১০হ জুলাই ২০১২,
পরের দিন আমার building design এর assignment ছিল।এমন একটা assignment একা করতে পারব না!তাই বিকালে সিদ্ধান্ত নিলাম আমি আজকের রাত টা হলেই থাকব।কিন্তু জামা কাপড় সাথে না থাকায় আব্বুকে আসতে বললাম।আব্বু শ্যামলী থেকে হলে এসে আমার প্রয়োজনীয় জিনিস দিয়ে গেল,খুবই খুশী সে আমি জানি,তার মেয়ে পড়াশোনায় এত ব্যস্ত হলে সে খুবই খুশী হয়।কিন্তু হায়!!!! উপরে পৌঁছে শুনতে পারি আমাদের ওই ভিসি টা নিজের গদি বাঁচাতে ভয় পেয়ে ৪৪ দিনের জন্য আমাদের ছুটি দিয়ে দিয়েছেন!(!!)

কেন বসে থাকতাম আমি????আমার বাবা এত কষ্ট করে এসেছিল,বাড়ি গিয়ে বুঝেছে খামাখাই এসেছিল!আমার বুয়েট টা কি এমন একটা প্রতিষ্ঠান ছিল????আমার কি এমন অনিশ্চিত জীবন হওয়ার কথা ছিল??

যখন আমি ৫ম শ্রেণীতে পড়ি,তখন থেকেই বুয়েট আমার স্বপ্ন!সে স্বপ্নকে বাস্তব আমি নিমিষেই করতে পারিনাই!অনেক কষ্ট হয়েছে আমার,আমার বাবা চাইনি আমি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ি,তার ইচ্ছা ছিল মেয়ে ডাক্তার হবে।আমি অনেক ঝগড়া করেছি আব্বুর সাথে।যেদিন আমি চান্স পেয়েছি,আমার জীবনের একটা নতুন সূচনা হয়েছিল ওই দিন।

১ম শিক্ষাবর্ষ টা ভালই গেল আমাদের ০৮ ব্যাচের।এ,এম শফিউল্লাহ স্যার ছিলেন তখন ভি,সি। স্যারটা সত্যিই ভাল ছিলেন।

২য় বর্ষে যখন দলীয় ভি,সি,-প্রো, ভি,সি নিয়োগ পেল।ছাত্রলীগের দৌঁরাত্ম ভয়াবহ ভাবে বেড়ে গেল।চাঁদাবাজি,মারামারি বাড়ল।বিশ্বকাপের সময় এক জুনিয়র লীগার সিনিয়র ভাইয়ের গায়ে হাত তুলল।অস্থিরতায় বুয়েট বন্ধ হয়ে গেল।পরা পাক্কা এক মাসের জন্য!তারপর ধীরে ধীরে ছাত্রলীগের ছাতা আরো মেলল।মারামারি করে তারা ছাত্রফন্টের এক ভাইয়াকে হাত ভেঙ্গে দিল।ভি,সি দেখতে গেলেন,আর বললেন বুয়েট এ তো কোন রাজনীতি নাই,ছাত্রলীগ নাই।তারপর ঈশান ভাইকে আমাদেরই ব্যাচ এর লীগের ২টা ছেলে হাত ভেঙ্গে দিল পরীক্ষার আগে,কারণ সে লীগ করে তাকে কেন ভাইয়া থামাল এত দুঃসাহস! আমরা তিন দিন লাগাতার আন্দোলন করে ্তাদেরকে বহিষ্কার করলাম,কিন্তু না প্রশাসন পরীক্ষা বারবার পিছিঁয়ে তাদেরকে ফিরে আসার সুযোগ দিলেন।সে এখন যথারীতি আমাদেরই সাথে ক্লাস করে।এই অবিচারের প্রশাসন,অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়া প্রশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন নাকি অন্যায়????
তাকে যতবার ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে সে প্রতিবার বলেছে বুয়েট এ তো কোন রাজনীতি নাই,ছাত্রলীগ নাই।তারপর কয়দিন আগেও যখন আমাদের এক মারাত্মক অসুস্থ সহপাঠীর জন্য তার কাছে সাহায্য চাওয়া হল,সে বলল,তোমাদেরকে কেন আমি সাহায্য করব?
এইরকম একটা লোকের বিরুদ্ধে না দাড়িঁইয়ে কি উপায় ছিল আমাদের???সে যা খুশি করত আর আমরা শুধু দেখতাম,কারণ আমাদের সেশন লস হবে!

সিনেমায় যখন সকল বাধা উপেক্ষা করেও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সবাই লড়ে,তখন তো আপ্নারা সবাই হাততালি দেন,তাহলে এখন কেন হাসছেন আমাদের নিয়ে??কেন আমাদের বিদ্রুপ করে হতাশ করছেন?

