সন্ধ্যা থেকে দাদীর কাছেই আছে আভা। আজকে ওর মনটা একটু খারাপ। ওর আপু আজকে তার নানুর বাসায় গেছে। তবে অনেক কাজ করেছে ও।দাদীর স্টুডেন্ট এর খাতায় লাল কালির কলমের যথাযত ব্যবহার, কার্টুন নেটয়ার্ক এ ইদুর-বিড়ালের মারামারি দেখা, ফোন এ আপু আর মামির সাথে কথা বলা, সবই করেছে। মাঝে খাওয়ানোর সময় মামকে নিয়ে ম্যারাথন দৌড়টাও বাদ দেয় নি। এখন সে অনেক ক্লান্ত।
আভাঃ দাদা! ঘুমাবো।
দাদাঃ যাও, মামকে বলো “বিছানা ঠিক করে দিতে”।
আভাঃ দাদা তুমি কি আজকে একা ঘুমাবে? আপুতো আজকে নেই!
দাদাঃ একাই তো ঘুমাতে হবে।
আভাঃ তোমার ভয় করবে না?
দাদাঃ ভয় তো করবেই…
আভাঃ দাড়াও আমি আসছি, আজকে আমি তোমার সাথে ঘুমাব। আমি ঘুমালে তো তোমার ভয় করবে না, তাইনা দাদা?
দাদাঃ আমার তো করবে না, কিন্তুর আম্মুর ভয় লাগবে না?
আভাঃ না, মামের ভয় করবে কেন?? মা’র সাথে তো বাবা থাকবে!!
তারপর এক দৌড়ে মামের ওয়াড্রোবটা খুলে নিজের কাঁথা-বালিশ বের করতে লাগলো।
মাঃ কি করো?
আভাঃ মাম, আজকে আমি দাদার সাথে ঘুমাবো, আজকে তো আপু নেই,
দাদার তো একা ঘুমাতে ভয় লাগবে, আমি দাদার সাথে ঘুমালে দাদার ভয় লাগবে না।
রিচি এসে শ্বাশুরির কাছে শুনে যায় পুরো ঘটনা। তারপর নিজেই মেয়ের বিছানা ঠিক করে দিয়ে যায়। গত কিছুদিন কাজের চাপটা আমার একটু বেশিই যাচ্ছে। বাসায় ফিরতে বেশ রাত হয়ে যায়। আজকেও তার ব্যতিক্রম হয় নি। ব্যতিক্রম হয়নি রিচির না খেয়ে অপেক্ষা করাটা। সারে ১০টায় ফোন করেছিলাম, তখন বলেছিল আজকে খেয়ে নিবে, পারেনি। আরে!! আমি কি লিখতে কি লিখছি, আজকে আমার মেয়ের কথাই বলি…
টিভি চ্যানেলগুলোর উপর খানিকখন ঘুরাঘুরি করে যখন রুমে গেলাম, দেখি আভা নেই!! রিচি আমাকে শুনালো আমাদের সাড়ে ৩ বছরের মেয়ে কিভাবে তার দাদিকে সাহস দেয়। ভাবলাম একটু গিয়ে দেখে আসি আসলেই ঘুমিয়েছে কিনা?
মা’র রুমের টেবিল ল্যাম্প টা জ্বলছে। মা স্টুডেন্টদের খাতা দেখছেন। আর আমার মেয়ে!!!
সে আমাকে দেখে কাঁথাটা একবারে মুখের উপর, যদি বাবা তাকে নিয়ে যায়, এই ভয়ে।
মা’কে বললাম, ঘুমাচ্ছো না কেনো, তোমার খাতাগুলো আমি দেখে দিব (জানি দেখা হবে না, মা’ও জানেন)। টেবিল ল্যাম্পটা অফ করে ডিম লাইটা জ্বালিয়ে বের হয়ে এলাম।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জানুয়ারি, ২০০৯ রাত ১:৪৭