বিকালের দিকে পায়চারি করছিলাম এলোমেলোভাবে চট্টগ্রাম শহরের রাস্তায়! একটি অভিজাত এলাকার ডাস্টবিনে হঠাৎ চোখ আটকে গেল। অবাক হয়ে দেখলাম সেই অসহায় প্রাণীরা প্রাণভরে কোনরকম বিবাদ ছাড়াই আহার করছে। হরেক রকমের, হরেক স্বাদের খাবার। পোলাও-বিরিয়ানি, মাংস, ভাত, রুটি, ফলমূল ইত্যাদি! হোক না তা উচ্ছিষ্ট, তবুও....। একপাশে দুটো কুকুর, ডাস্টবিনের উপরের দিকটায় একটা বিড়াল উঠানামা করে তার পছন্দমত খাবার খাচ্ছে, কাকগুলো উড়াউড়ি করছে আর খাবার তুলে নিয়ে মনের আনন্দে খাচ্ছে। ইদুঁর আর ছুঁচোগুলো পাশের ড্রেন আর ডাস্টবিন দৌড়াদৌড়ি করে মনের আনন্দে খাবার খাচ্ছে। একপাশে এক মানব শিশু আনন্দের সহিত সুস্বাদু (!!) কিছু একটা খাচ্ছে, বয়স আনুমানিক দশ-বার। মাথার চুলগুলো এলোমেলো ময়লাযুক্ত। গায়ে পুরনো, ছেঁড়, বোতাম বিহীন ময়লাযুক্ত শার্ট। পরনে ছেঁড়া প্যান্ট । সারা শরীর জুড়ে শত অবহেলা, অনাদর আর বঞ্চনার চিহ্ন। অন্য একপাশে একজন চল্লিশোর্ধ নারী উচ্ছিষ্ট ভাত টাইপের কিছু একটা খাওয়ার পর আরো কিছু একটা পুরনো পলিথিনে ভরে নিয়ে চলে গেল। পরনে ছিল পুরনো অনেকগুলো তালি দেওয়া ছেঁড়া কাপড়। পুরো চেহারা জুড়েই দারিদ্র্য আর অনাদরের কষাঘাতের নির্মম চিহ্ন। পাশে দাঁড়িয়ে সব কিছু দেখছিলাম। বিবেকের উপরের চলছিল হাতুড়ি পেটা। চলে যাওয়া মহিলাটিকে কিছু না বললেও শিশুটিকে কিছু জিজ্ঞাসা করব বলে মনস্থির করলাম। দেখলাম- প্রাণীগুলো ভিন্ন ভিন্ন রকমের হলেও তাদের মধ্যে অদ্ভূত একটা সম্প্রীতি ছিল। কেউ কাউকে বিরক্ত না করে বা প্রতিযোগিতায় না গিয়ে মিলেনিশে সবাই খাবার খাচ্ছিল। এমন কি শত্রু ভাবাপন্ন কুকুর-বিড়াল, বিড়াল-ইদুঁর মধ্যেও কোন বিবাদ ছিল না। এ যেন আমাদের তথাকথিত ভদ্র মানব সমাজের প্রতি , সৃষ্টির সেরা জীবদের সমাজের প্রতি সম্প্রীতির এক অনন্য উদাহরণ যেখানে স্বগোত্রীয় মানবেরা তাদের নিজেদের মধ্যে প্রভাব-প্রতিপত্তি আর আধিপত্য নিয়ে নিজেদের মধ্যেই খুনোখুনি আর রক্তের হোলি খেলায় মত্ত।

শিশুটির সাথে কুকুরগুলোর খুব ভাব। আহার শেষে শিশুটি যখন কুকুরগুলোর সাথে খেলা করতে চলে যাচ্ছিল, তখন পেছন থেকে ডাকলাম-

- এই যে, শোন...
শিশুটি একটু তাঁকিয়ে আবার কুকুরগুলোর সাথে খেলতে লাগল। যেন পাশ কাটানোর চিন্তা। মনে হল মানবের থেকে ঐ পশুগুলোই ভালো বুঝছিল তাকে ঐ মূহূর্তে। আবার ডাকলাম। ও ভয় আর বিরক্তি নিয়ে বলল-

- কি, মাইরবেন আমারে? অরা ত খালি খালি মারে। এই টম আর টটি (কুকুরগুলোর দিকে ইশারা করে) আমারে বালা পায়। মেলা আদর করে, মারে না। আমিও করি!
- কারা মারে?
- মাইনস্যেরা। হটেলে, বারিত, দকানে। খানা চাইলেই গরম পানিও মারে।
অবাক হই। বিবেকের উপর হাতুড়িটা আরো জোড়ে পেটাতে লাগল। আবার জিজ্ঞাসা করি-
- তোমার বাসা কোথায়?
- বাসা নাই। রাস্তায়, ইসটিসন, বস্তিত থাকি।
- তোমার মা-বাবা কোথায়?
- বাবা কই জানিনা। মা কাম পায় না। কই কই জানি তাকে।
- নাম কি তোমার?
- বাসশা।
মানি ব্যাগে হাত দিয়ে বললাম- টাকা নিবে?
- আইজকা ত খাইচি। কাইল দিয়েন।

বলেই টম নামের কুকুরটার সাথে দৌড়ে চলে গেল। বিবেক কে আহত করে জন্ম দিয়ে গেল হাজারো প্রশ্নের! দেখলাম ওর বাদশাহী রূপটা! ওরা কত অল্পতে তুষ্ট! একদিন পেট সন্তুষ্ট হলে সেদিনের আর কোন চাহিদা নেই! আজ কোথায় ওদের মানবাধিকার-মৌলিক অধিকার?! কোথায় সমাজের বিবেক?! এরা নিজেদের বেঁচে থাকার জন্য সমাজে অপরাধের পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়! এই সমাজই ওদের অপরাধী হিসেবে গড়ে তোলে!! আচ্ছা শুনেছি ওরাও নাকি ভোট দেয়?!!!!
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১:৪০
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×