somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

র‍্যাব থাকবে নাকি থাকবে না?

২৯ শে মে, ২০১৪ রাত ১২:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


র‍্যাব কি? এটা পুলিশেরই একটা শাখা। হয়তো সেটা বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে গঠিত হয়েছে, সেখানে হয়তো সেনাবাহিনীর সদস্যদের সংখ্যাই বেশি, কিন্তু এটা কিন্তু কোন সামরিক বা আধা সামরিক বাহিনী না। সিআইডি, ডিবি ইত্যাদির মতো র‍্যাবও তাদেরই একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান, যার প্রধান প্রতিষ্ঠার পর থেকেই পুলিশের একজন অতিরিক্ত আইজি পদপর্যাদার কর্মকর্তা। যেমনটা থাকে সিআইডি বা এসবিতে।

তাই যারা প্রশ্ন তোলেন, পুলিশ থাকতে র‍্যাব কেন, তাদের প্রশ্নের গোড়াতেই গলদ। কারণ র‍্যাবও তো পুলিশ।

কিন্তু সবার আগে যে প্রশ্নটি একবার ভাবা দরকার, পুলিশের মধ্যে র‍্যাবের মতো একটি বাহিনী তৈরি করতে হলো কেন? পুলিশের এতগুলো শাখা থাকতে কেন নতুন একটি শাখা খুুলতে হলো? আর কেনই বা প্রতিষ্ঠার দশবছর পরে সেটি নিয়ে এত প্রশ্ন উঠছে?

কারণ প্রথাগত পুলিশি ব্যবস্থায় সব কাজ করা সম্ভব হচ্ছিল না। সাধারণ থানা পুলিশ সরাসরি মাঠপর্যায়ের ব্যক্তিদের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে হয়। তাই অনেক সময়ই তাদের কাছ থেকে গোপন তথ্য ফাস হয়ে যায় বা তদন্তে ভালো ফলাফল পাওয়া যায় না।

তাই দেখা যায়, যে মামলার তদন্ত স্থানীয় থানা করতে পারে না, সেটাই যখন ডিবি বা সিআইডিতে আসে, তারা দ্রুত আসামিদের গ্রেপ্তার করে বা সমাধান করে। ডিবি বা সিআইডিতে যারা চাকরি করে, তারা কি বিশেষ ট্রেনিং নিয়ে আসে। তা নয়, থানায়, জোনে যারা কাজ করেন, তারাই কিন্তু বদলি হয়ে ডিবিতে যান। আবার ডিবি থেকে থানায় আসেন। কিন্তু ডিবি বা সিআইডি ভালো ভাবে কাজ করতে পারে কেন? কারণ, তাদের তদন্ত, লজিস্টিকে, প্রযুক্তিতে সুবিধা বেশি। সেখানে তদারকি অনেক বেশি কার্যকর। তাই বড় মামলা বা অপরাধ হলেই সেটা ডিবি বা সিআইডিতে চলে যায়।

কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠান থাকার পরেও র‍্যাব তৈরি করতে হলো। স্থানীয় পুলিশকে দিয়েই যদি সবকাজ চলে, তাহলে কেন আলাদা একটা বাহিনী করতে হলো?

তখন কেন র‍্যাবের দরকার হয়েছিল, আমার নিজের জানা একটা ঘটনা থেকে উদাহরণ দেই।

ফরিদপুরে বাবু কসাই নামের একজন কুখ্যাত সন্ত্রাসী ছিলেন। তিনি প্রকাশ্য রাস্তায় তার একজন প্রতিপক্ষকে জবাই করে খুন করেন। তখন চারদিকে অসংখ্য মানুষ দাড়িয়ে সেই খুনের দৃশ্য দেখেন। পুলিশ বাদী হয়ে মামলা হয়, পুলিশ তাকে গ্রেপ্তারও করে। কিন্তু সেই মামলায় একজন সাক্ষীও পাওয়া যায়নি। আদালতে সাক্ষীর অভাবে বেকসুর নির্দোষ প্রমাণিত হয় সেই খুনী।

