somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার সেন্টমার্টিন ভ্রমন কাহিনী (শেষ পর্ব) +ছবি এবং ম্যাপ

০৫ ই নভেম্বর, ২০১২ বিকাল ৪:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


একটা কথা প্রচলিত আছে কূয়াকাটা সমন্ধে। তা হল কূয়াকাটা থেকে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত দুটোই দেখা যায়। কূয়াকাটায় তা দেখা যায় বইকি যেহেতু এটা পূর্ব্ব-পশ্চিম দিকে বিস্তৃত , কক্সবাজারের মত উত্তর-দক্ষিন দিকে নয়। কক্সবাজারের বীচে এ কারনে সূর্যাস্ত দেখা গেলেও সূর্য উদয় হয় পাহাড়ের প্রান্ত থেকে।
কিন্তু সেন্ট মার্টিন যেহেতু একটা দ্বীপ (উত্তর-দক্ষিনেই বিস্তৃত) এখানেও সমুদ্রে সূর্যের উদয় অস্ত সবই দেখা সম্ভব। যদিও দুই প্রান্ত থেকে।

প্রথম পর্ব
দ্বিতীয় পর্ব


ডে টু শুরু করার আগে সেন্টমার্টিন নিয়ে কিছু জ্ঞানের কথা জানিয়ে রাখি-


সেন্টমার্টিনের কিছু তথ্যঃ (বাংলাপেডিয়া থেকে)

দ্বীপটি ৭.৩ কি.মি. দীর্ঘ এবং কিছুটা উত্তর-দক্ষিন দিকে বিস্তৃত। দ্বীপের আয়তন প্রায় ৮ বর্গ কিলোমিটার (বাংলা উইকি)। ভৌগলিকভাবে এটি তিন অংশে বিভক্ত। উত্তরাঞ্চলীয় অংশকে বলা হয় নারিকেল জিঞ্জিরা বা উত্তর পাড়া যা ২১৩৪ মিটার দীর্ঘ ও ১৪০২ মিটার প্রশস্ত। দক্ষিন অংশকে দক্ষিন পাড়া যা ১৯২৯ মিটার দীর্ঘ। একটি সংকীর্ণ অঞ্চল এই দুই অংশকে যুক্ত করেছে যা মধ্য পাড়া নামে পরিচিত। মূল দ্বীপ ছাড়াও কয়েকটি ১০০ থেকে ৫০০ বর্গমিটার আয়তন বিশিষ্ট ক্ষুদ্র দ্বীপ রয়েছে যা ছেড়াদিয়া নামে অভিহিত করা হয় যার অর্থ বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। এটি জোয়ারের সময় বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। মাছ সংগ্রহস্থল, বাজার এবং শিক্ষাপ্রতিষ্টান শুধু উত্তর পাড়াতেই সীমাবদ্ধ ।




ডে টু ভোরঃ


ভোরে উঠে ফজরের নামাজের পর দুই পা বাড়িয়েই চলে এলাম সাগর পাড়ে । সূর্যোদয়ের তখনও মিনিট পনের বাকী। আগেই বলেছি আমাদের ব্লু সী ইস্টার্ণ রিসোর্টের একদম পাশেই পূর্ব বিচটা। যেন বাড়ির ঊঠানেই সাগরের ঢেঊ এসে ভিড়ছে। জানুয়ারীর যেই দুইদিন আমরা এখানে ছিলাম সেই দুইদিনে ঠান্ডা ছিল অনেকটাই সহনীয়। তবু দ্বীপের বাচ্চারা দেখি আগুন পোহাচ্ছে।


আগুন পোহাচ্ছে ওদিকে খালি গা :|

সকালের আলো তখন একটু একটু করে ফুটতে শুরু করেছে। আমার বাচ্চাকে এই ফাকে ঘুম থেকে তুলে নিয়ে আসল ওর আম্মা। প্রথমে একচোট কোলের মধ্যে ঘুমিয়ে নিলেও এরপর বল খেলায় মেতে ঊঠল। সাগরপাড়ের হাওয়ায় একেকবার ফোলান বলটা দূরে উড়িয়ে নিয়ে যায় আর ও খিলখিল করতে করতে ছুটতে থাকে। হাওয়ার সাথে প্রায়ই অবশ্য পেরে ঊঠছিল না। তখন আমাকেই নিয়ে আসতে হয়। দ্বীপের বাচ্চারাও তখন মেতে উঠল আমাদের এই খেলায়। কিন্তু একটা জিনিষেই আমার পুচকেটার অনেক ভয়। কিছুতেই পানির কাছে যাবে না !