পুরোটা দেশ ছেয়ে গেছে দুর্নীতিতে,আমরা বলিনা আমরা মহান।কিন্তু আমরা জানি আমাদের এখানে শিক্ষার পরিবেশ ছিল।আমরা জানি ছাত্রলীগ এখানে ত্রাস ছিলনা,যখন তখন তারা কারো হাত পা ভেঙ্গে দিতে সাহস পেত না।প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ দুটি পদে যারা আছে তারাই যখন অন্যায়ের পক্ষে থাকে,মিথ্যাচার করে,আমাদেরকে ছাত্র না মেনে ওই সব লীগের ফেল করা ছেলেদেরকে ছাত্র বলে,তাদের রেজাল্ট পরিবর্তন করে,তার বিরুদ্ধে না দাঁড়ানী ছাড়া আমাদের কি করার থাকে?

আমরা জানি আমাদের ভবিষ্যত আজ হুমকিতে।আমি দেশের সেরা শিক্ষার্থীদের একজন ,এ কারনে আমার আজ এ অবস্থা।কিন্তু আমিতো শুধু পাতা উল্টায়ে মুখস্থ করিনি।আমি শিখেছি যে

"অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে,
তব ঘৃণা যেন তারে তৃণসম দহে"

আমরা শুধু ঘরে বসে পত্রিকা দেখব আর বলব দেশটা গেল,শেষ!আমার নিজের কিন্তু প্রতিবাদ করার দরকার নেই,তাই না???

ঐ যে মুনাজ,জব্বার আর মিজান,শামীম আরা ভি,সি,র সুবিধাভোগী ছাত্র,কর্মচারী আর কর্মকর্তাগুলো প্রেস কনফারেন্স করে,মিডিয়া ফলাও করে দেখায়!ফ্লোরে শুয়ে ,বসে যেই আমরা রাত কাটাচ্ছি আমাদের নিয়ে প্রেসের কোন কথা নাই!ঝড় বৃষ্টি রোদ উপেক্ষা করে আমরা বসে আছি।আমাদের কোন দাম নাই! দাম আছে শুধু প্রধানমন্ত্রীর এক কালীন গৃহশিক্ষক ঐ ভি,সি,র!

আমরা তদন্ত কেন চাইনা?কারণ শুধু আমরা না সবাই জানে,তদন্তে সরকার দলীয় কারো দোষ সামনে আসে না!আমরা এই ভি,সি,কে পদে রেখে ক্লাসে যেতে পারবনা,এখন আর কিছুতেই তাঁকে ছাড় দেওয়া যাবেনা।দিলে আমাদের জন্য সর্বনাশ হয়ে যাবে!আমাদের জীবন টা হুমকিতে,কারণ লীগের ছেলেরা আমাদের হলে হলে নতুন্দের হুমকি দিচ্ছে।এমন কি প্রথম দিন যখন আমরা জমায়েত হয়েছি ফাইরুজ (লীগের এক শীর্ষ নেতা) আমাদের প্রকাশ্য হুমকি দিয়েছে।

এরা কখনো ক্লাসই করেনা,এরা আবার গ্রেডিং আর ক্লাসের বড় বড় কথা বলতেছে!আমাদের সিনিয়র ব্যাচে ১ম যে আপু তাঁকে দেখছি দিন রাত ২৪ ঘন্টা বসে আছেন,তাঁর কি ভবিষ্যত ভাবনা নেই??


আমারতো যা ক্ষতি হবার হয়ে গেছে আমি এবং আমরা আমাদের পরবর্তী দের জন্য বুয়েটকে নিরাপদ করে যেতে চাই।কারণ একটাই আমি খালি বইয়ের অক্ষর মুখস্থ করিনি,আমি আমার দেশকে আমার প্রতিষ্ঠানকে সত্যি ভাল বেসেছি।আমি অন্যায়কে চাটিনি,আমি তাকে ঘৃণা করেছি।না জেনে না বুঝে,এমন কোন কথা আমাদেরকে নিয়ে বলবেন না,যা আমাদের এই আন্দোলনকে নিরুৎসাহিত করে।পাশে এসে যদি নাই বা দাঁড়ালেন,পিছন থেকে কুকথা বলবেন না প্লিজ!আমার প্রতিষ্ঠান,আমিই নিশ্চয়ই ভাল জানি,কি হচ্ছে আর আমার কি করার ছিল।জানার থাকলে প্রশ্ন করুন,আর না জানা থাকলে উলটাপালটা কিছু বলবেন না,বিনীত অনুরোধ।

দুর্নীতি আর অন্যায় সইতে সইতে মানুষের এমন অবস্থা যা আমাদের আন্দোলন কে বাড়াবাড়ি বলে।হজম করে যাওয়াই উচিত ছিল,তাই না?????