সারাদেশেই এরকম অসংখ্য খুনী ছিল। ঢাকায় তখন প্রতিটি গলিতে একজন করে মাস্তান থাকতেন, তার নিয়ন্ত্রণে ছিল ওই এলাকা। কোনভাবেই এই "ভাইয়া"দের বিচার হতো না, কারণ গ্রেপ্তার করা হলে সাক্ষী পাওয়া যেতো না, তাই শেষে পুলিশও এদের পেছনে আর দৌড়াতো না।

এরকমই এক পরিস্থিতিতে তৎকালীন বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকার নতুন একটি বাহিনী গঠন করার দরকার বোধ করে। তখন পুলিশের দিক থেকেও তেমন একটা আপত্তি ছিল না। পুলিশ সদস্যদের নিয়েই প্রথমে তৈরি করা হয় র‍্যাপিট এ্যাকশন টিম বা র‍্যাট। কিন্তু সেটার কাজেকর্মে খুব একটা সাফল্য পাওয়া যায়নি। পরে র‍্যাটের নাম বদলে আর বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে পুর্নগঠিত ফর্মে তৈরি হলো র‍্যাব।

তখনকার স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের ক্ষেত্রে কথা প্রচলিত আছে, যে র‍্যাব কিছু চাইলেই তিনি একবাক্যে দিয়ে দিতেন। উন্নত গাড়ি, বেশি ভাতা ইত্যাদি সহজেই তাদের দেয়া হলো।

র‍্যাবের ক্রসফায়ার কিন্তু সেই প্রতিষ্ঠার পর থেকেই শুরু। তখন বেশ প্রকাশ্যে ঢাকঢোল পিটিয়ে ক্রসফায়ার হতো। সন্ত্রাসীকে আটকের পর, তার এলাকায় নিয়ে যাওয়া হতো। স্থানীয়দের কাছে জানতে চাওয়া হতো, সে কেমন মানুষ। কোনজনের মতামত নিয়ে ক্রসফায়ার "দেয়া" হতো। যুক্তরাষ্ট্রের্ পররাষ্ট্রদপ্তার বা মানবাধিকারের যে প্রশ্নই উঠুক, এসব ক্রসফায়ারের পর কিন্তু অনেক এলাকাতে মিষ্টিও বিতরণ হয়েছে।

মানবাধিকার কর্মীরা বরাবরই এসবের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। সংবাদমাধ্যমও মিষ্টি বিতরণের কথা যেমন লিখেছে, তেমনি সমালোচনাও করেছে। আস্তে আস্তে বিষয়টি আড়ালে চলে গেল। এরপরও ক্রসফায়ার হতো, কিন্তু গোপনে। ঘটনার পর প্রেসবিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়ে দেয়া হতো। সমালোচনা যখন আরো বাড়লো, তখন ক্রসফায়ার কমে গেল। আর গুমের অভিযোগ উঠতে শুরু করল।

ক্রসফায়ার বা এনকাউন্টার যে শুধু র‍্যাবই করেছে, এমন নয়। এটা থানা পুলিশও করে, ডিবিও অনেক করেছে।

এখন অনেকেই র‍্যাবের বিলুপ্তির দাবি তুলছেন। কিন্তু মাথা ব্যথা হলে কি মাথা কেটে ফেলাই সমাধান?

র‍্যাবের দশবছর পুর্তি হলো গতমাসেই। দশবছরে হয়তো অনেক অভিযোগই এই সংস্থাটির বিরুদ্ধে উঠেছে, কিন্তু অভিযোগ তো ভাই অন্য সব অঙ্গ সংগঠনের বিরুদ্ধেও ওঠে। যেমন থানা পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ তো অনেক পুরনো, ডিবির পানির ট্যাংকি থেকে সোর্সের লাশ বের করা হলো। তাই বলে ডিবি তো বিলুপ্ত করা হয়নি। এবং সেই ঘটনার পর এতদিনেও কিন্তু নতুন করে আর কোন লাশ আবিষ্কার হয়নি। শুধু একটা দুই একটা ঘটনা থেকে তো একটা সংস্থাকে বিচার করা যাবে না। র‍্যাবকে বিচার করতে হলে, সেটা করতে হবে, তার গত দশবছরের কর্মকান্ড দিয়ে। তারপরেই বলা যাবে এটি কতটা ভালো আর খারাপ।