সাগরের এদিকের বিচটা অবশ্য একটু সাদামাটা। প্রবালও নেই। তবে মনে হচ্ছিল আমাদের এক নিজস্ব ভূবন।

সকাল আটটার দিকে আবার গেলাম জাহাজ ঘাটে। ডিম-পরটা আর চা দিয়ে নাস্তা সেরে আমাদের দলটা দুইভাগে ভাগ হয়ে গেল। একদল গেল ছেড়াদ্বীপে। আর অন্য দল যেই দলে আমি, রয়ে গেলাম “না ছেড়া দ্বীপে” অর্থাৎ সেন্টমার্টিনেই।

ছেড়া দ্বীপঃ
ছেড়া দ্বীপে আমার না যাবার কারন দুটো। এক. আমি আগেও গিয়েছি যখন ব্যাচেলর ছিলাম । আর দ্বিতীয় কারন- ছোট বাচ্চাকে সেখানে না নিয়ে যাওয়াই ভাল। একে তো স্পীডবোট তীর থেকে অনেকটা দূরে থামে,পানির মধ্যে দিয়ে বেশ খানিকটা পথ প্রবালের উপর দিয়ে হেটে যেতে হয়। এটা একটু রিস্কি হয়ে যায়। তার উপর আমার বাচ্চা সমুদ্রের পানির কাছেই যাচ্ছিল না। তবে ছেড়া দ্বীপে যাবার এজাতীয় কোন অসুবিধা না থাকলে মিস করবেন না। এত প্রবাল, এত স্বচ্ছ পানি,এত নির্জনতা সেন্ট মার্টিনেও পাবেন না।

অগত্যা সেন্ট মার্টিনে আরেক চক্করঃ

ছেড়া দ্বীপে যখন যাওয়াই হল না তখন হাতের এই ৫ ঘন্টা সময়টাকে (জাহাজ ফিরে যাবে ৩টায়) দ্বীপটার অন্যান্য অংশ দেখার ইচ্ছায় বেরিয়ে পড়লাম। প্রথমে গেলাম ব্লু মেরিন কেমন সেটা দেখতে। বেশ পছন্দ হল। ব্লু সী ইস্টার্ণ রিসোর্টে না থাকলে এখানেই থাকার প্লান ছিল। এদিকে ক্যামেরার চার্জ ফুরিয়ে গেছে। আজকাল ভিডিও ক্লিপ বেশি নেই বলে এই দূরবস্থা। যার ফলে এরপর আর কোন ছবি তুলতে পারিনি।