এখন নারায়ণগঞ্জের ঘটনার পর র‍্যাবের যে ভাবমুর্তি সংকট তৈরি হয়েছে, তাতে এই সংস্থাটির হয়তো কিছুটা সংস্কার দাবি করা যেতে পারে। সেখানে নজরদারি বা তদারকি আরো জোরদার করা যেতে পারে। কিন্তু বন্ধ করে দেয়াটা আসলেই কোন সমাধান নয়।

নারায়নগঞ্জের যে কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তারা কিন্তু র‍্যাবের কয়েক হাজারের মধ্যে গুটিকয়েক। তাদের দিয়ে তো আর একটা সংস্থাকে পুরোপুরি বিচার করা যাবে না।

সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের কাজ করা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। তো, সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা তো র‍্যাব ছাড়াও আরো অনেক প্রতিষ্ঠানে কাজ করে। সিটি কর্পোরেশন, আনসার ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের বড় বড় পদেও কিন্তু সেনা কর্মকর্তারা। বাংলাদেশের মতো গরীব দেশে সেনানিবাসে বসে না থেকে বরং মাঠেঘাটে কাজ করাটা ভালো। আফটার অল, তারাও তো এদেশেরই ট্রেনিং পাওয়া, ট্যাক্সের টাকার কর্মকর্তা।

কে কোন দপ্তর থেকে এলো, সেটা বিষয় না, আসলে গলদটা, আমার মতে, অন্য জায়গায়। র‍্যাব, সিআইডি, ডিবি বা থানা পুলিশ, তাদের কাজ নির্ভর করবে আপনি কিভাবে তাকে পরিচালনা করছেন। কতটা প্রভাবমুক্ত হয়ে তারা তাদের কাজটা করতে পারছে।

স্থানীয় থানা নানাভাবে স্থানীয়ভাবে প্রভাবের শিকার হয়। তাই তাদের কাছ থেকে ভালো কাজ আদায় করা যায় না। ডিবি বা সিআইডির উপর প্রভাব তুলনামুলক কম বলে তাদের কাজ ভালো।

র‍্যাবের ক্ষেত্রে, রাজনৈতিকভাবে সেখানে প্রভাব যতটা কম পড়বে, তাদের কাছ থেকে তত ভালো কাজ আদায় করা যাবে। আজ র‍্যাবের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠছে, তার বড় কারণ সংস্থাটিকে নানাভাবে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহারের চেষ্টা করা হয়েছে। এটা জোট সরকারের আমলেও হয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলেও হয়েছে, এখনো হচ্ছে। কিন্তু সংস্থাটিকে যদি তাদের যে কাজ, সেগুলোই ঠিকভাবে করতে দেয়া হতো, তাহলে তাদের নিয়ে এতটা প্রশ্ন তুলতে হতো না।

নারায়ণগঞ্জের ঘটনা, আমার মনে এই বাহিনীটির একটি বিছিন্ন ঘটনা, যেমনটা হয়েছিল চিটাগাং এর একটি মাজারে টাকা লুটের ঘটনা। কিন্তু তা থেকে মাথা কাটার মতো সিদ্ধান্ত না নিয়ে, কোথায় ঘাটতি রয়েছে, কোথায় দুর্বলতা রয়েছে, সেটা খুজে বের করে সমাধান করা দরকার, যাতে এরকম ঘটনা আর না ঘটে আর যে উদ্দেশ্যে বাহিনীটি তৈরি হয়েছে, সেই উদ্দেশ্য পুরোপুরি কার্যকর হয়।
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×