ব্লু মেরিনের সামনের বীচ দিয়ে মেয়েকে কাধে নিয়ে বালুর স্তুপ পাড়ি দিয়ে আসলাম প্রাসাদ প্রারাডাইজ এর সামনে। কিন্তু এটার ভেতরে আর ঢোকা হয়নি। বরং এর সামনে উওরের বীচে আরেক দফা পানিতে নামলাম। আধা ঘন্টা পানিতে আর এক ঘন্টা বিচের চেয়ারে শুয়ে কাটালাম। আহ ! সামনে কি দিগন্ত বিস্তৃত সমুদ্র...নীল আকাশ...ঝকঝকে রোদ...হুমায়ূন আহমেদ কি আর সাধে এই জায়গায় ডেরা বেধেছিলেন। কিছুটা তার কারনেই অবশ্য সেন্টমার্টিন বেশী পরিচিতি লাভ করেছে আমার মনে হয়। ২০০০ এর আগে কয়টা মানুষ এখানে এসেছে !? আসার ব্যবস্থাটাও ভাল ছিল না সেটাও একটা ফ্যাক্টর। এখনও তো টেকনাফ থেকে জাহাজ ঘাট আসার পথটা খুব আরামদায়ক জার্ণি নয়।
থাক ! আরো কিছুদিন কষ্টকরই থাকুক। সহজ জার্ণি হলে পঙ্গপালের মত সবাই ছুটে এসে আমাদের এই অপার্থিব জায়গাটাও বারটা বাজিয়ে দেবে। যেমন ২০০০ এ একবার সুন্দরবনে গিয়ে সন্ধ্যায় যখন হিরন পয়েন্টে লঞ্চে বসে আছি। পাশেই এসে ভিড়ল কোন একটা জেলার বাস মালিক সমিতির পিকনিক পার্টির লঞ্চ। এসেই ফুল ভলিউমে মাইকে ছেড়ে দিল হিন্দী গান। এই গান শুনে কিছুক্ষন আগের ভয়ংকর নিস্তব্ধতা তো গেল গেলই, বাঘও পালিয়ে গেল কিনা বুঝতে পারলাম না।
বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের একটা মেসেজ আমার খুব ভাল লাগে-
Come to Bangladesh Before Tourists come)

এসব ভাবার বেশী সময় তখন অবশ্য নেই । জাহাজ ছাড়ার সময় ঘনিয়ে আসছে। হাতে আছে দুই-তিন ঘন্টা। আরো দুই-তিনটা জায়গা দেখার ইচ্ছা আছে। একটা হল নারিকেল বাগান। যেটা ছবিতে প্রায়ই দেখি। নারিকেল গাছ অনেক দেখলাম, নারিকেল বাগান ও একটা দেখলাম কিন্তু exactly নিচের ছবির এই জায়গাটা দেখলাম না।


কেউ কি বলতে পারেন উপরের ছবিটা(নেট থেকে নেয়া) সেন্টমার্টিন নাকি কূয়াকাটা?

আরেকটা জায়গা দেখে আসার ইচ্ছা ছিল। সেটা হল নীল দিগন্ত রিসোর্ট। যেখানে আমার এক বন্ধু কদিন আগেও কাটিয়ে এসেছে। নেট ঘেটে এর কিছু ছবিও জোগাড় করেছিলাম। কিন্তু মুশকিল হল ঐখানে পৌছাতে ভ্যানে করে প্রায় আধা ঘন্টা লেগে যাবে আর তার পর ভ্যান থেকে নেমে বালুর উপর আরো দশ মিনিট হেটে তবেই পৌছাতে হবে। কাজেই এবারে ঐ পথ আর মাড়ালাম না।

আমার ব্লু- সী ইস্টার্ন রিসোর্টে পৌছাতে পৌছাতে বেজে গেল প্রায় একটা। তাড়াতাড়ি করে সব গুছিয়ে কাচ্চা-বাচ্চা নিয়ে জাহাজ ঘাটে আবার দে ছুট। মনে হচ্ছিল আবার সেই জঞ্জালের শহর ঢাকার দিকে ছুটে যাচ্ছি X(। আজ রাতেই তো চড়ে বসতে হবে নাইট কোচে। বিকালের আলোয় নাফ নদী আরেকবার দেখার ইচ্ছা থাকলেও প্রচন্ড ক্লান্তিতে ডেকে দাড়ান খুব একটা হয়ে ওঠেনি। তবে মনে মনে একটা প্লান করে ফেললাম। এরপর কক্সবাজার না এসে সরাসরি বরং এখানে চলে আসব। দুইদিন কি তারও বেশি কাটিয়ে যাব এই নির্জন দ্বীপে। একেবারে ফিরেও না যেতে পারি, বলা যায় না।




বিদায় নারিকেল দ্বীপ... :((

প্রথম পর্ব
দ্বিতীয় পর্ব
প্রথম ম্যাপটা বড় করে দেখার জন্য ক্লিক করুন
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই নভেম্বর, ২০১২ রাত ৯:০১
১৩টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×